প্রতিবেদন: কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন যে আর্থিক পরিকল্পনা বা ন্যাশনাল মনিটাইজেশন পাইপলাইনের (এনএমপি) কথা ঘোষণা করেছেন সেটা চরম জনবিরোধী বলে জানিয়ে দিল তৃণমূল কংগ্রেস। অবিলম্বে এই নীতি থেকে কেন্দ্রকে সরে আসারও আর্জি জানিয়েছে নরেন্দ্র মোদি সরকারকে। তৃণমূলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নির্মলার ঘোষণা করা ন্যাশনাল মনিটাইজেশন পাইপলাইন বা এনএমপির মাধ্যমে সরকার আসলে সমস্ত সরকারি সম্পত্তি বেসরকারিকরণ করতে চলেছে। সমস্ত সরকারি সম্পত্তি কর্পোরেট সংস্থা ও পুঁজিপতিদের হাতে তুলে দিতে চলেছে।
আরও পড়ুন- একাত্তরের ঐতিহাসিক টেস্ট সিরিজ জয়ের স্মৃতিচারণ করলেন রবি শাস্ত্রী
তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার চিফ হুইপ সুখেন্দুশেখর রায় বলেছেন, স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে কোনও কেন্দ্রীয় সরকার কখনও এমন অসহায়ভাবে পুঁজিপতি বা কর্পোরেট সংস্থার কাছে আত্মসমর্পণ করেনি। এই মুহূর্তে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকার কোটিপতি, পুঁজিপতিদের দ্বারা এবং তাদের জন্যই পরিচালিত হচ্ছে। মোদি সরকার পুরোপুরি বুর্জোয়া পুঁজিপতিদের কাছে আত্মসমর্পণ করে বসে আছে। এই সরকার যে দেউলিয়া ইতিমধ্যেই তা প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। না হলে কখনোই এভাবে সরকারি সম্পত্তি বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া হত না। এই সরকারের আর্থিক দৈন্যদশা এতটাই প্রকট যে সামান্য মোবাইল, বিদ্যুতের খুঁটি থেকে শুরু করে মাটির তলার পাইপলাইনও বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দিচ্ছে। সরকার মুখে যাই বলুক না কেন, আসলে এটা বেসরকারিকরণের প্রথম ধাপ। মোদি সরকার রেল থেকে শুরু করে বিমানবন্দর, নৌবন্দর এমনকী, জাতীয় সড়কগুলিও বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দিচ্ছে। আমরা চাই সরকার অবিলম্বে এই জনবিরোধী, দেশ বিরোধী, বিধ্বংসী নীতি থেকে সরে আসুক। গোটা সরকারের বেসরকারিকরণ হয়ে গিয়েছে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করার আগে মোদি সরকার কেন সংসদের অনুমতি নিল না? কেন সাধারণ মানুষের মতামত জানার চেষ্টা করল না?
আরও পড়ুন- শিল্পায়নের “অবাস্তব” স্বপ্ন, সংযুক্ত মোর্চা গঠন ভুল ছিল! লিখিত স্বীকারোক্তি দিল সিপিএম
তৃণমূল কংগ্রেসের মতো এই পদক্ষেপের সমালোচনা করেছে অন্য বিরোধী দলগুলিও। কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা বলেন, একসময় আমাদের দেশে সম্পদ তৈরি হত। ক্ষমতায় থাকাকালীন কংগ্রেস যে সমস্ত সম্পদ তৈরি করেছিল সেই সম্পত্তি বিক্রি করে দিচ্ছে মোদি সরকার। নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় থাকলে সব কিছুই সম্ভব। এভাবেই একদিন গোটা দেশটাই তিনি হয়তো বিক্রি করে দেবেন। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিও মোদি সরকারের এই নতুন আর্থিক নীতির কড়া সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, আসলে এই সরকার সরকারি সম্পত্তি থেকে শুরু করে জনসাধারণের সম্পদ সবকিছুই লুট করার পরিকল্পনা নিয়েছে। এভাবে যে অর্থ সরকারের ঘরে আসবে তা দিয়ে ২০২৪ এ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি তার প্রচারে খরচ করবে।
আরও পড়ুন- বুধবার নবান্নে ইস্টবেঙ্গল-শ্রী সিমেন্টের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন মুখ্যমন্ত্রী
উল্লেখ্য, সোমবার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন এনএমপি ঘোষণা করে জানিয়েছিলেন, আগামী চার বছরে বিভিন্ন সরকারি সম্পত্তি বেসরকারি হাতে তুলে দিয়ে ৬ লক্ষ কোটি টাকা আয় করবে সরকার। সীতারামন সোমবার দিল্লিতে এই প্রকল্পের সূচনা করেছেন।
এই প্রকল্পের সূচনা করতে গিয়ে নীতি আয়োগের চেয়ারম্যান অমিতাভ কান্ত ট্যুইট করে জানিয়েছেন, দেশের জন্য এনএমপি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পকে অত্যাধুনিক করে তুলতে এবং সেগুলি রক্ষণাবেক্ষণ করতে বেসরকারি বিনিয়োগ খুবই প্রয়োজন। সেই লক্ষ্য রেখেই সরকার ন্যাশনাল মনিটাইজেশন পাইপলাইন প্রকল্প চালু করছে।
আরও পড়ুন- মাটির নিচে ১৩ লক্ষ বছরের পুরনো অস্ত্র
অন্যদিকে অর্থমন্ত্রীর দাবি, কেন্দ্রীয় সরকার কোনও জমি বেসরকারি সংস্থাকে বিক্রি করে দিচ্ছে না। যেসব পরিকাঠামো তৈরি রয়েছে সেগুলোর উপযুক্ত ব্যবহারের জন্য বেসরকারি সংস্থাকে লিজ দেওয়া হচ্ছে। সরকার টাকা আয়ের জন্য মরিয়া নয়। যে সমস্ত সরকারি সম্পত্তি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে বা পুরোপুরি ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না সেগুলি বেসরকারি সংস্থাকে চুক্তির ভিত্তিতে দিচ্ছে। এর ফলে যেমন সরকারের বিপুল পরিমাণ টাকা আয় হবে তেমনই এই সমস্ত সম্পদগুলিকে বেসরকারি সংস্থা কাজে লাগানোর ফলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে। কর্মসংস্থান হবে। অন্যদিকে এই এনএমপি প্রকল্পের মাধ্যমে সরকারের ঘরে যে টাকা আসবে তা দিয়ে নতুন পরিকাঠামো গড়ে তোলা হবে।
আরও পড়ুন- আফগানিস্তান ফেরতদের নিয়ে মোদি সরকারের গাফিলতি
সরকারি সম্পত্তি বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে কেন্দ্র। সরকারের পক্ষ থেকে যে পরিসংখ্যান দেওয়া হয়েছে তা থেকে দেখা যাচ্ছে, আগামী চার বছরে কেন্দ্রীয় সরকার ২৬৭০০ কিলোমিটার জাতীয় সড়ক থেকে ১.৬ লক্ষ কোটি টাকা আয় করবে। একইভাবে ৪০০ রেলস্টেশন এবং ১৫০ টি ট্রেন থেকে সরকারের ঘরে আসবে ১.৫ লক্ষ কোটি টাকা। ৪২৩০০ কিমি পাওয়ার ট্রান্সমিশন লাইন বেসরকারি সংস্থার হাতে দিয়ে সরকার আয় করবে ০.৬৭ লক্ষ কোটি টাকা। ৮ হাজার কিলোমিটার জাতীয় গ্যাস পাইপলাইন থেকে সরকারের আয় হবে ০.২৪ লক্ষ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন- জাতিভিত্তিক শুমারির দাবিতে মোদীর ওপর চাপ নীতীশের
একইভাবে দেশের জলবিদ্যুৎ ও তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি থেকে সরকার ০.৩২ লক্ষ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে। ৪০০০ কিলোমিটার তেল পাইপলাইন বেসরকারি সংস্থার হাতে দিয়ে সরকার চার বছরে আয় করবে ০.২২ লক্ষ কোটি টাকা। একইভাবে টেলিকম ক্ষেত্র থেকে সরকারে আয় করবে ০.৩৯ লক্ষ কোটি টাকা। ১৬০টি কয়লাখনি বেসরকারিকর সংস্থার হাতে দিয়ে সরকার ০.৩২ লক্ষ কোটি টাকা এবং ২১ টি বিমানবন্দর ও ৩১ টি নৌবন্দর থেকে ০.৩৪ লক্ষ কোটি টাকা আয়ের পরিকল্পনা নিয়েছে। একই সঙ্গে দুটি স্পোর্টস স্টেডিয়াম বেসরকারি সংস্থার হাতে দিয়ে ০.১১ লক্ষ কোটি টাকা আয় করার লক্ষ্য মোদি সরকারের।