সোমনাথ বিশ্বাস, আগরতলা: হঠাৎ ভোটের ১০ মাস আগে বদলে গেল রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী! কিন্তু কেন? আগে যিনি ছিলেন তিনি তো অসুস্থ নন, তাঁর তো বয়স হয়নি, তাহলে কেন সরাল? জবাব নেই। তবে এবার বিজেপিকে ত্রিপুরাবাসীর (Tripura) কাছে এই প্রশ্নের স্পষ্ট জবাব দিতেই হবে। বিজেপি জেনে রাখুক, মুখ বদলালে কঙ্কাল বদলে যায় না। মুখ্যমন্ত্রী বদল আসলে এই সরকারের ব্যর্থতা স্বীকার করে নেওয়ার পদক্ষেপ। মুখ্যমন্ত্রী বদল হলে গোটা সরকার বদল নয় কেন? মুখ্যমন্ত্রীর ব্যর্থতা, অযোগ্যতা ওরা নিজেরাই স্বীকার করে নিয়েছে, তাহলে সেই সরকার এখনও থাকে কী করে? আসলে বিজেপি বুঝে গিয়েছে ত্রিপুরায় তাদের শেষের শুরু। বিজেপি বুঝতে পারছে সিপিএম বা কংগ্রেস নয়, এটা তৃণমূল কংগ্রেস। যাদের চাপে শেষপর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী বদল করতে বাধ্য হয়েছে বিজেপি। তাই নো ভোট টু বিজেপি! রবিবার এভাবেই চাঁচাছোলা ভাষায় আগরতলার লেইক চৌমহনির ভরা বাজারে ত্রিপুরার বিধানসভা উপনির্বাচনের প্রচার শুরু করলেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh)। বিজেপিকে বিঁধে এদিন তিনি (Tripura- Kunal Ghosh) বললেন:
আরও পড়ুন: একশো দিনের বকেয়া মজুরির দাবিতে মিছিল
১) সামান্য দু’মাসে তৃণমূল যা ফলাফল করেছে, তাতে ভীত বিজেপি। শুধু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবিতেই ২০ শতাংশ ভোট এসেছে। কোথাও কোথাও আরও অনেক বেশি। এরপর বিধানসভা ভোটের আগে নেত্রী নিজে যেদিন সশরীরে আস্তাবল ময়দান থেকে মিছিল করে শহরে ঢুকবেন, সেদিন বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেস কাঁপবে।
২) গত আগরতলা পুরভোটে বুথে সিসি ক্যামেরা ছিল না। ব্যাপক সন্ত্রাস চালিয়েছে বিজেপি। তা সত্ত্বেও ২০-২৪ শতাংশ ভোট। সংগঠন তিল তিল করে এগিয়েছে। ত্রিপুরা প্রদেশ কমিটি গঠিত হয়েছে। কিছু না কিছু কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে তৃণমূলের বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে রাজ্য কমিটি।
৩) কেউ কেউ বলছেন বাংলার নেতারা আসছেন না কেন? আরে বাবা, ২০২৩ সালে যারা ক্ষমতায় আসছে, তারা আসবে না কেন?
৪) পুরভোটে যদি সিসি ক্যামেরা থাকত, তাহলে আগরতলার অনেক আসন তৃণমূল কংগ্রেসের দখলে যেত।
৫) নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের তালিকা থেকে চাল, ডাল, আলু, ভোজ্য তেল বাদ! জনবিরোধী বিজেপি সরকারকে মানুষ দৈনন্দিন অভিজ্ঞতা থেকেই চিনে নিচ্ছেন।
৬) বাংলার আসানসোল থেকে শুরু করে বিভিন্ন নির্বাচনে তৃণমূল ভোট পাচ্ছে কারণ, বাংলার মানুষ জানেন কীভাবে জনগণের স্বার্থে অসংখ্য প্রকল্প হয়েছে। মানুষ তার সুবিধা পাচ্ছেন। বাংলার মানুষ পেলে ত্রিপুরার মানুষ পাবেন না কেন? তৃণমূল কংগ্রেস ত্রিপুরার মানুষের কাছে হাতজোড় করে বলছে, একবার পরীক্ষা করে দেখুন, বাংলায় যে সামাজিক প্রকল্পগুলি রয়েছে, সেগুলি সব ত্রিপুরাও পাবে। বাংলায় কিছুদিন আগে পর্যন্ত যাঁরা বিজেপিকে ভোট দিয়েছিলেন, এখন তাঁরা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে তৃণমূল কংগ্রেসকে ভোট দিচ্ছেন। বিজেপির শীর্ষনেতারাও ডেইলি পাসেঞ্জারি করে তৃণমূলকে হারাতে পারেননি।
৭) তৃণমুলেরও সামান্য কিছু ভুল আছে। তবে ৯৮ শতাংশই ভাল। ২ শতাংশ ভুল চিহ্নিত করে শুধরে নেওয়া হচ্ছে।
৮) বিজেপি একদিকে ভারতমাতা কি জয় বলে আস্ফালন করে, আর আর অন্যদিকে মায়ের সব অলঙ্কার একে একে বেচে দিচ্ছে। দেশবেচা নীতি নিয়েছে ওরা। একটা আপাদমস্তক জনবিরোধী দল। যে দল নিজের মুখ্যমন্ত্রীর উপর ভরসা রাখে না, তাদের উপর সাধারণ মানুষ কীভাবে ভরসা রাখবে?
৯) সরকারি কর্মচারীরা দেখুন, এই সরকার আপনাদের বন্ধু নয়। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী নৃপেন চক্রবর্তী, মানিক সরকার এঁদের ব্যক্তিগতভাবে সম্মান করি। কিন্তু বামেরা ত্রিপুরায় ক্ষমতায় থাকার রাজনীতি করতে গিয়ে ত্রিপুরার উন্নয়ন করেনি।
১০) ত্রিপুরার যা প্রাকৃতিক সম্পদ আছে তা দিয়ে শিল্প করা যায়। কিন্তু তা করা হয়নি। বাংলা এবং ত্রিপুরা একে অপরের পরিপূরক। এক ভাষা, এক মত, এক আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি, তাহলে বাংলা যদি এগোতে পারে, ত্রিপুরা নয় কেন?
১১) কংগ্রেসকে ভোট দিয়ে নিজেদের ভোট নষ্ট করবেন না। এখানে অনেক কংগ্রেস নেতা রয়েছেন, যাঁরা সপ্তাহে সপ্তাহে দল বদল করেন। দিল্লিতে নিজেদের মধ্যে খেয়োখেয়ি চলছে।
১২) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার মতো ত্রিপুরাকেও ভালবাসেন।
এদিনের জনসভায় তৃণমূল রাজ্য সভাপতি সুবল ভৌমিক প্রশ্ন তোলেন বিপ্লব দেব ও বিজেপির দুর্নীতি নিয়ে। বলেন, রাজ্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যর্থ এই সরকার। কেউ জানে না, কেন সাড়ে চার বছর পর হঠাৎ মুখ্যমন্ত্রী বদল হল? রাজ্যবাসীর জানার অধিকার আছে। না জানালে আপনাদের আর রাজনীতি করারই অধিকার নেই। ত্রিপুরায় এক কলঙ্কিত অধ্যায় চলছে। ত্রিপুরার মানুষ সরল হতে পারে, বোকা নয়। মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই বিজেপি আর নয়। তৃণমূলকে যত মারবে, তত বাড়বে। শুধু হামলা-মামলা দিয়ে সরকার চলে না। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মানুষের দুয়ারে সরকার দিয়েছেন। আর ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী দুয়ারে শয়তান দিয়েছেন। আগরতলায় এদিনের সভায় মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। উপস্থিত ছিলেন পান্না দেব, প্রকাশ দাস, শান্তনু সাহা, বাপটু চক্রবর্তী, অয়ন চক্রবর্তী প্রমুখ।