সংবাদদাতা, কাটোয়া : স্বামীর ইচ্ছের বিরুদ্ধে সরকারি চাকরি করতে যাওয়ার ভারী মাশুল দিতে হল স্ত্রীকে। ঘুমন্ত স্ত্রীর মুখে বালিশ গুঁজে ডানহাতের কবজি কেটে নিল স্বামী। এমনই হাড় হিম করা ঘটনার সাক্ষী রইল কেতুগ্রাম ১ নং ব্লকের কোজলসা গ্রাম। বছর পাঁচেক আগে পাশের চিনিসপুর গ্রামের মেয়ে রেণুকা খাতুনের সঙ্গে বিয়ে হয় সিরাফুলের। ছোট থেকেই পড়াশোনায় ভাল রেণুকা নিজের পায়ে দাঁড়াতে কলকাতায় গিয়ে নার্সিংয়ের প্রশিক্ষণ নেন। সরকারি হাসপাতালে নার্সের চাকরির প্যানেলে নাম নথিভুক্তও হয়। আর তা দেখেই রেণুকাকে চাকরি করা থেকে আটকাতে নানারকম ছক কষতে থাকে সিরাফুল।
আরও পড়ুন-দেশে গৃহযুদ্ধ লাগাচ্ছে বিজেপি, দাবি লালুর
প্রথমে অনুনয়-বিনয়। তারপর হুমকি। তাতেও কাজ না হওয়ায় দু’জনকে সঙ্গে নিয়ে ঘুমন্ত স্ত্রীর মুখে বালিশ চেপে ধরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে ডান হাত দু’ আধখানা করে দেয়। সেইসঙ্গে ডাক্তাররা যাতে কাটা হাত জুড়তে না পারেন, সেজন্য সেটা সিরাফুল লুকিয়েও রাখে। এই ঘটনার খবর পেয়েই রাজ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা জানিয়েছেন, রেণুকার চাকরি করা নিয়ে কোনও সমস্যা হবে না। সরকার ওঁর পাশে আছে। ওঁর প্রতিবন্ধকতা দেখে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রেণুকার শিক্ষাগত যোগ্যতা, প্রশিক্ষণের শংসাপত্র, চাকরি সংক্রান্ত ও পরিচয়পত্রের যাবতীয় নথিও গায়েব করে দিয়েছে বলে রেণুকার দাদা রিপন শেখের দাবি।
আরও পড়ুন-উদ্বেগে মৌসম ভবন
রিপন চান, ‘‘বোনকে চাকরি করা আটকাতে সিরাফুল যে নারকীয় কাজ করেছে, তাতে তার ও তার দুই সঙ্গীর দৃষ্টান্তমূলক সাজা।’’ রেণুকাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় প্রথমে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকেই গা-ঢাকা দিয়েছে সিরাফুল। পূর্ব বর্ধমানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ধ্রুব দাস জানালেন, ‘‘অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা দায়ের হয়েছে। সিরাফুলকে খুঁজছে পুলিশ।’’ ঘটনার পর থেকেই মুষড়ে পড়েছেন রেণুকার বাবা স্থানীয় চিনিসপুর গ্রামের বাসিন্দা আজিজুল হক। তাঁর একটাই প্রশ্ন, ‘‘একটা মেয়ে খেটেখুটে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায়। সেটা কি অপরাধ?”