প্রতিবেদন : উপনিষদ ফারসিতে অনুবাদ করে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিয়েছিলেন দারাশুকো। ভারতীয় দর্শনের তাৎপর্য মেলে ধরেছিলেন বিশ্বমানবের অনুভূতিতে। সময়ের হাত ধরে সেই দর্শনের উপলব্ধি ঘটেছিল আরও বহু ভাষাভাষী মানুষের হৃদয়ে। সেই দর্শন বিভিন্ন ভাষা, সংস্কৃতি আর ধর্মের মেলবন্ধনের কথা বলে। সহিষ্ণুতার শিক্ষা দেয়। সেই শিক্ষার পথ ধরেই দেশের বিভিন্ন ভাষা-ধর্ম-সংস্কৃতির মানুষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের বার্তা দিলেন নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. অমর্ত্য সেন। ভারতীয় গণতন্ত্রের সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন নোবেলজয়ী ড. অমর্ত্য সেন। তিনি মনে করেন, বিচারবিভাগ এই মুহূর্তে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে। শুধু গণতন্ত্র নয়, দেশে অনৈক্যের পরিবেশও রীতিমতো ভাবিয়ে তুলেছে তাঁকে। ঐক্যের পক্ষে সওয়াল করে তাঁর বক্তব্য, আমি চাই বজায় থাকুক আমাদের ইতিহাসের ঐক্য। ভারতের সংস্কৃতি মেলবন্ধনের প্রতীক। ঐক্যের সাক্ষী ইতিহাস। হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের ইতিহাস। আজকের দিনেও যার গুরুত্ব অপরিসীম। এর অভাব ঘটলে হতাশা তো আসবেই। বিভাজন ঘটলে তা অবশ্যই বিপজ্জনক। উদ্বেগ তো হবেই। প্রতীচী ট্রাস্টের এক আলোচনাসভায় সম্প্রতি এই মনোভাব প্রকাশ করেছেন ড. অমর্ত্য সেন।
আরও পড়ুন-নিখোঁজ মহিউদ্দিনকে নিয়ে ধোঁয়াশা, আজ ফিরছে জওয়ান শংকরের দেহ
তৃণমূল কংগ্রেসের জাতীয় মুখপাত্র সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় বলেন, অধ্যাপক সেন দেশের সীমানা ছাড়িয়ে, বিদেশেও তার প্রভাব রয়েছে। উনি সচেতন নাগরিকের মতো কথা বলেছেন। মোদি ক্ষমতায় আসার পরে দেশের যা অবস্থা দেখা দিয়েছে, তাতে দেশের কম্পোজিট কালচার যা রবীন্দ্রনাথ, নজরুল তুলে ধরেছেন। বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের কথা। তা বারবার নষ্ট হচ্ছে। ভারতকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে। মমতা বন্দোপাধ্যায় বারবার এর প্রতিবাদ করছেন। আর এখানে তার এজেন্ট হল যে লাটসাহেব বসে আছেন। কথায় কথায় চিঠি লিখছেন। অর্মত্য সেন যা বলেছেন তাকে দলের তরফ থেকে কৃতজ্ঞতা।
আরও পড়ুন-হারানো দিনের স্মরণীয় নায়িকা রাইকমল কাবেরী
অধ্যাপক সেনের মতে, দেশের বর্তমান পরিস্থিতি দেখে ভয় পাওয়াটা মোটেই অস্বাভাবিক নয়। যুক্তিসঙ্গত কারণ আছে ভয়ের। একদল আর এক দলের ওপর বল প্রয়োগ করলে অন্নদাশঙ্কর রায়ের ‘তেলের শিশি’ ভাঙার মতোই অবস্থা হবে। তাই দেশ এবং জাতির স্বার্থেই বন্ধ হওয়া উচিত এই বিপজ্জনক প্রবণতা। দেশের গণতন্ত্রে বিপদের ধরণটাও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন নোবেলজয়ী। তাঁর কথায়, ভারতীয় সংবিধানে প্রশাসন,সংসদ এবং বিচারবিভাগের ভারসাম্যের সঠিক দিশা রয়েছে। অথচ সংসদে গরিষ্ঠতা পাওয়ার জন্য নেওয়া হচ্ছে নানা কৌশল। বিভিন্ন আবেগ উস্কে দিয়ে, যুদ্ধের উন্মাদনা তৈরি করে লক্ষ্যে পৌঁছানোর চেষ্টা চলছে। সেইকারণেই বিচারবিভাগের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন নোবেলজয়ী।
আরও পড়ুন-আর একা নও তুমি
সুখেন্দুশেখর বলেন, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক যে সাম্যের কথা বলা হয়েছে তাতে আজ ধস নেমেছে৷ কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধাচারণ করলেই তাকে জেলে ভরা হচ্ছে। এটাই ঔপনিবেশিক আইন। ওদের দলের তরফে যে যে কথা বলা হচ্ছে তাতে দেশে ভাঙনের অবস্থা। একদলীয় ব্যবস্থা করতে চাইছে। কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থাকে প্রচলিত করতে চাইছে। অধ্যাপক সেনের কথা শুনে আমাদের রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করতে হবে। সংবিধান প্রণেতারা গণতন্ত্রের তিন স্তম্ভকে তৈরি করেছেন৷ দায়িত্ব দিয়েছেন। শাসক দল, প্রশাসন, বিচার ব্যবস্থা আলাদা আলাদা ব্যবস্থা আছে? এই কথা প্রফেসর সেন মনে করিয়ে দিচ্ছেন।
আরও পড়ুন-শৈলবালা ঘোষজায়া, এক বিস্মৃত কলম-বিপ্লবী
বিচার ব্যবস্থাকে কুক্ষিগত করার চেষ্টা চলছে। বিচারপতি নিয়োগ নিয়ে মুখে কুলুপ আঁটা অনেকের৷ সংখ্যাগরিষ্ঠতার বিচারে সব হয় না। শুধু ভাষা, ধর্ম নিয়ে সংখ্যালঘু নয়। আজ যারা মনে করে বিশেষ একটা ধর্মের দেশ ভারত। তা ঠিক নয়।