আদিবাসীদের জঙ্গলের অধিকার কাড়ছে কেন্দ্র

Must read

নবনীতা মণ্ডল, নয়াদিল্লি : আদিবাসী সম্প্রদায়ের (Indigenous Community) প্রতিনিধিকে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী করছে বিজেপি। অথচ এখন বনাঞ্চল বিক্রি করার অধিকারের বিধান দিয়ে জঙ্গলের ভূমিপুত্র আদিবাসীদের মৌলিক অধিকার খর্ব করতে চলেছে মোদি সরকার। কেন্দ্রের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছে তৃণমূল কংগ্রেস সহ বিরোধীরা। জঙ্গলের ভূমিপুত্র আদিবাসী (Indigenous Community) জনজাতির অধিবাসীদের সঙ্গে কোনও আলোচনা না করে এবং সম্মতি না নিয়েই জঙ্গল কেটে সাফ করার রাস্তা করে দিল নরেন্দ্র মোদি সরকার। নতুন আইনে তাঁদের অজ্ঞাতেই জঙ্গল কেটে ফেলতে পারবে বেসরকারি সংস্থাগুলি। ২০০৩ সালের আইন বদল করে বন সংরক্ষণ আইন ২০২২ এর বিজ্ঞপ্তি জারি করে আদিবাসী বিরোধী এই পদক্ষেপ নিল কেন্দ্রীয় সরকার। আগের আইন অনুযায়ী, জঙ্গলের জমি কোনও বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার আগে জঙ্গলের অধিবাসীদের মতামত এবং সম্মতি নিতে হত সরকারকে। কিন্তু এবার থেকে প্রথমে বেসরকারি সংস্থার হাতে জঙ্গলের জমি তুলে দেওয়া হবে। তারপর হবে পরবর্তী নিয়মরক্ষার কাজ।

নয়া আইন অনুযায়ী, এবার থেকে জঙ্গলের জমি বিভিন্ন পরিকাঠামো ও উন্নয়নের কাজে ব্যবহার করতে আগে সেখানে বসবাসকারী আদিবাসী এবং অন্যান্য সম্প্রদায়ের মতামত নেওয়া বাধ্যতামূলক নয়। পুরনো আইন অনুযায়ী, এই কাজের দায়িত্ব ছিল কেন্দ্রীয় সরকারের। আর নতুন আইনে এই দায়িত্ব চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে রাজ্য সরকারগুলির উপর।

এবার থেকে প্রথমে বেসরকারি সংস্থার হাতে জঙ্গলের জমি তুলে দেওয়া হবে এবং বিকল্প জায়গায় গাছ বসানোর প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ বাবদ টাকা নেওয়া হবে। সবশেষে জঙ্গলের অধিবাসীদের সঙ্গে কথা বলা, তাঁদের সম্মতি প্রদান এবং পুনর্বাসনের কথা বলা হয়েছে। ফলে বিষয়টিকে জটিল করে যাবতীয় ঝক্কি পোহানোর দায় রাজ্য সরকারগুলির ঘাড়ে ঠেলে দিয়েছে কেন্দ্র। নতুন আইন অনুযায়ী, জঙ্গলের যে প্রকল্প হবে, তার বিস্তারিত হাতে পাওয়ার পরেই জঙ্গলের জমি অধিগ্রহণের অনুমোদন দেবে কেন্দ্র। বিশেষজ্ঞদের দাবি, এই বিষয়টি জঙ্গলের অধিকার আইনের পরিপন্থী। কারণ প্রথাগতভাবে জঙ্গলের জমি হিসেবে চিহ্নিত জায়গাগুলি কোনও বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দিতে হলে আগে সেখানকার অধিবাসীদের অনুমতি নিতে হয়।

আরও পড়ুন: জোহানেসবার্গে পানশালায় গুলিবৃষ্টি, হত ১৫ জখম বহু

বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, জঙ্গলের জমি বেসরকারি সংস্থা বা মালিকানার হাতে তুলে দেওয়ার পর সেখানকার অধিবাসীদের সম্মতি নিতে যাওয়া বা তাঁদের জানানোর বিষয়টি খুবই জটিল বিষয়। এ প্রসঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ ডাঃ শান্তনু সেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মোদি সরকার আসন্ন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে আদিবাসী মহিলাকে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী করে তাদের হারানো ভোটব্যাঙ্ক পেতে সস্তা রাজনীতি করছে। সামগ্রিকভাবে ভারতের আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রতি বিজেপি সরকারের যে উদাসীন মনোভাব তা বারবার প্রমাণিত হয়েছে এবং আজ আবার তারা আরও একবার একনায়কতন্ত্রের পরিচয় দিল। জঙ্গলের উপর আদিবাসীদের যে মৌলিক অধিকার, তা কেড়ে নিয়ে একনায়কতন্ত্রের বুলডোজার চালিয়ে জঙ্গল দখল করতে চায় কেন্দ্র। এতে যে শুধু আদিবাসীদের প্রতি অবিচার হল তাই নয়। পরিবেশ এবং প্রাকৃতিক ভারসাম্য ধ্বংস হবে। এর প্রতিবাদ জানাচ্ছে তৃণমূল। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীও এদিন ট্যুইটারে লিখেছেন, মোদি-মিত্র সরকার তাদের ঘনিষ্ঠ পুঁজিপতিদের পক্ষে। জঙ্গলের অধিকার ছিনিয়ে নিতে বিজেপি সরকার নতুন বন সংরক্ষণ আইন ২০২২ এনেছে ২০০৬ সালের আইনকে লঘু করে। আদিবাসীদের জল, জঙ্গল এবং ভূমি রক্ষায় আদিবাসী ভাই-বোনদের পাশে আছি আমরা।

Latest article