প্রিয়াঙ্কা চক্রবর্তি: মানুষ যে জগৎসভায় শ্রেষ্ঠ আসন লাভ করেছে তার পেছনে মূল কারণ কিন্তু মানুষের মগজ। মানুষ একমাত্র এই মগজের জোরেই সমস্ত প্রাণীর থেকে আজ শ্রেষ্ঠতম জায়গা অধিকার করেছে। সৃষ্টির আদিকাল থেকে শুরু করে মানুষ ধীরে ধীরে আধুনিক জীবনে পা রাখার সূত্র পেয়েছে এই মগজের ওপর ভিত্তি করে।মানুষ আজ গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে পাড়ি দিয়েছে, সৃষ্টি করেছে নতুন নতুন যন্ত্রপাতি, আবিষ্কার করেছে নতুন গ্রহ, সন্ধান দিয়েছে নতুন প্রাণের আর এই সমস্ত কিছুই সম্ভব হয়েছে মানুষের মস্তিষ্কবলে।
আরও পড়ুন- আজ ত্রিপুরা মন্ত্রিসভার বড়সড় রদবদল, বিপ্লবেই আস্থা কেন্দ্রের, ক্ষোভে ফুঁসছেন সুদীপ
অ্যালবার্ট আইনস্টাইন থেকে শুরু করে স্টিফেন হকিংস সহ সমস্ত বিজ্ঞানীদেরই মূল অস্ত্র তাদের মস্তিষ্ক বা বলা ভালো তাদের আইকিউ অর্থাৎ বুদ্ধাঙ্ক।তাই সাধারণ থেকে অসাধারণ হয়ে উঠতে গেলে, নিজের মধ্যে নতুন কিছু সৃষ্টি করতে গেলে, নতুন সৃষ্টির হদিশ পেতে গেলে শান দিতে হবে আমাদের মগজকে। যার সব থেকে সহজ উপায় হল সংগীত। আমরা সবাই কম বেশি গান শুনে থাকি। এমনকি কেউ কেউ আবার গান শুনতে শুনতেই যাবতীয় কাজকর্মও করে থাকে।এতে তাদের মন ভালো থাকে আর কাজকেও একঘেয়ে মনে হয় না এককথায় গান বা সঙ্গীতকে আমরা বিনোদনের একটা মাধ্যম হিসেবে বেছে নিই।কিন্তু এটি শুধু বিনোদনই নয় মস্তিষ্কের নানারকম জটিল কাজে আমাদের অজান্তেই সাহায্য করে।
আরও পড়ুন- কেন্দ্রর তরফে নাম না এলে অস্থায়ী ডিজি নিয়োগ করতে চলেছে নবান্ন
স্মৃতিশক্তিবর্ধক রূপে সঙ্গীতএই সম্বন্ধে আলোচনা শুরু করতে গেলে আমাদের মস্তিষ্কের গঠন সম্পর্কে আগে ভালোভাবে জেনে নিতে হবে। হ্যাঁ অবশ্য এটা বলা একেবারেই ভুল হবেনা যে মস্তিষ্কের গঠন খুবই জটিল। তবে জীব একটু সহজভাবে বলতে গেলে বলতে হয় আমাদের মস্তিষ্ক আসলে অস্থি নির্মিত খুলির মধ্যে সংরক্ষিত একটি স্নায়ুপিণ্ড বিশেষ। মানুষের মস্তিষ্ক কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের একটি অংশ এবং এই কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের অপর অংশটি হলো সুষুম্নাকাণ্ড। করোটির মধ্যে সংরক্ষিত মেনিনজেস নামক পর্দাবেষ্টিত এই মস্তিষ্কের প্রধানত তিনটি ভাগ রয়েছে। যথা অগ্রমস্তিষ্ক, মধ্য মস্তিষ্ক ও পশ্চাৎ মস্তিষ্ক। এই অগ্র মস্তিষ্কে থাকা গুরু মস্তিষ্কই মানুষের মস্তিষ্কের সর্ববৃহৎ অংশ। যার দুটি হেমিস্ফিয়ার (বাম ও ডান) সহ চারটি লোব বর্তমান। যথা ফ্রন্টাল প্যারাইটাল অক্সিপিটাল ও টেম্পোরাল। উল্লেখিত গুরু মস্তিষ্কের দুটি হেমিস্ফিয়ার-এর সংযোগরক্ষাকারী যোজকটি হল করপাস ক্যালোসাম। এখানে মস্তিষ্কের গঠন সম্বন্ধে আলোচনা করার একটাই উদ্দেশ্য মস্তিষ্কের ওপর সঙ্গীতের প্রভাব এই বিষয়টি তে আলোকপাত করা। কারণ সঙ্গীত মস্তিষ্কের গঠনের ওপরেও প্রভাব বিস্তার করে থাকে। আমাদের মস্তিষ্ক দেহের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার পাশাপাশি স্মৃতি সংরক্ষণ ,বাইরের পরিবেশের সঙ্গে সম্বন্ধ স্থাপন ইত্যাদি করে থাকে। আমরা প্রতিনিয়ত যা কাজ করে থাকি তার সবটাই মস্তিষ্ক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় এবং এর পাশাপাশি মস্তিষ্ক ঐ সমস্ত কাজের স্মৃতি সংরক্ষণ করে রাখে।
আরও পড়ুন- হারের দায় স্বীকার করতে মেরুদণ্ড লাগে, সৎসাহস নেই বিজেপির! তথাগতর টুইট নিয়ে তরজা
সাধারণত কোনো মানুষ জন্মানোর পর থেকে সারা জীবন ধরে যা যা প্রত্যক্ষ করে, তার সমস্তই জমা হয় তার মস্তিষ্কের স্মৃতিকোষে। ভাবতে খুব অবাক লাগে, একটা মানুষ তার পরিচয় পায় এই মস্তিষ্কের জন্য। মস্তিষ্কে থাকা স্মৃতিকোষ একটা মানুষের ঘরবাড়ি, স্কুল-কলেজ, আত্মীয়-স্বজন, বাবা-মা সমস্ত কিছুর ডেটাবেস হিসেবে কাজ করে। আসলে মস্তিষ্ক হল আমাদের মেমোরি চিপ। যাতে সারা জীবনের অসংখ্য তথ্য জমা থাকে। তবে এই তথ্য জমা রাখার বিষয়ে মস্তিষ্ক কিন্তু বরাবরই খুব খুঁতখুঁতে। কোন্ স্মৃতিটা সে দীর্ঘকালব্যাপী ধরে রাখবে বা কোন্ স্মৃতিটা সে অচিরেই মুছে ফেলবে, সেটা নির্ভর করে স্বয়ং মস্তিষ্কের ওপর। অবশ্য শুধুমাত্র মস্তিষ্কের ওপর বলাটা ঠিক হবে না। সেটা মানুষের চিন্তাধারা বা সেই স্মৃতিকে ব্যবহার করার ওপরও নির্ভর করে। অর্থাৎ কোনো স্মৃতিকে আমরা যদি বারংবার ব্যবহার করে থাকি তাহলে সেই স্মৃতি্কে মস্তিষ্ক দীর্ঘকালীন স্মৃতিরূপে ধরে রাখবে। আবার কোনো স্মৃতিকে যদি আমরা বারংবার ব্যবহার না করি, তাহলে মস্তিষ্ক নিজের থেকেই সেই স্মৃতিকে স্বল্পকালীন স্মৃতিরূপে ধরে রাখবে এবং এক সময় সেই স্মৃতি মুছে যাবে।
আরও পড়ুন- “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রকল্প কন্যাশ্রী ও রূপশ্রী দুটোই এক্ষেত্রে খুব কাজের”
এক্ষেত্রে সঙ্গীত কিন্তু কোনো স্বল্পস্থায়ী স্মৃতিকে দীর্ঘস্থায়ী করার প্রক্রিয়াটিকে অনেক স্বাচ্ছন্দ্যে করে থাকে। তাই বলা হয়, আমরা কোনো তথ্য দীর্ঘদিন ধরে মনে রাখতে চাইলে গান শোনা প্রয়োজন। কথাটি খুব হাস্যকর লাগছে তাইতো। তবে তাবড় তাবড় বিজ্ঞানীরা এই কথাটি স্বীকার করে থাকেন। স্নায়ু বিশেষজ্ঞরাও এটি পরীক্ষা করে দেখিয়েছেন যে সংগীতের সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের স্মৃতিশক্তি অনেক প্রবল হয়। অবশ্য এর পিছনেও একটি বৈজ্ঞানিক যুক্তি রয়েছে। আসলে আমাদের গুরু মস্তিষ্কে থাকা লোবগুলি দর্শন,শ্রবণ, কথন প্রভৃতি কাজগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে বা বলা ভাল প্রভৃতি কাজগুলির প্রক্রিয়াকরণের কেন্দ্ররূপে কাজ করে থাকে। আমরা পরিবেশে বসবাস করাকালীন যা দেখি বা শুনি, সেই সমস্ত কিছু তথ্য একত্রিত হয়ে স্মৃতিকোষে সঞ্চিত হয়।এই ক্ষেত্রে যত বেশি কেন্দ্র এই তথ্য প্রক্রিয়াকরণের কাজে যুক্ত থাকে ততবেশি আমাদের স্মৃতিকোষ শক্তিশালী হয় এবং মস্তিষ্ক সেই স্মৃতিগুলিকে ততো তাড়াতাড়ি দীর্ঘকালীন স্মৃতিতে স্থানান্তরিত করতে পারে। আর এইজন্যই কিন্তু আমদের কোনো সঙ্গীতের কথা বা সুর আমাদের অনেক বেশি মনে থাকে বা চলচ্চিত্রে দেখা বা শোনা কোনো তথ্যও আমাদের দীর্ঘদিন মনে থাকে। কারণ এই সমস্ত ক্ষেত্রেই আমদের মস্তিষ্কের একাধিক কেন্দ্র অংশগ্রহণ করে।তাই বলা যায় আমরা যদি কোনো তথ্য মনে রাখতে চাই অর্থাৎ দীর্ঘকালীন স্মৃতিতে সঞ্চয় করে রাখতে চাই তাহলে গান শোনা বা সঙ্গীত চর্চা করা একান্ত প্রয়োজনীয়।
আরও পড়ুন- মঙ্গলবার ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক
আসলে সঙ্গীত শোনাকালীন বা সঙ্গীতচর্চার সময় এমনকি কোনো বাদ্যযন্ত্রচর্চার সময়ও মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশগুলি একত্রিত হয়ে কাজ করার পেছনে মূল কারণই হল সেই গানের তাল লয় সুর ও সুরের কম্পাঙ্ক প্রভৃতি বিষয়গুলিকে বিশ্লেষণ করা।যার ফলে সঙ্গীত শোনাকালীন বা সঙ্গীতচর্চার সময় বা যে কোন বাদ্যযন্ত্রচর্চার সময় মস্তিষ্কের প্রায় সমস্ত অংশ সক্রিয় থাকে। যা কোনো স্মৃতিকে সহজেই দীর্ঘকালীন স্মৃতিতে স্থানান্তরিত করার ক্ষমতা রাখে। আসলে আমাদের দেহের সাথে মস্তিষ্কের সংযোগ ঘটিয়ে থাকে স্নায়ু এবং একটি স্নায়ুর সাথে অপর স্নায়ুর সংযোগরক্ষাকারী পদ্ধতি হলো সাইন্যাপস বা ভালো ভাষায় যাকে বলে স্নায়ুসন্নিধি। সঙ্গীত এই সাইন্যাপস-এর সংখ্যা বৃদ্ধি করার ফলে, মস্তিষ্ক যে-কোনো জটিল বিষয়কে সহজেই বিশ্লেষণ করতে পারে এবং স্মৃতি হিসেবে সেটিকে ধরে রাখতে পারে। সহজ করে বলতে গেলে মস্তিষ্কের অংশগুলির সক্রিয়তা বৃদ্ধির অর্থই হলো সেই সমস্ত অংশগুলিতে থাকা স্নায়ুগুলির সংখ্যা তথা সক্রিয়তা বৃদ্ধি। তবে শুধু স্মৃতি সংরক্ষণই নয়, সময়মত এবং ক্ষেত্রবিশেষে সেই স্মৃতিগুলিকে মনে করা এবং সেই অনুযায়ী দক্ষতার সাথে কাজ করাতেও সাহায্য করে থাকে এই সঙ্গীত। তবে এখানে একটি কথা একেবারে না উল্লেখ করলেই নয় যে এতক্ষণ আলোচিত আমাদের স্মৃতি ভান্ডারের মূল স্থান হল গুরু মস্তিষ্কের টেম্পোরাল লোবের প্রলম্বিত অংশ হিপ্পোক্যাম্পাস।
আরও পড়ুন- নিশীথ-বার্লার কাজে ক্ষুব্ধ বিজেপি কর্মীরা
জটিল গাণিতিক সমস্যা সমাধানে সঙ্গীতকি খুব অবাক লাগছে তো! হ্যাঁ অবশ্য অবাক হওয়ারই কথা,কারণ গাণিতিক সমস্যা সমাধানে সঙ্গীত কি করতে পারে ??চলুন তবে দেখে নেওয়া যাক সত্যিই কি গাণিতিক সমস্যার সমাধানে সঙ্গীত কোনো কাজে লাগে না লাগে না। আমি আগেই বলেছি যে গুরুমস্তিষ্ক দুটি গোলার্ধ অর্থাৎ হেমিস্ফিয়ার নিয়ে গঠিত। এই ডান আর বাম হেমিস্ফিয়ার দুটি ভিন্ন ভিন্ন কাজ করে থাকে। যেমন বাম হেমিস্ফিয়ার অংশটি কোনো জটিল গাণিতিক সমস্যা সমাধানে, কথা বলতে, লিখতে, যুক্তি বুদ্ধি দিয়ে কোনো কিছু বিচার করতে বা জটিল কোনো সমস্যা বিশ্লেষণ করতে, কোনো কিছু বুঝতে সাহায্য করে। আবার আমাদের সৃজনশীল কাজ করার ক্ষমতার জন্য দায়ী মূলত এই ডান হেমিস্ফিয়ারটি । এই দুই হেমিস্ফিয়ার বা গোলার্ধের মধ্যে সংযোগ রক্ষাকারী করপাস ক্যালোসামে থাকা স্নায়ুগুলির সক্রিয়তা বৃদ্ধি পায় সঙ্গীতের জন্য।ফলে যারা নিয়মিত সঙ্গীতচর্চার সাথে যুক্ত আছে বা কোনো বাদ্যযন্ত্র বাজানোর অভ্যাস এর সঙ্গে যুক্ত আছে তারা খুব সহজেই কোনো জটিল গাণিতিক সমস্যা অতি কম সময়ে সমাধান করে দিতে পারে। এমনকি যে-কোনো ধরনের জটিল মস্তিষ্কের কাজও তারা খুব সহজেই করে ফেলতে পারে। অর্থাৎ এই আলোচনা থেকে বোঝাই যাচ্ছে যে মস্তিষ্ক ক্ষুরধার করতে সঙ্গীতের বিকল্প নেই। তবে শুধুমাত্র যারা সঙ্গীতচর্চার সাথে যুক্ত আছেন একমাত্র তাদের ক্ষেত্রেই এই সমস্ত পরিবর্তন লক্ষণীয় তা একেবারেই বলতে চাই না। বরং যারা নিয়মিত সঙ্গীত বা কোন সুর শোনেন, তাদের ক্ষেত্রেও এই পরিবর্তন লক্ষণীয় এবং তা পরীক্ষিত সত্যও বটে।
আরও পড়ুন- ইস্টবেঙ্গলে অমরজিৎ, বাগানে ব্লকারের খোঁজ
নেশা মুক্তিতে সঙ্গীতএবার একটু অন্য প্রসঙ্গে আসা যাক। এতক্ষণ মস্তিষ্কের শক্তিবৃদ্ধি নিয়ে অনেক আলোচনা হল।এবার নেশাগ্রস্থদের নেশা মুক্তি ঘটাতেও যে সঙ্গীতের বিকল্প মেলা ভার এখন সেটি নিয়েই আলোচনা করব। এখন অনেকেই শুনে থাকবে যে নেশাগ্রস্থদের ওষুধ ছাড়াই নেশা মুক্তি ঘটানো সম্ভব হয়েছে। এবং সেখানে ওষুধের বদলে জায়গা করে নিয়েছে সঙ্গীত। এই প্রসঙ্গে আলোচনা করার জন্য আমাকে আবার একটু জীববিদ্যার সাহায্য নিতে হবে। আসলে আমি আগেই বলেছি যে একটি স্নায়ুর সাথে অপর স্নায়ুর সংযোগ রক্ষা করে থাকে সাইন্যাপস।এই সাইন্যাপস-এর মাধ্যমে একটি স্নায়ু থেকে অপর স্নায়ুতে যেকোনো বার্তা প্রেরিত হয়। এবং এখানে বার্তা বাহক রূপে কাজ করে কিছু রাসায়নিক পদার্থ। যেমন-অ্যাসিটাইল কোলিন, ডোপামিন, সেরোটোনিন ইত্যাদি। এই রাসায়নিকগুলির মধ্যে কিছু রাসায়নিক আমাদের আনন্দের অনুভূতি জাগায়। আর সবথেকে বেশি যে রাসায়নিকটি এই খুশির অনুভূতি সৃষ্টিতে সাহায্য করে, সেটি হল ডোপামিন। আমাদের যখন মন খারাপ থাকে বা কোনো কারণে আমরা যখন দুঃখে থাকি, তখন স্বাভাবিক প্রবৃত্তি অনুযায়ী আমরা চাই একটু আনন্দ পেতে এবং সেই চাহিদাতেই ধীরে ধীরে আমরা নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ি। কারণ এই নেশার বস্তগুলি বা বলা ভালো মাদকগুলির সেবনে আমাদের মস্তিষ্কে্র স্নায়ু সংযোগের মধ্যে অর্থাৎ সাইন্যাপস এর মধ্যে ডোপামিন ক্ষরণ বেড়ে যায়। যা আমাদের খুশির অনুভূতি দেয়। আর শুধুমাত্র এই কারণের জন্যই আমরা সেই মাদকগুলির ওপরে ধীরে ধীরে আসক্ত হয়ে পড়ি। এক সময় যার থেকে বেরিয়ে আসা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। মূলত এই কারণের জন্যই আজ বেশিরভাগ কম বয়সী ছেলেমেয়েদের মধ্যে মাদকের প্রতি আসক্তি দেখা যাচ্ছে। যা তাদের অজান্তেই ধীরে ধীরে তাদের মস্তিষ্ককে অচল করে দিচ্ছে এবং জীবনকে ঠেলে দিচ্ছে এক গভীর অন্ধকারে। এর থেকে মুক্তির সহজ পন্থা দিয়েছে সঙ্গীত। কারণ মাদকের মতোই সঙ্গীত সাইন্যাপসে ডোপামিন ক্ষরণ করায়। যা বিনা মাদক সেবনেই আনন্দের অনুভূতি প্রদান করে। ফলে মাদকাসক্তরা মাদক সেবন ছাড়াই সে আনন্দের অনুভূতি পাওয়ায় ধীরে ধীরে মাদক সেবন বন্ধ করতে থাকে এবং ফিরে আসতে থাকে তাদের স্বাভাবিক জীবনে। এভাবেই সঙ্গীতের মাধ্যমে একজন মাদকাসক্ত নতুন জীবন পায়।
বর্তমানে বিভিন্ন পুনর্বাসন কেন্দ্রগুলিতে সঙ্গীতের মাধ্যমে নেশা মুক্তির পন্থাটিকে অবলম্বন করা হচ্ছে এবং এটি নিয়ে যথেষ্ট চর্চাও হচ্ছে। আমরা কোনো মানুষকে শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি তার মস্তিষ্কের ওপর ভিত্তি করেই দিয়ে থাকি। গল্পে পড়া বিভিন্ন চরিত্রেরও মস্তিষ্কের জোরই আমাদের দৃষ্টি কাড়ে এবং ধীরে ধীরে সেই চরিত্রটিকে আমরা নিজেদের আদর্শ করে তুলি। সত্যিই কি আমরা ভাবি না যে আমাদের মস্তিষ্ক এরকম ক্ষুরধার হলে কেমন হতো, কেমন হতো বিজ্ঞানীদের মত আমরাও যদি বিভিন্নরকম আবিষ্কার করতে পারতাম তাদের মত এত জ্ঞানী হতে পারতাম এবং মনে মনে ভাবতে থাকি তাদের বুদ্ধাঙ্ক আমাদের থেকে কত বেশি। এমনকি তাদের মস্তিষ্কও আমাদের তুলনায় অনেক শক্তিশালী।
আসলে আমরা নিজের অজান্তেই আমাদের থেকে বুদ্ধিমান ব্যক্তি্র বুদ্ধির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ি এবং সেটা হওয়াটাই স্বাভাবিক। এই কারণের জন্যই না ফেলুদা থেকে শুরু করে শার্লক হোমস আমাদের কাছে এত প্রিয়।কারণ তাদের বুদ্ধিমত্তা, বিশ্লেষণ ক্ষমতা, কোনো জটিল সমস্যার সহজ সমাধান বাতলানোর গুণ আমাদেরকে আকৃষ্ট করে। এ তো গেল শুধু কাল্পনিক চরিত্রদের কথা। বিভিন্ন কালের বিভিন্ন যুগের বিজ্ঞানী তথা সমস্ত বুদ্ধিজীবী মানুষ আমাদের কাছে আজও প্রণম্য তাদের বুদ্ধিমত্তা বা বলা ভাল তাদের মস্তিষ্কের জন্য। সত্যি বলতে মানুষ যতই রূপের পিছনে ছুটুক কেন আজও রূপের থেকে মগজের দামটাই বেশি। তাই মগজাস্ত্র শানাতে করাই যাক না হয় একটু আধটু সঙ্গীতচর্চা।