কাবুল, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানিয়েছিলেন ৩১ অগাস্টের মধ্যেই আফগানিস্তান থেকে সমস্ত মার্কিন সেনা সরিয়ে নেওয়া হবে। কিন্তু নির্ধারিত সময় সীমার একদিন আগেই ৩০ অগাস্টের মধ্যেই আফগানিস্তান থেকে শেষ মার্কিন সেনাও আমেরিকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যান। সোমবার রাতে শেষ দফায় কাবুল থেকে ২৪০০ জন মার্কিন সেনা আমেরিকায় ফিরে যান। ক্রিস্টোফার ডানাহিউ শেষ মার্কিন সেনা হিসেবে আফগানিস্তানের মাটি থেকে বিমানে ওঠেন। এই মুহূর্তে কাবুলে আর কোনও মার্কিন সেনা রইল না।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের কয়েকদিন পর আমেরিকা আফগানিস্তানে সেনা পাঠিয়েছিল। দীর্ঘ ২০ বছর বাদে আমেরিকা কাবুলিওয়ালাদের দেশ থেকে তাদের সমস্ত সেনা তুলে নিল। এই দীর্ঘ ২০ বছর সেদেশে মার্কিন সেনা থাকার উদ্দেশ্য ছিল সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করা। এজন্য মার্কিন প্রশাসন কোটি কোটি ডলারও খরচ করেছে। কিন্তু তা যে সম্পূর্ণই বৃথা গিয়েছে তা ইতিমধ্যেই প্রমাণিত। তালিবানরা অগাস্ট মাসের মাঝামাঝি আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করেছে।
আরও পড়ুন- রাজ্যের উপনির্বাচন নিয়ে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের ফুল বেঞ্চ বৈঠক আজ
মার্কিন সেনার প্রত্যাবর্তনের সঙ্গে সঙ্গেই তালিবানরা শূন্যে গুলি ছুঁড়ে এক পৈশাচিক আনন্দে মেতে ওঠে। জঙ্গিদের দাবি, মার্কিন সেনা প্রত্যাবর্তনের এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়া এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। তবে শুধু মার্কিন সেনা নয়, আফগানিস্তানের যে সমস্ত মানুষ আমেরিকাকে সাহায্য করেছিল তাদেরও আফগানিস্তান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। কারণ তালিবানের জমানায় তাদের জীবন ভয়ঙ্কর বিপদের মুখে।
সোমবার এক অনুষ্ঠানে মার্কিন সেনার সেন্ট্রাল কমান্ডের প্রধান জেনারেল ফ্রাঙ্ক ম্যাকেঞ্জি বলেন, আফগানিস্তান থেকে আমেরিকার প্রত্যেক নাগরিককে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। ২০০১ সালের সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি যে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল এতদিনে তার অবসান হল। আন্তর্জাতিক সময় অনুযায়ী সোমবার সন্ধ্যে সাতটা বেজে ২৯ মিনিটে মার্কিন সেনাদের নিয়ে শেষ বিমানটি কাবুল ছাড়ে।
আরও পড়ুন- রাজ্যের উপনির্বাচন নিয়ে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের ফুল বেঞ্চ বৈঠক আজ
তালিবানের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ জানিয়েছেন, মার্কিন সেনা অপসারণের সঙ্গে সঙ্গেই আফগানিস্তান আজ পূর্ণ স্বাধীন হল। মার্কিন সেনা প্রত্যাহার আফগান জনগণের জয়। আনাস হাক্কানি নামে এক তালিবান নেতা জানিয়েছেন আমরা গর্বিত। আমরা এক ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হতে পারলাম।
২০০১-এর সেপ্টেম্বর থেকে কাবুল বিমানবন্দর ছিল মার্কিন সেনার হাতে। তারা ফিরে যাওয়ার পর তালিবানের কুখ্যাত স্পেশাল ফোর্স ‘বদরি ৩১৩’ কাবুল বিমানবন্দরে দায়িত্ব নিয়েছে। কাবুল বিমানবন্দর কোন কোন দেশ ব্যবহার করতে পারবে অর্থাৎ কোন কোন দেশের বিমান কাবুলে ওঠানামা করবে তালিবান এখনো তা জানায়নি।
তালিবান ১৫ অগাস্ট কাবুল দখলের পর সে দেশ থেকে ১ লক্ষ ২৩ হাজারের বেশি মার্কিন নাগরিক ও তাদের সাহায্যকারীকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের এক প্রস্তাবে বলা হয়েছে, তালিবান আফগানিস্তানবাসীকে দেওয়া সমস্ত প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে বলেই আমরা আশা করি। একই সঙ্গে ওই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বিভিন্ন দেশ ও রাষ্ট্রসংঘকে সেদেশে ত্রাণ ও পুনর্বাসনের কাজ করতে বাধা দেওয়া হবে না বলেই আমরা আশাবাদী। অন্যদিকে মার্কিন বিদেশসচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, শেষ মুহূর্তেও আফগানিস্তান থেকে সে দেশের বহু নাগরিককে বের করে আনা হয়েছে। আরও যারা দেশ ছাড়তে চান তাঁদেরও উদ্ধার করা হবে। তবে কীভাবে এই কাজ হবে সে বিষয়ে তিনি কিছু জানাননি।