সকালে উঠে বা ক্লান্ত হয়ে এসে এক কাপ গরম চা। এর জবাব নেই। অনেকেরই অজানা, চা পান করাও শেখানো হয়— বাচ্চাদের যেমন বড়রা শেখান, বড়দেরও শেখানোর রীতিমতো কোর্স আছে। আরেকটু খুলে বললে, চা পান করে তার স্বাদ নির্ণয় করাটা শেখানো হয় বিশেষ ট্রেনিং কোর্সের মাধ্যমে। শুধু তাই নয়, এই টি টেস্টিং কিন্তু একটা বিশাল পেশার জগৎ, যেটা দীর্ঘদিন ধরেই ছাত্রছাত্রীদের ধ্যান-ধারণার পরিমণ্ডলের অন্তরালে রয়ে গিয়েছে। শুধু তাই নয়, চা আমাদের রাজ্যের অন্যতম প্রধান রফতানি পণ্যও বটে। আর এই ‘চা’কে কেন্দ্র করেই রয়েছে টি টেস্টিং ছাড়াও একাধিক অন্যরকম পেশায় প্রবেশের সুযোগ। যার জন্য আপনাকে প্রস্তুতি নিতে হবে ‘টি ম্যানেজমেন্ট’ কোর্স করে। দেশে তথা আমাদের রাজ্যেও টি ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়াশুনার সুযোগ রয়েছে।
আরও পড়ুন-ময়দানে প্রাণ ফেরায় খুশি সুব্রত-মানসরা
টি ম্যানেজমেন্ট কী—
‘চা’-এর মতো বহুলব্যবহৃত এই পানীয়কে ঘিরে উৎপাদন থেকে বাজারীকরণ— এই মাঝের সমগ্র বিষয়টিকে একত্রে বলা যেতে পারে টি ম্যানেজমেন্ট। চা গাছ রোপণ, গাছের পাতা থেকে প্রস্তুতিকরণ, চা ব্র্যান্ডিং, মার্কেটিং, টেস্টিং একাধিক বিষয় রয়েছে টি ম্যানেজমেন্টের মধ্যে। চা উৎপাদনের দিক থেকে সারা বিশ্বে দ্বিতীয় এবং রফতানির দিক থেকে চতুর্থ স্থানে রয়েছে ভারত। চা অন্যতম প্রধান বেভারেজ হিসাবে বিক্রির দিক থেকে এই দেশ সবার থেকে এগিয়ে। সুতরাং এর থেকেই বোঝা যায়, টি ম্যানেজমেন্ট পেশার দিক থেকেও খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
টি ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়ার জন্য যোগ্যতা—
স্নাতক স্তরের মধ্যে আলাদা করে কোনও বিশেষ বিষয় নিয়ে পড়ার বাধ্যবাধকতা বা স্নাতক স্তরে এই নিয়ে পড়ার সুযোগ নেই। তবে কৃষিবিদ্যা, উদ্যানবিদ্যা, উদ্ভিদবিদ্যা এই বিষয়গুলি নিয়ে স্নাতক পর্যন্ত পড়াশুনা করে থাকলে অগ্রাধিকার পাওয়া যাবে। কিন্তু পুঁথিগত বিদ্যার পাশাপাশি চা-এর উপর নির্ভর করা ব্যবসা-বাণিজ্য, চা উৎপাদনের জন্য দেশের জলবায়ুর ভূমিকা ও প্রভাব, দেশের টপোগ্রাফি, জিওগ্রাফি এই সমস্ত আনুসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কেও সম্যক জ্ঞান থাকা প্রয়োজন।
আরও পড়ুন-সেরা লিস্টন-কিয়ান, মঞ্চে অমর একাদশের পরিবার
কী রকমের কোর্স করা যায়—
যাঁরা টি টেস্টিং নিয়ে এগোবার কথা ভাবছেন তাঁরা স্নাতক হবার পর এর সার্টিফিকেট কোর্স করতে পারেন। এছাড়া টি টেস্টিং অ্যান্ড মার্কেটিং, টি এস্টেট ম্যানেজমেন্ট এরকম বিষয়গুলি নিয়ে সার্টিফিকেট, ডিপ্লোমা, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা, বিএসসি, এমএসসি এরকম একাধিক কোর্স রয়েছে।
কোথায় পড়বেন —
আমাদের রাজ্যে দার্জিলিং টি রিসার্চ অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন ও উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা কোর্স করা যেতে পারে। রাজ্যে কয়েকটি নামী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও রয়েছে সার্টিফিকেট বা ডিপ্লোমা কোর্স করার জন্য। রাজ্যের বাইরে রয়েছে অসম এগ্রিকালচারাল ইউনিভার্সিটি, ব্যাঙ্গালোরে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ প্ল্যান্টেশন ম্যানেজমেন্ট, তামিলনাড়ু ইউনিভার্সিটি থেকে টি ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়াশুনা করা যেতে পারে।
আরও পড়ুন-৫ দিনের দিল্লি সফরে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী
কাজের সুযোগ কেমন—
পড়ার সুযোগ কম অথচ চাহিদা সাংঘাতিক, অতএব টি ম্যানেজমেন্ট নিয়ে কাজের ক্ষেত্র যথেষ্ট বিস্তৃত। টি টেস্টিংয়ের কাজের সুযোগ তো রয়েছেই, তার পাশাপাশি, টি মার্কেটিং, ব্র্যান্ডিং, চা-বাগানগুলিতে প্ল্যান্টেশন, প্রসেসিং-এ কাজের জায়গা রয়েছে। চা প্রস্তুতকারী কারখানা, কোম্পানিগুলিতে নানা পদে কাজের সুযোগ রয়েছে। এছাড়াও কোম্পানিগুলিতে কনসালট্যান্ট হিসাবে কাজের জায়গা থাকে। রয়েছে রিসার্চ করার বিষয়টিও। এটা সর্বজনবিদিত, অসম চা ও দার্জিলিং চা সারা পৃথিবীতে সুখ্যাত। পানীয় হিসাবে চায়ের জনপ্রিয়তাও বিশ্বব্যাপী সর্বোচ্চ স্থানে। কাজেই, আগামিদিনে কাজের জায়গা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। এইসব দিকের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পর্যটন শিল্প, হোটেল-আতিথেয়তা শিল্প ইত্যাদির দ্রুত প্রসারের সঙ্গে বাড়ছে প্রশিক্ষিত টি টেস্টারেরও প্রয়োজন।