শিল্পীদের চোখে নির্মলা

চলে গেলেন নির্মলা মিশ্র। শ্রোতাদের জন্য রেখে গেলেন অসংখ্য জনপ্রিয় গান। তাঁর স্মৃতিচারণ করলেন শিল্পীরা। শুনলেন অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

ছিলেন অত্যন্ত স্নেহপ্রবণ
হৈমন্তী শুক্লা
নির্মলা মিশ্র আমাদের কাছে ছিলেন অভিভাবিকার মতো। ওঁকে ঘিরে প্রচুর স্মৃতি। খুব কম বয়স থেকেই সান্নিধ্য পেয়েছি। একসঙ্গে কত অনুষ্ঠানে গেছি গান গাইতে।
অসম্ভব জনপ্রিয় ছিলেন। মানুষকে আনন্দ দিয়েছেন গান শুনিয়ে। ভালবাসা পেয়েছেন। সম্মান পেয়েছেন।

আরও পড়ুন-প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে পাওনা প্রায় ১ লক্ষ ৯৬৮ কোটি টাকা মেটানোর দাবি মুখ্যমন্ত্রীর

নির্মলাদি জীবনে প্রচুর গান গেয়েছেন। ওঁর গানের স্পেশালিটি ছিল এক্সপ্রেশন। আমাদের বলতেন, ‘আমি তো গান গাই না, আমি কথাগুলো বলি রে।’ আসলে নির্মলাদির মধ্যে একটা ঐশ্বরিক ব্যাপার ছিল।
ক্লাসিক্যাল গানের চর্চা খুব বেশি করার সুযোগ পাননি। সেটা নিয়ে আক্ষেপ ছিল ওঁর মনে। তবে গান শুনে শুনে ঠিকঠাক গেয়ে দিতে পারতেন। সহজেই পূরণ করে দিতেন নিজের খামতি।
একবার কোনও ব্যক্তি ওঁর তালজ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। উত্তরে নির্মলাদি বলেছিলেন, ‘আমি দুই হাতে দুই রকম তাল বাজাতে পারি।’
ছিলেন খুব মজার মানুষ। কখনও কখনও প্রাণ খুলে হেসে উঠতেন। আবার রেগে যেতেও দেখেছি। তবে রাগ দীর্ঘস্থায়ী হত না। মাঝেমধ্যেই হয়ে যেতেন খুব গম্ভীর।
নেলপলিশ লাগিয়ে নিজের চশমা রাঙিয়ে তুলতেন। সেটা দেখে আমরা খুব মজা করতাম। উনিও আমাদের মজা উপভোগ করতেন। ছিলেন অত্যন্ত স্নেহপ্রবণ। ভাল কিছু দেখলে প্রশংসায় ভরিয়ে দিতেন। এমন মানুষ খুব কম দেখেছি।
দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন নির্মলাদি। কষ্ট পাচ্ছিলেন খুব। অবশেষে চলে গেলেন। মুক্তি পেলেন কষ্ট থেকে। ওঁর আত্মার শান্তি কামনা করি।

আরও পড়ুন-নির্দিষ্ট সময়ের আগেই শেষ হতে চলেছে বাদল অধিবেশন! প্রতিবাদে সরব তৃণমূল

সরল একজন মানুষ
লোপামুদ্রা মিত্র
নির্মলাদি আমাকে বেণীমাধব বলে ডাকতেন। খুব প্রাণোচ্ছল একজন মানুষ ছিলেন। খুব সরল একজন মানুষ। যেটা ওঁর মনে আসত সেটাই মুখে বলে দিতেন। ওঁর গান ওঁর মন থেকে বেরত। সেই গান, অমন গানের গলা মিলিয়ে এক অপূর্ব সুন্দর সৃষ্টি তৈরি হত। পুরো বিষয়টা দারুণ হয়ে উঠত। আমার খুব পছন্দের ভাল লাগার শিল্পী নির্মলা মিশ্র। শুধু ওঁর নিজের গান নয় অন্য শিল্পীদের গান যেমন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গান বা মান্না দে-র গান সেগুলোও উনি এত সুন্দর গাইতেন মনে হত যেন ওঁর নিজের গান গাইছেন। একসঙ্গে বহু অনুষ্ঠানে গান গেয়েছি। ওঁর সব গান আমার পছন্দের। যার মধ্যে ‘ও তোতা পাখি রে’, ‘এমন একটি ঝিনুক খুঁজে পেলাম না’— আরও অনেক গানই রয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা আমি এটা মনে প্রাণে বিশ্বাস করি যে শিল্পীর মৃত্যু হয় না। শিল্পীর কাজ যখন বন্ধ হয়ে যায় তখন শিল্পীর মৃত্যু হয়। সেই দিক থেকে নির্মলাদি খুব কষ্ট পেয়েছেন কয়েকবছর ধরে। আমার মনে হয় এই চলে যাওয়াটা খুব বেদনাদায়ক। একজন শিল্পীর কাজ থাকতে থাকতে চলে যাওয়াটাই বোধহয় ভাল। কষ্ট পাওয়াটা কাম্য নয়। ওঁর আত্মা শান্তি পাক এটাই চাই।

আরও পড়ুন-কমনওয়েলথ গেমস: প্যারা পাওয়ারলিফটিংয়ে সুধীরের ঐতিহাসিক সোনা জয়, অভিনন্দন মুখ্যমন্ত্রীর

বুদ্ধিমতী এবং উদার
শুভমিতা
ওই প্রজন্মের অনেক শিল্পীর মধ্যে নির্মলা মিশ্র ছিলেন আমার বিশেষ পছন্দের। উনি খুব স্নেহপ্রবণ ছিলেন। আমাকে খুব ভালবাসতেন। পছন্দ করতেন আমার গান। অনেকের কাছেই আমার গানের কথা বলতেন।
বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে। ওঁর কোনও ছুঁতমার্গ ছিল না। কখনওই ভাবতেন না আগেকার গান ভাল, এখন কিছুই হচ্ছে না।
ওঁর বহু গান আমার খুব প্রিয়। অসম্ভব জনপ্রিয় ছিলেন। ছিলেন বড় মনের মানুষ। সরল, তবে একেবারেই বোকা ছিলেন না। বুদ্ধিমতী এবং উদার বলা যায়। অদ্ভুত একটা সারল্য ছিল ওঁর মধ্যে। শুনেছি সমসাময়িক শিল্পীদের জন্য অনেক কিছুই করেছেন। ওঁর প্রয়াণে আমরা শোকাহত।

আরও পড়ুন-ইডেনে শিবির কেকেআরের

মায়ের মতো দেখতাম
রাঘব চট্টোপাধ্যায়
নির্মলা মিশ্রকে আমি আমার মায়ের মতো দেখতাম, ভালবাসতাম। উনিও আমাকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন। আমার প্রথম অ্যালবাম ছিল ‘ভোরের আলো’। সেই অ্যালবামের একটি গানের শেষে ওঁর গানের চারটি লাইন ব্যবহার করেছিলাম। শুনে উনি খুব খুশি হয়েছিলেন। জানিয়েছিলেন ভাল লাগার কথা। অন্যদেরও গানটা খুব পছন্দ হয়েছিল। সেই সময় থেকে নির্মলাদির প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা বেড়ে গিয়েছিল।
যেখানে দেখা হত কথা বলতেন। প্রশংসা করতেন আমাদের নতুন নতুন গান শুনে। অনেক সময় আমার গান গেয়েও শোনাতেন। এইভাবে উনি পরের প্রজন্মকে উৎসাহ দিতেন।
আমাদের বাড়ির সবাই ছিলেন ওঁর গানের ভক্ত। আমিও ছোটবেলা থেকেই শুনছি। মা-পিসিরা ওঁর গান গেয়ে আমাদের ঘুম পাড়াতেন। গানগুলো শুনে খুব কান্না পেত। চোখে জল চলে আসত। আসলে নির্মলা মিশ্রর গানের মধ্যে মিশে থাকত প্রচণ্ড আবেগ।
ছিলেন একজন সর্বভারতীয় শিল্পী। কলকাতায় থেকে গেলেন। একেবারে শিশুর মতো সরল ছিলেন। এমন মানুষ আমি জীবনে খুব কম দেখেছি। এককথায় বিরল।

Latest article