উত্তরাখণ্ডের গাড়োয়াল হিমালয় বরাবর হাতছানি দেয় বাঙালি পর্যটকদের। উপেক্ষা করা যায় না সেই ডাক। তল্পিতল্পা নিয়ে বেরিয়ে পড়তে হয়। একা, নয় দলবেঁধে। অতিবিখ্যাত চারধাম ছাড়াও, হিমালয়ের এই অংশে আছে বেশকিছু আকর্ষণীয় বেড়ানোর জায়গা। তার মধ্যে অন্যতম পাউরি (Pauri Garhwal Uttarakhand)।
নির্জন পাহাড়ি জনপদটির কথা এখনও খুব বেশি মানুষের কানে পৌঁছয়নি। তবে যাঁরা পাউরি গেছেন, তাঁরা অনুভব করেছেন অঞ্চলটিতে ছড়িয়ে থাকা অপার শান্তি। নেই অকারণ শব্দদূষণ। তবে দিনের শুরুতে এবং শেষে জনপদ জুড়ে আছড়ে পড়ে পাখির কিচিরমিচির। তাতে অবশ্য একেবারেই দূষিত হয় না পরিবেশ। এই কিচিরমিচির নীরবতার নরম শরীরে অনবদ্য আবহের রং ছড়িয়ে দেয়।
শান্তি এবং সুন্দরের সহাবস্থান সচরাচর খুব বেশি ঘটে না। পাউরিতে স্বমহিমায় বিরাজ করছে দুটিই। বলা যায়, অঞ্চলটিতে রূপের পশরা সাজিয়ে বসেছেন প্রকৃতিদেবী। বারোমাস শীত-শীত ভাব। মনে হতে পারে এ-যেন কোনও স্বপ্নজগৎ। স্বর্গের মতো। সবুজে-সবুজে ছয়লাপ চারিদিক। রোডোডেনড্রন, পাইন, ফার, ওক, দেবদারু গাছে ঘেরা। সুউচ্চ পাহাড়ের নিচ পর্যন্ত নেমে গেছে খাড়াই ঢাল। সেখানে হয় চাষের কাজ। বিভিন্ন ধরনের ফসল।
আছে ছোট-বড় বেশ কয়েকটি সুন্দরী ঝর্না। এই দুরন্ত জলধারাগুলোর সামনে দাঁড়িয়ে কেটে যায় দীর্ঘ সময়। পাশাপাশি চোখের আরাম দেয় ভাসমান মেঘের ঠোঁটে আদর এঁকে দেওয়া শুভ্র পর্বতমালা।
কেদারনাথ শৃঙ্গ আর নন্দাদেবী দেখা যায় এখান থেকে। অপরূপ শোভা। দিনের সময় পরিবর্তনের সঙ্গে বদলে যায় রূপ। কখনও সাদা, কখনও হলুদ। উঁকি মারে গঙ্গোত্রী, বান্দরপুঁছ, স্বর্গারোহিণী, যোগীন, সুমেরু, হাতিপর্বত, সতোপন্থ, নীলকণ্ঠ, গৌরীপর্বত, ত্রিশূল পর্বত। আকাশ পরিষ্কার থাকলে তবেই মেলে দেখা। মেঘ-কুয়াশার চাদরে মোড়া থাকলে দূরের তো দূর, অনেক সময় কাছের জিনিসও গোচরে আসে না।
গাড়োয়ালের (Pauri Garhwal Uttarakhand) ছোট্ট শহর পাউরিতে এবং আশেপাশে আছে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান। তার মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য লক্ষ্মী-নারায়ণের মন্দির। এই মন্দিরের স্থাপত্য পর্যটকদের নজর কাড়ে। গভীর জঙ্গলের মধ্যে আছে বহু প্রাচীন কন্ডোলিয়া শিবমন্দির। এই মন্দিরে যাওয়ার আলোকালো পথে ছড়িয়ে রয়েছে রোমাঞ্চ। এ-ছাড়াও আছে কংকালেশ্বর শিবমন্দির, নাগদেবতা মন্দির। দেবভূমি গাড়োয়ালের এই অঞ্চলে চোখে পড়ে মসজিদ এবং চার্চও। আছে তিনটি ফুলের বাগান, খেলার মাঠ, পাবলিক লাইব্রেরি, ছোট বাজার। পর্যটকেরা দলবেঁধে ঘুরে দেখেন, কেউ কেউ পছন্দের জিনিস কেনেন। খিরসু, দুধাতোলি, দেবপ্রয়াগ, চৌখাম্বা ভিউপয়েন্ট পাউরি থেকে খুব কাছেই। কোথাও পাহাড়, কোথাও নদী। মন চাইলে ঘুরে আসাই যায়।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা নিয়ে উল্টো বয়ান দুই মন্ত্রকের
তবে অনেকেই এদিক-ওদিক না বেড়িয়ে পাউরির নীরবতার সৌন্দর্য উপভোগ করেন। সময় কাটান নিজের সঙ্গে। নিজেদের মধ্যে। ইচ্ছে হলে বিকেলের দিকে খোলামেলা প্রকৃতির বুকে আপনমনে হেঁটে বেড়ান। নিঃশ্বাস নেন প্রাণভরে।
সবমিলিয়ে পুজোর ছুটিতে কয়েকটা দিন পাউরিতে মন্দ কাটবে না। সঙ্গে নেবেন হালকা শীতের পোশাক, টর্চ, কোভিড ভ্যাকসিনের সার্টিফিকেটের জেরক্স, ওষুধ ইত্যাদি।
কীভাবে যাবেন?
উপাসনা এক্সপ্রেসে হাওড়া থেকে হরিদ্বার। হরিদ্বার থেকে বাসে মুসৌরি। মুসৌরি থেকে ধনৌলটি হয়ে পাউরি। আবার হরিদ্বার থেকে কোটদ্বার, ল্যান্সডাউন, খিরসু হয়েও পাউরি যাওয়া যায়। দুন এক্সপ্রেসে দেরাদুন পৌঁছে, সেখান থেকেও পাউরি যেতে পারেন। যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে চটপট রিজার্ভেশন সেরে ফেলুন।
কোথায় থাকবেন?
পর্যটকদের পছন্দের জায়গা গাড়োয়াল বিকাশ মণ্ডল নিগমের রেস্টহাউস। থাকার পাশাপাশি আছে খাওয়ার ব্যবস্থাও। খরচ খুব বেশি নয়। পাশাপাশি আছে ছোটখাটো হোটেল। আগে থেকে যোগাযোগ করে গেলেই ভাল। গড়পড়তা খাবারের বায়না না করে টেস্ট করতে পারেন স্থানীয় খাবার। আশা করি হতাশ হবেন না। স্থানীয় মানুষজন সহযোগিতা করার জন্য সদা-প্রস্তুত। সমস্যায় পড়লে বা কোনও কিছু জানার থাকলে নির্দ্বিধায় তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন।