প্রোমোতেই ছিল চমক। দেখা যায় এক সাদামাটা ভীতু মেয়ে, নাম জগদ্ধাত্রী। প্রথমবার পুজোর দায়িত্ব নিয়ে সামলাতে থতমত, হিমশিম। প্রতি মুহূর্তে সে ভয় পায়। অন্যদিকে ক্যামেরা হাতে নায়ক ব্যস্ত ছবি তুলতে। পরমুহূর্তেই কাহিনিতে ট্যুইস্ট। পুজোর জন্য গঙ্গাজল আনার কথা হতেই মেয়েটির মোবাইলে একটি অ্যালার্ট আসে, লেখা ‘গঙ্গাজল’। আর এটা পেয়েই শাড়ি আর স্নিকার্সে দৌড় লাগায় সে।
আরও পড়ুন-ডেঙ্গু-ম্যালেরিয়া রুখতে পদক্ষেপ
গঙ্গার ঘাটে পৌঁছয়, তবে জল আনতে নয়, দুষ্কৃতী দমনে। পিস্তল হাতে অনায়াস দক্ষতায় ভীতু মেয়েটি ঘায়েল করে অপরাধীদের আর শেষে ফের ফেরত আসে পুজোর জন্য গঙ্গাজল হাতে। প্রোমোতেই কৌতূহল উদ্রেক শুধু নয়, আশার আলো ছড়িয়েছিল, ‘জগদ্ধাত্রী’ একেবারেই অন্যরকম গল্প বলতে আসবে। ধারাবাহিকের প্রচলিত ফর্মুলা অনুযায়ী বাড়ির ভিতরকার লড়াই তো থাকবেই কিন্তু সেই সঙ্গে এই মেয়ে বাইরেও লড়বে এবং সে লড়াই ভীষণই ব্যতিক্রমী কারণ জগদ্ধাত্রী আসলে স্পেশ্যাল ক্রাইম ব্রাঞ্চ অফিসার! শুধু সে নয়, নায়ক স্বয়ম্ভুও একই পেশায়। দু’জনে বেস্ট ফ্রেন্ডও। কিন্তু স্বয়ম্ভুর চোখে মুগ্ধতা ও প্রেম থাকলেও জগদ্ধাত্রীর চোখে সে শুধুই বন্ধু। সুতরাং বন্ধু কীভাবে বিশেষ মানুষ হয়ে উঠবে, দর্শক সে গল্পও দেখতে পাবেন ধীরে ধীরে।
আরও পড়ুন-জওহরলাল নেহরুর কিছু উল্লেখযোগ্য উদ্ধৃতি
বাইরে দাপুটে অফিসার হলেও জগদ্ধাত্রী এ পরিচয় গোপন করে রাখে চাকরির স্বার্থেই। বাড়িতে সৎ মা ও সৎ বোন এবং ঠাকুমাকে নিয়ে তার সংসার। আদতে মা-মরা মেয়ে সে। সংসারের সমস্ত কাজ করেও কোনওভাবেই সৎ মায়ের মন পায় না। মুখ ঝামটা সহ্য করে নীরবে। ভালবাসার কেউ নেই কিন্তু সমালোচনার একশো জন আছে! তাই একটা নিজস্ব একাকীত্ব আছে তার। একমাত্র ঠাকুমার সঙ্গেই যেটুকু কথা, তিনিই আগলে রাখেন জগদ্ধাত্রীকে। সংসারের সব কাজ সামলে মূক ও বধিরদের জন্য একটা এনজিও চালায় সে।
আরও পড়ুন-সংস্কৃতকে রাষ্ট্রভাষা ঘোষণার দাবি খারিজ করল শীর্ষ আদালত
এই এনজিও-র মেয়েদের নিয়েই একদিন বড় বিপদে পড়ে জগদ্ধাত্রী। মূক ও বধির মেয়েদের মেলা দেখাতে নিয়ে যায় সে। এই সময়ই ঘটে এক অনভিপ্রেত ঘটনা। মেয়েগুলি পড়ে এক গুন্ডা দলের খপ্পরে। এই দলের পান্ডা কুখ্যাত গুন্ডা বাপ্পান। পুলিশের কাছে খবর পৌঁছলেও তারা আসতে আসতেই বোমাবাজি শুরু করে বাপ্পানের দলবল। মেয়েরা ভয়ে অস্থির হয়, কান্নাকাটি শুরু করে। এই সময় চেনা জগদ্ধাত্রীকে দেখা যায় অচেনা রূপে। দক্ষ হাতে গুন্ডা দমন করে মেয়েদের রক্ষা করে সে। জানা যায়, জগদ্ধাত্রী আসলে সেক্রেটিভ ইন্টেলিজেন্সের স্পেশ্যাল অফিসার ইন কমান্ড জগদ্ধাত্রী সান্যাল যার কোড নেম জ্যাজ।
আরও পড়ুন-সত্যাগ্রহে জেলে ছিলেন! মোদির দাবিকেই খারিজ করে দিল খোদ প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়
ধারাবাহিকে জুটি বেঁধেছেন নবাগতা অঙ্কিতা মল্লিক এবং সৌম্যদীপ মুখোপাধ্যায়। তাঁরা যথাক্রমে জগদ্ধাত্রী ও স্বয়ম্ভুর চরিত্রে। জি বাংলায় সৌম্যদীপের এটি প্রথম কাজ। সৌম্যদীপ জানিয়েছেন, “স্বয়ম্ভুর চরিত্রটা করতে দারুণ লাগছে এই কারণেই যে চরিত্রটায় অনেক শেড আছে। এমনিতে স্বয়ম্ভু ছটফটে লাইভলি একটা চরিত্র। স্মার্ট, স্পোর্টিং এই ছেলেটি নিজের প্যাশনকে গুরুত্ব দেয়। একইসঙ্গে মেজর একটি দায়িত্ব পালন করে। কারণ সে স্পেশ্যাল ক্রাইম ব্রাঞ্চের অফিসার। এসবের সঙ্গেই আছে এই ধারাবাহিকের নায়িকার সঙ্গে তার সম্পর্ক। দু’জনে বেস্ট ফ্রেন্ড হলেও জগদ্ধাত্রীর প্রতি তার নিজস্ব একটা ফিলিং রয়েছে। সব মিলিয়ে একটি চরিত্রের অনেকগুলো দিক। তাই কাজটা করতে খুবই ভাল লাগছে।” এই প্রথম বাংলা ধারাবাহিকে এত অ্যাকশন দেখা যাবে। এর জন্যও তৈরি হতে হয়েছে নায়ক-নায়িকাদ্বয়কে। সেই সুরই শোনা গেল নায়িকার কণ্ঠে। অঙ্কিতা জানালেন, “নায়িকাকে প্রায় দ্বৈত চরিত্রের মতো করেই দেখা যাবে। আর সেই চরিত্র দুটো ভিন্ন মেরুর। প্রচুর খাটতে হচ্ছে। শুধু মানসিকভাবে নিজেকে তৈরি করা নয়, ফিজিক্যাল ফিটনেস বজায় রাখাটাও একটা মারাত্মক ফ্যাক্টর। এই প্রথম বাংলা ধারাবাহিকে এত অ্যাকশন দেখা যাবে।’’
আরও পড়ুন-মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরে ঐতিহাসিক শোভাযাত্রা মহানগরের বুকে, দুর্গাপুজোর বিশ্বায়ন
স্নেহাশিস চক্রবর্তীর ভাবনা ও পরিচালনায় শুরু হয়েছে ‘জগদ্ধাত্রী’। নায়ক-নায়িকা দু’জনেই জানালেন, খুব টাফ কাজ আমাদের ঠিকই তবে সেটা সহজ করে দেবার জন্যই আছেন দাদা অর্থাৎ স্নেহাশিস নিজে। প্রতিটা ফ্রেম জলের মতো করে বুঝিয়ে দিচ্ছেন, সাহস আর উৎসাহ জোগাচ্ছেন। তাই ঘাবড়ে না গিয়ে বেশ উদ্দীপিত হয়ে কাজ করছি। ধারাবাহিকে আর একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে আছেন অভিনেতা তন্ময় আচার্য। তাঁর চরিত্রের নাম আয়ুষ। সম্পর্কে স্বয়ম্ভুর ভাই। ছটফটে এনার্জেটিক একটি চরিত্র। যদিও ধারাবাহিকে তাঁর ভূমিকা ক্রমশ প্রকাশ্য। ‘জগদ্ধাত্রী’র অন্যান্য অভিনেতা-অভিনেত্রীরা হলেন সোমা দে, বিপ্লব বন্দ্যোপাধ্যায়, সঞ্চারী দাস, কাঞ্চনা মৈত্র, রূপসা চক্রবর্তী, সহমিতা আচার্য, সোমাদ্রী চাকী, রোশনি ঘোষ, শোভন ভুঁইয়া প্রমুখ।
আরও পড়ুন-স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিককে তুলোধনা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের
‘উমা’ ধারাবাহিককে রিপ্লেস করে জায়গা দখল করেছে ‘জগদ্ধাত্রী’। তবে উল্টোদিকে প্রতিদ্বন্দ্বী চ্যানেলে আছে রেটিং চার্টে ওপরের দিকে থাকা ‘গাঁটছড়া’। তাই প্রতিযোগিতা শুরুর দিন থেকেই কঠিন। প্রথম সপ্তাহে যদিও দর্শকের মিশ্র প্রতিক্রিয়া। তবে কাহিনি যত গড়াবে তত আসবে নতুন নতুন ট্যুইস্ট। তাই চ্যানেল থেকে হাউস সকলেই আশাবাদী ‘জগদ্ধাত্রী’ই স্লট-জয়ী হবে! জগদ্ধাত্রী প্রচারিত হচ্ছে, সোম থেকে রবি, সন্ধ্যা সাতটায়।