সৌমালি বন্দ্যোপাধ্যায়: দশভুজার হাতে উঠবে অস্ত্র। তাই উলুবেড়িয়ার গুটিনাগুড়ি গ্রামের মানুষদের এখন একটুও বিশ্রাম নেওয়ার ফুরসত নেই। দিন রাত এক করে কাজ করেছেন এই গ্রামের শতাধিক পরিবারের সব সদস্যই। কারণ তাঁদের তৈরি অস্ত্রই যে বাংলার অধিকাংশ পুজো মণ্ডপে দুর্গা প্রতিমার হাতে দেখা যাবে। কয়েক পুরুষ ধরেই এই কাজ করে আসছেন হাওড়ার প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দারা। শুধু উপার্জনই নয়, তাঁদের হাতে তৈরি অস্ত্র দেবীর হাতে শোভা পাবে এই কথা ভেবেই আবেগাপ্লুত এই গ্রামের ৮ থেকে ৮০ সকলেই। বীরশিবপুর স্টেশন থেকে বোয়ালিয়া বাস স্ট্যান্ড হয়ে কিছুটা গেলেই গুটিনাগড়ি গ্রাম। যে গ্রামের প্রতিটি মানুষের ব্যস্ততা এখন তুঙ্গে। কারণ সময়মতো মা দুর্গার হাতে তুলে দিতে হবে অস্ত্র।
আরও পড়ুন-নামবদল মানেই ভোলবদল নয়
বাংলার দুর্গাপুজো ইউনেস্কোর হেরিটেজ স্বীকৃতি পাওয়ার পর এ-বছর কাজের বরাত এসেছে অনেকটাই বেশি। তাই ঠিক সময়ে অস্ত্র তৈরি করে কুমোরটুলি পৌঁছে দিয়ে আসতে হবে। সেই লক্ষ্যেই জোরকদমে কাজ করে চলেছেন এই গ্রামের মানুষগুলো। পুরুষ, মহিলা থেকে কচিকাঁচারাও বড়দের সঙ্গে কাজ করে চলেছেন। কলকাতার বড়বাজার থেকে টিনের পাতলা শিট কিনে এনে সেগুলিকে প্রথমে মাপ অনুযায়ী কাটা হয়। এরপর সেটাকে পিটিয়ে অস্ত্র তৈরি করা হয়। তার ওপর রঙ-তুলির মাধ্যমে তাঁদের শিল্প নৈপুণ্য ফুটিয়ে তুলছেন গ্রামবাসীরা। তাঁরা জানালেন সমস্ত অস্ত্র তাঁরা কুমোরটুলিতে দিয়ে আসেন। তাদের তৈরি অস্ত্র বাংলা ছাড়িয়ে ভিন রাজ্যের দুর্গা প্রতিমার হাতেও দেখা যায়। ফি-বছরই রথে তাঁদের কাজ শুরু হয়। এ-বছরও তার অন্যথা হয়নি। ঠিক সময় কাজ শেষ করে সমস্ত অস্ত্র কুমোরটুলিতে পৌঁছে দেওয়াই এখন এখানকার মানুষদের প্রধান লক্ষ্য। সেই উদ্দেশ্যেই দেবী দশভুজার অস্ত্র তৈরিতে একমনে কাজ করে চলেছেন গ্রামবাসীরা।