অংশুমান চক্রবর্তী: আজ শারদ বইপার্বণের শেষদিন। আশা করা যায়, রবীন্দ্র সদন-বাংলা আকাদেমি প্রাঙ্গণে উপচে পড়বে ভিড়। পুজোর মুখে বিশেষ ছাড়ে বই কেনার সুযোগ কে আর হাতছাড়া করতে চায়?
শুধু নতুন পোশাক নয়, পুজোয় চাই নতুন বইও। তাও আবার বিশেষ ছাড়ে। কোথায় পাবেন এমন সুবর্ণসুযোগ? শহর কলকাতায়, রবীন্দ্র সদন-বাংলা আকাদেমি প্রাঙ্গণে। চলছে ‘শারদ বইপার্বণ’। বেশ কয়েক বছর পর, আবার। আয়োজনে পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ড। সহযোগিতায় পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি।
আরও পড়ুন-পুজোর লেখালিখি
২ সেপ্টেম্বর হয়েছে সূচনা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছিলেন সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, রাজ্যের মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন, পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির সচিব বাসুদেব ঘোষ, সুধাংশুশেখর দে, ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ।
আয়োজন সম্পর্কে পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের সভাপতি সুধাংশুশেখর দে জানালেন, ‘প্রায় ৭০টি স্টল হয়েছে। অংশ নিচ্ছে কলকাতার প্রায় সমস্ত উল্লেখযোগ্য পুস্তক প্রকাশন সংস্থা। এর পাশাপাশি আছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের বিভিন্ন আকাদেমি এবং সাহিত্য অকাদেমির স্টল। ইংরেজি বইয়ের স্টলও আছে দুটি। প্রতিদিন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভিড় জমাচ্ছেন বহু মানুষ। বিক্রি হচ্ছে ভালই। এইসব দেখে শারদ বইপার্বণ বছর বছর করা যায় কিনা আমরা ভাবনাচিন্তা করছি। সঙ্গে মে মাসে বইবাজার। পশ্চিমবঙ্গ সরকার আমাদের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। এই ধরনের আয়োজনের সাফল্য প্রমাণ করে মানুষ যথেষ্ট পরিমাণে বই পড়ছে।’
তিনি আরও জানান, ‘প্রতিদিন একতারা মুক্তমঞ্চে আয়োজিত হচ্ছে আলোচনা, কবিতাপাঠ। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন স্বাগতালক্ষ্মী দাশগুপ্ত, প্রতুল মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। রবিবার শেষদিন গাইবেন কবীর সুমন।’
আরও পড়ুন-শিকাগো জয়ের দিনলিপি
এই আয়োজনে খুশি বিভিন্ন বয়সি বইপ্রেমীরা। প্রত্যেকেই কিনছেন পছন্দের বই। ক্লাসিক ছাড়াও গোয়েন্দা, ভূত, থ্রিলার, প্রেমের গল্পের দারুণ চাহিদা। পাশাপাশি ভাল বিক্রি হচ্ছে উপন্যাস, প্রবন্ধ, কবিতা-ছড়ার বই।
শারদ বইপার্বণ হাসি ফুটিয়েছে প্রকাশকদের মুখে। পত্রলেখার গুণেন শীল জানালেন, ‘আমরা মূলত প্রবন্ধের বই ছাপি। এখানে ভালই চাহিদা। বোদ্ধা পাঠকরা আসছেন। খুঁজে খুঁজে পছন্দের বই সংগ্রহ করছেন।’
রা প্রকাশন সংস্থার কর্ণধার ধীমান পাল বললেন, ‘জমে উঠেছে এবারের শারদ বইপার্বণ। আমাদের স্টলে বিক্রি মন্দ হচ্ছে না। বইয়ের পাশাপাশি বিক্রি হচ্ছে আমাদের পত্রিকার শারদীয়া সংখ্যা। সবমিলিয়ে অভিজ্ঞতা ভালই।’
দে’জ পাবলিশিং-এর পক্ষে সুদীপ্ত দে জানালেন, ‘আমাদের স্টলে সবসময় ভিড়। যাঁরা আসছেন, কিছু না কিছু কিনছেন। বিশেষ ছাড়ের সুযোগ নিচ্ছেন বহু পাঠক। সবমিলিয়ে বিক্রি ভালই হচ্ছে।’
আরও পড়ুন-ক্রীড়া দফতরের সাহায্য চায় পরিবার
বিজল্পের প্রসূন ভৌমিক বললেন, ‘পাঠকরা জানেন আমাদের স্টলে কী ধরনের বই পাওয়া যায়। তাঁরা এসে প্রয়োজনীয় বই কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।’
আনন্দ প্রকাশনের নিগমানন্দ মণ্ডলের সঙ্গে কথা হল। তিনি জানালেন, ‘আমাদের স্টলে গল্প উপন্যাসের চাহিদা বেশি। কিছু মানুষ কিনছেন, কিছু মানুষ পাতা উল্টিয়ে দেখছেন। হয়তো পরে কখনও কিনবেন। দু-একদিন বৃষ্টি সমস্যার সৃষ্টি করেছিল। এর বাইরে আর কোনও সমস্যা হয়নি। চমৎকার আয়োজন।’
মিত্র ও ঘোষ-এর নূর ইসলাম জানালেন, ‘মেলা দারুণ জমেছে। আমাদের স্টলে বিক্রি হচ্ছে ভালই। রবিবার আশা করি আরও ভাল হবে।’
খুশি পাঠকেরাও। বিধাননগরের কেতকীপ্রসাদ রায় ঘুরে দেখলেন বিভিন্ন স্টল। বললেন, ‘এসেছিলাম অন্য কাজে। হাতে কিছুটা সময় ছিল। ঘুরে দেখলাম বইপার্বণ। কিছু কিনলাম। কিছু দেখলাম। পরিচিত হলাম নতুন বইয়ের সঙ্গে। প্রাণভরে নিলাম গন্ধ। এই মেলায় সময় পেলে আবার আসব। নয়তো কলেজ স্ট্রিট তো আছেই।’
আরও পড়ুন-শান্ত বাংলাকে অশান্ত করতে চাইছে বাম-বিজেপি
হাওড়ার স্বপন নন্দী ঘুরে দেখলেন বইপার্বণ। তাঁর আগ্রহ কবিতা ও প্রবন্ধের বইয়ের প্রতি। এবারের আয়োজন দেখে দারুণ খুশি তিনি। জানালেন, ‘বইপার্বণ বছর বছর হোক। পাশাপাশি ফিরুক বইবাজার। এখানে বেশি ছাড়ে বই কেনা যায়। এটাই সুবিধা।’
আজ রবিবার। শারদ বইপার্বণের শেষদিন। আশা করা যায়, রবীন্দ্র সদন-বাংলা আকাদেমি প্রাঙ্গণে উপচে পড়বে ভিড়। পুজোর মুখে বিশেষ ছাড়ে বই কেনার সুযোগ কে আর হাতছাড়া করতে চায়?