প্রতিবেদন : একদিকে বিপুল লগ্নি, অন্যদিকে বিশাল কর্মসংস্থানের সুস্পষ্ট দিশা দেখালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee- TATA)। দুই মেদিনীপুরে তাঁর ৪ দিনের সফরে রাজ্যের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ নিঃসন্দেহে এক বিশেষ মাত্রা পেল। বিরোধীদের ধ্বংসাত্মক রাজনীতির জবাব দিতে উন্নয়নকেই বাজি ধরলেন মুখ্যমন্ত্রী। ঝটিকাসফরে তিনি যেমন একদিকে প্রশাসনিক বৈঠক এবং দলীয় বৈঠকে ব্যস্ত থেকেছেন ঠিক তেমনই উদ্বোধন এবং শিলান্যাস করেছেন একাধিক জেলার শতাধিক প্রকল্পের। বুধবার তাঁরই হাতে সূচনা হয়েছে দিঘার বহু প্রতীক্ষিত আন্তর্জাতিক মানের মেরিন ড্রাইভ। উন্মুক্ত হয়েছে পর্যটনের এক নতুন দিগন্ত। বৃহস্পতিবার উদ্বোধন একের পর এক প্রকল্পের, সেইসঙ্গে দিলেন চাকরি।
টাটার ৬০০ কোটির প্রকল্পের উদ্বোধন : খড়্গপুরে বৃহস্পতিবার তিনি (Mamata Banerjee- TATA) উদ্বোধন করলেন টাটা মেটালিক্সের সম্প্রসারিত কারখানার। ৬০০ কোটি টাকার প্রকল্প। কর্মসংস্থান হবে ১০০০ জনের। খড়্গপুর স্টেডিয়ামের এই অনুষ্ঠান থেকেই লগ্নি এবং বিনিয়োগের সুস্পষ্ট বার্তা দেন জননেত্রী। স্কিল ডেভেলপমেন্টে দেশের মধ্যে রাজ্যের শীর্ষস্থান অধিকারের কথা জানিয়ে তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, কর্মসংস্থানে বাংলাকে আগামী ৪-৫ বছরে এক নম্বর করবই। এ আমার তপস্যা, প্রতিজ্ঞা, শপথ। দিঘাকে আন্তর্জাতিক মানের পর্যটনকেন্দ্রের স্বীকৃতি দেওয়ার পাশাপাশি জঙ্গলমহলের সামগ্রিক উন্নয়নেও রাজ্যের সাফল্যের ছবি তুলে ধরতে গিয়ে তিনি জানান, সবমিলিয়ে মোট ৭২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে এখানে। বদলে যাবে সর্বাঙ্গীণ চেহারা।
সাত হাজার জনকে নিয়োগপত্র : শিল্পে সফল কর্মসংস্থানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শর্ত যে দক্ষতার উন্নয়ন তা এদিন বুঝিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। নিয়োগকারী এবং চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে সমন্বয়ের ক্ষেত্রে উৎকর্ষ বাংলার উপযোগিতা ব্যাখ্যা করে মুখ্যমন্ত্রী জানান, পুজোর আগেই ৩০ হাজার প্রশিক্ষণপ্রাপ্তকে চাকরি দেওয়া হবে। নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে ১০ হাজার জনকে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে ৭ হাজার চাকরিপ্রার্থীকে। শিলিগুড়িতে গিয়েও নিয়োগপত্র তুলে দেবেন তিনি। এসবই হচ্ছে স্কিল ডেভলপমেন্টে সফল প্রশিক্ষণের দৌলতে। সারা ভারতে এই প্রশিক্ষণে ২১ জন শীর্ষ স্থানাধিকারীর মধ্যে ৯ জনই বাংলার। টাটায় ৫০০ মহিলার কর্মসংস্থানের জন্য জেলাশাসকের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন তিনি।
বিকল্প কর্মসংস্থানের দিশা : বিকল্প কর্মসংস্থানের পথ দেখিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ, এক হাজার টাকা নিন। একটা কেটলি আর কয়েকটা মাটির ভাঁড় নিন। সঙ্গে কিছু বিস্কুট। পরের সপ্তাহে মাকে বলুন ঘুগনি করে দিতে। পরের সপ্তাহে তেলেভাজা। পুজো আসছে, দেখবেন লোককে দিয়ে কুলোতে পারবেন না। কোনও কাজই ছোট নয়। মুখ্যমন্ত্রীর আইডিয়া, কাশফুলে তুলো মিশিয়ে তৈরি করা যেতে পারে লেপ, বালিশ। ঠিক তেমনই কচুরিপানা শুকিয়ে তৈরি করা যেতে পারে ব্যাগ, থালা।
আরও পড়ুন-এবার বোমা ফাটালেন একদা শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ আরমান ভোলা
চাকরি আটকাতে বিরোধীদের রাজনীতি : বিরোধীদের এক হাত নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, দেউচা পাঁচামি বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম কোল ব্লক। এক লক্ষ মানুষের চাকরি হবে। কিন্তু তা আটকাতে রাজনীতি করছে সিপিএম-বিজেপি। কিন্তু আদিবাসীদের আর্থিক, সামাজিক এবং শিক্ষার বিকাশে পাশে দাঁড়িয়েছে রাজ্য।
বাইরে গিয়ে চাকরি নয় : শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়োগের প্রশ্নেও রাজ্যের সফল ভূমিকার কথা তুলে ধরে মুখ্যমন্ত্রী জানান, তাঁর সময়ে ১০ হাজার অধ্যাপক এবং ৮৯ হাজার শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে। চাকরিপ্রার্থীদের প্রতি তাঁর আহ্বান, বাইরে চাকরি করতে যেতে হবে না। এখানেই চাকরি করো। রেশন, স্বাস্থ্য সবই ফ্রি। এসবের সুবিধে নাও।
অনুমতি দিচ্ছে না কেন্দ্র : কেন্দ্রের বঞ্চনার বিরুদ্ধে এদিনও সরব হন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, বালুরঘাট, কোচবিহার, মালদায় জমি প্রস্তুত থাকা সত্ত্বেও কেন্দ্র অনুমতি না দেওয়ায় এয়ারপোর্ট করা সম্ভব হচ্ছে না। অনুমতি মিললে পুরুলিয়াতেও রাজ্য তৈরি করবে নতুন এয়ারপোর্ট। রাজ্যে ইতিমধ্যেই তৈরি হয়েছে ২৬ হেলিপ্যাড। অন্ডাল পেতে চলেছে আন্তর্জাতিক মান।
তরুণ প্রজন্মের প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর আহ্বান, বিত্তবান নয়, বিবেকবান হও।