আবার শীর্ষে বাংলা, শিক্ষাঙ্গনেও অগ্রগতি অপ্রতিরোধ্য

ঘন তমিস্রা কাটিয়ে ফের সূর্যোদয়ের সাক্ষী পশ্চিমবঙ্গ। সর্বক্ষেত্রে এগিয়ে থাকার জয়ধ্বজা। বাদ নেই বুনিয়াদি শিক্ষাঙ্গনও। কিন্তু কেন? কোন পথ ধরে এল এই সাফল্য? বিশ্লেষণ করে দেখলেন কার্তিক মান্না

Must read

বুনিয়াদি শিক্ষার ক্ষেত্রে সারা দেশে শীর্ষস্থান অর্জন করেছে পশ্চিমবঙ্গ (West Bengal)। একেবারে প্রধান মন্ত্রীর দপ্তর রাজ্যকে এই স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়েছে। কেন এই প্রথম শিরোপা রাজ্যের বুনিয়াদি শিক্ষার ক্ষেত্রে?
আমরা সবাই রাজ্যবাসী হিসেবে বিশেষ করে বিদ্যালয় শিক্ষক ও অভিভাবক এবং বিদ্যালয়ভিত্তিক বুনিয়াদি শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি হিসেবে এই প্রথম শিরোপা প্রাপ্তিতে যারপরনাই আনন্দিত ও গর্বিত।
কিন্তু কেন এই শিরোপালাভ, সে-প্রশ্নের উত্তর আমাদের আনন্দলাভে নিহিত নয়। তার উত্তর জানতে হলে, সঠিকভাবে সেই উত্তরের তাৎপর্য বুঝতে হলে, আমাদের ২০১১ সালের আগে, বর্তমান রাজ্য সরকার ক্ষমতায় আসার আগের অবস্থার দিকে তাকাতে হবে। স্মরণ করতে হবে সেই সময়কার হালহকিকত।

উত্তরাধিকারসূত্রে বুনিয়াদি শিক্ষার ক্ষেত্রে বামজমানা থেকে আমরা যা পেয়েছিলাম সেগুলি হল—
১) ভ্রান্ত শিক্ষানীতি;
২) দুর্বল পরিকাঠামোযুক্ত বিদ্যালয় ও বিদ্যালয় শ্রেণিকক্ষ;
৩) ত্রুটিপূর্ণ গতানুগতিক পাঠ্যপুস্তক, যা সারা বছর ধরে সরকারিভাবে বিলি করা হত কিন্তু শিক্ষাবর্ষের শুরুতেও পাওয়া যেত না;
৪) রাজনৈতিক হস্তক্ষেপযুক্ত বিশৃঙ্খল পরিচালন ব্যবস্থা;
৫) শ্রেণিকক্ষে ছাত্র-শিক্ষক অনুপাতে ভারসাম্যহীনতা; এবং
৬) শিক্ষার দুর্বল মান।

আরও পড়ুন-বিপুল লগ্নি, কর্মসংস্থান: মুখ্যমন্ত্রীর বাজি উন্নয়ন

এমত অবস্থায় ২০১১ সালে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পদে জনাশিস পেয়ে আসীন হলেন জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি দায়িত্বভার গ্রহণ করেই বুনিয়াদি শিক্ষাকে সার্বিকভাবে গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন এবং ছাত্রছাত্রীদের চাহিদাকে অগ্রাধিকার দিয়ে সরকারি শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজান।
পরিকাঠামোর প্রশ্নে নতুন নতুন অতিরিক্ত শ্রেণিকক্ষ নির্মাণ করা হল। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পড়ুয়াদের জন্য বিশেষ অনুষঙ্গযুক্ত শৌচাগার তৈরি করা হল। MDM প্রকল্প চালু থাকলেও বাম সরকার রাজ্যের সকল বিদ্যালয়ে তা চালু করেনি। এখন শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই নতুন পাঠ্যবই একই দিনে সারা রাজ্যে বিতরণ করা হয় যাকে বুক ডে বা বইদিবস বলে অভিহিত করা হয়। পড়ুয়াদের স্কুলের প্রতি আরও আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে স্কুল ব্যাগ আর জুতো, ও স্কুল ইউনিফর্ম (পোশাক) দেওয়া হয়। এইভাবে বিদ্যালয়ের অবস্থাকে অভিভাবকদের কাছে গ্রহণযোগ্য গড়ে তোলার ব্যবস্থা হয় এবং বুনিয়াদি শিক্ষার পড়ুয়াদের কাছে বিদ্যালয়কে ‘‘শিশুবান্ধব” করে তোলার আয়োজন হয়। ব্যাপক এবং নিবিড় শিক্ষক-প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। যার ফলে শ্রেণি-পঠন ও শ্রেণি-শিখনে সর্বাত্মক পরিবর্তন সংগঠিত হয়। এই কৃতিত্ব পুরোপুরি বর্তমান রাজ্য সরকারের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার ফল । এবং আমাদের প্রিয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আন্তরিকতা ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফসল।

ফলত, অভিভাবকদের কাছে রাজ্য সরকার পরিচালিত বুনিয়াদি শিক্ষা সার্বিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে। পাঠ্যবইগুলিকে এবং পাঠ্যবইগুলির বিষয়বস্তুকে ছড়া-ছবি-গল্প-চিহ্ন ও সংখ্যা দিয়ে সহজ ও সাবলীল করে তোলা হয়, যাতে করে শ্রেণিকক্ষের শিখন-প্রক্রিয়ায় পড়ুয়াদের কোনও ব্যাঘাত না ঘটে এবং সবধরনের পড়ুয়া পাঠ গ্রহণে অংশ করতে পারে। এই সঠিক পরিকল্পনা এবং বর্তমান সরকারের উদ্যোগের জন্যই বুনিয়াদি শিক্ষায় আমরা প্রথম স্থান অধিকার করতে পেরেছি। যে কেন্দ্রীয় সংস্থা এই সমীক্ষা পরিচালনা করেছিল সেটি হল NCERT (NATIONAL COUNCIL OF EDUCATIONAL RESEARCH AND TRAINING)। এই সংস্থা কেন্দ্রীয় সরকারের শিক্ষা দপ্তরের অধীনে। গত মার্চ মাসের ২০২২— তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রদের জন্য এই সমীক্ষা সর্বভারতীয় স্তরে পরিচালনা করা হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গের (West Bengal) মোট ৪৮৭টি বিদ্যালয়ে এই সমীক্ষা আয়োজিত হয়েছিল। লক্ষণীয় বিষয় সমীক্ষার জন্য বিদ্যালয় নির্বাচন করেছিল কেন্দ্রীয় সংস্থা NCERT নিজেই। আর উল্লেখ্যযোগ্য বিষয় হল যে, দু-বর্ণবিশিষ্ট শব্দ পড়ার ক্ষেত্রে দ্বিতীয় হয়েছে সর্বভারতীয় স্তরে এবং ১ থেকে ৯৯ পর্যন্ত সংখ্যা চেনার ক্ষেত্রে আমাদের রাজ্যের তৃতীয় শ্রেণির পড়ুয়ারা।
মূলত চারটি Parameter বা মাপকাঠির ভিত্তিতে এই সমীক্ষা মূল্যায়ন করা হয়েছিল।
১. পাঠ্যবইয়ের বিষয়বস্তু ওই নির্দিষ্ট শ্রেণির পড়ুয়া গড গড় করে রিডিং পড়তে পারে কি না।
২. নিজের মাতৃভাষায় বিষয়বস্তুগুলো পড়ুয়ারা লিখতে পারে কি না। সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে মোট ২০টি ভাষায় এই পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল।
৩. গণিতের ক্ষেত্রে সংখ্যা পড়তে পারে কি না এবং সংখ্যাগুলি লিখতে পারে কি না অথবা বুঝতে করতে পারে কি না।

সংক্ষেপে এই সমীক্ষার নাম দেওয়া হয়েছিল FLS (Foundational Learning Study)। লক্ষণীয় বিষয়, আমাদের রাজ্যের শিক্ষার্থীরা গণিত বা সংখ্যা-প্রশ্নে প্রথম স্থান অধিকার করেছে।
যখন অনেক বিভ্রান্তিমূলক প্রচার চালিয়ে একদল কুৎসা রটনাকারী রাজ্যের অগ্রগতিকে খাটো করে দেখানোর চেষ্টা করছে তখন গুজরাত, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে বাংলার মেধা মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। এই উৎকর্ষ কেন্দ্রের বিজেপি সরকার মান্যতা দিতে বাধ্য হয়েছে। স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ (West Bengal) সর্ব অর্থে ভারতসেরা।

Latest article