শুভাপ্রসন্ন ভট্টাচার্য আমার প্রথম প্রেম অবশ্যই ছবি আঁকা। বাবা ছিলেন ডাক্তার। পাঁচ-ছয় বছর বয়সে যেতাম বাবার চেম্বারে। যে সমস্ত রোগীরা আসতেন, আমি তাঁদের পোর্ট্রেট করতাম। টেবিলটা ছিল আমার তুলনায় অনেকটাই উঁচু। চেয়ারের উপর উঠে আমি নীল ডাউন হয়ে বসতাম এবং আঁকতাম। রোগীদের মুখ আঁকতে খুব ভাল লাগত। আনন্দ পেতাম। ওই বয়সেই মৃদু গর্ব অনুভব করতাম যে আমি ছবি আঁকতে পারি। প্রথম প্রেম আজীবন আমার সঙ্গে থেকে গেল। হয়ে গেল আমার বাঁচার একমাত্র অবলম্বন। আঁকা শিখেছি অনেক পরে। স্কুল জীবন পার করে বাড়ি থেকে পালিয়ে বাবার অমতে ভর্তি হয়েছি আর্ট কলেজে। সে ছিল এক অন্যরকম সময়। জীবনে অনেক স্ট্রাগল করতে হয়েছে। আঁকা আমাকে ছেড়ে যায়নি, আমিও ছাড়িনি আঁকাকে। দু’জনে হাতে হাত ধরে এগিয়ে চলেছি।
আরও পড়ুন-জলরং
ইন্দ্রাণী দত্ত আমার প্রথম প্রেম নাচ। ছোটবেলা থেকেই আমি নাচতে ভালবাসি। আমাদের আত্মীয়-স্বজনরা থাকতেন দূরে দূরে। তাঁরা আমাদের বাড়িতে এলে সবাই মিলে আনন্দ উৎসবে মেতে উঠতাম। আমাদের বাড়িটা ছিল গানের বাড়ি। আমার মা, কাকা, দিদিরা— সবাই গান গাইতেন। আত্মীয়-স্বজনরা এলে বসত গানের আসর। তাঁদের গানের সঙ্গে আপনমনে নাচ করতাম আমি। কেউ কিন্তু আমাকে নাচতে বলত না। আমি নাচতাম নিজে নিজেই। তখন আমার হয়তো তিন বছর বয়স। শেখার প্রশ্নই ওঠে না। নিজের মতো হাত ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নাচ করতাম। গানের শিল্পী বদলে বদলে যেতেন, ক্লান্ত হয়ে পড়তেন দর্শক এবং শ্রোতারা। আমাকে তাঁরা বলতেন নাচ বন্ধ করার কথা। কিন্তু কে শোনে কার কথা! আমি কিন্তু নাচ বন্ধ করতাম না। ক্লান্তও হতাম না। সবার গানের সঙ্গেই নাচ করতাম। চার বছর বয়সে আমি ভর্তি হই নাচে। দীর্ঘদিন শিখেছি। পরবর্তী সময়ে এসেছি অভিনয় জগতে। বেশ কয়েকটি সিনেমায় কাজ করেছি। পাশাপাশি আমার পছন্দের তালিকায় আছে বাগান করা এবং ঘর সাজানো। কিন্তু প্রথম প্রেম নাচ। এই নাচ আমার সঙ্গে ছিল, আছে এবং থাকবে।
আরও পড়ুন-সম্মান হল আয়নার মতো
অনুপম রায় আমার প্রথম প্রেম ফুটবল। জানি না কেন, খেলাটাকে আমি পাগলের মতো ভালবাসি। ছোটবেলায় পাড়ায় খেলেছি অল্পবিস্তর। টিভিতে বড় ম্যাচ থাকলে দেখার জন্য উন্মাদ হয়ে থাকতাম। এখনও রাত জেগে খেলা দেখি। এবার বিশ্বকাপে কাতার যাচ্ছি খেলা দেখতে। ফুটবলের প্রতি ভালবাসাটা কোনওদিন কমেনি। বরং দিন দিন বেড়েছে। আমার প্রিয় ফুটবলার জিদান। দারুণ লাগত ওঁর খেলা দেখতে। প্রিয় দল ছিল অবশ্য জার্মানি। ভালবাসতাম কলকাতার বিভিন্ন দলের খেলা দেখতেও। মোহনবাগান আমার প্রিয় দল। কৃশানু দে এবং বিকাশ পাঁজির জুটি ছিল আমার খুব পছন্দের। একটা সময় এল কেবল টিভি। বিশ্ব ফুটবল চলে এল আমাদের ঘরের মধ্যে। মহাতারকাদের খেলা দেখার জন্য আর চার বছর অপেক্ষা করতে হত না। দিয়েগো মারাদোনা, রুদ গুলিট, রাইকার্ড, ভ্যান বাস্তেনদের খেলা দেখতাম মন দিয়ে। ইউরোপিয়ান ফুটবলের প্রতি আমার দুর্বলতা বরাবরের। জার্মানির বিভিন্ন ফুটবলারের পাশাপাশি পরবর্তী সময়ে নেদারল্যান্ডের রবেনের খেলা আমার মন ছুঁয়ে যেত। ফুটবল নিয়ে গান বেঁধেছি, কবিতা লিখেছি। আজও আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, সব খেলার সেরা বাঙালির ফুটবল। আমার প্রথম প্রেম।