প্রতিবেদন : লর্ডসের মাঠে শেষ হল ২০ বছরের রূপকথার এক যাত্রাপথ। বাংলার প্রত্যন্ত গ্রামের একটি মেয়ে বিশ্ব ক্রিকেটকে শাসন করে গেলেন। এর পিছনে অনেক পরিশ্রম, লড়াইয়ের গল্প। চাকদহ স্টেশন, রানাঘাট লোকাল, শিয়ালদহ স্টেশন, বিবেকানন্দ পার্কের প্র্যাকটিস গ্রাউন্ড, বাবুঘাটের বাস স্ট্যান্ড— সবকিছুই ঝুলন গোস্বামীর উত্থানের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে। ক্রিকেটের মক্কায় শেষবারের মতো নীল জার্সিতে মাঠে নামলেন, জাতীয় সংগীতে গলা মেলালেন, রান আপে গিয়ে বোলিং স্পেল শুরু করলেন। অনুভূতি নিশ্চয়ই ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয় চাকদহ এক্সপ্রেসের।
বিদায়ী ম্যাচে হরমনপ্রীত কৌর (Harmanpreet Kaur- Jhulan Goswami) তাঁর ঝুলুদি’কে অভিনব সম্মান জানালেন। টস করতে নিয়ে গেলেন সঙ্গে করে। তার আগে আবেগঘন পরিবেশে টিম হাডলে সতীর্থদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন ঝুলন। তাঁকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলেন হরমনপ্রীত। আবেগতাড়িত ঝুলন বললেন, ‘‘সত্যিই, আজ আমার জীবনের বিশেষ মুহূর্ত। এই মুহূর্তটার জন্য ধন্যবাদ বিসিসিআই এবং ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গল (সিএবি)-কে। ধন্যবাদ আমার কোচেদের, পরিবার, অধিনায়কদের। শুরু করেছিলাম ২০০২ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে এবং শেষটাও করলাম সেই ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধেই। সব থেকে বড় ব্যাপার, বিদায়ী সিরিজ জিতেই শেষ করলাম।’’
আরও পড়ুন-কানাডায় ভারতীয়দের প্রতি বিদ্বেষ, সতর্ক করল কেন্দ্র
এমন একটা সময়ে ক্রিকেটকে কেরিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন যখন মেয়েদের ক্রিকেট নিয়ে অনেকেরই তেমন কোনও ধারণা ছিল না। শুধু ছেলেদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলে, ইডেন গার্ডেন্সে মেয়েদের বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ম্যাচে বল গার্ল হয়ে খেলাটাকে ভালবেসে ফেলেছিলেন সেদিনের কিশোরী ঝুলন। মহিলা ক্রিকেটের অভ্যুত্থান নিজের চোখে দেখেছেন। অবহেলায় থাকা মেয়েদের ক্রিকেটের ছবিটা বদলে দিতে পেরেছেন ঝুলনরা। তাই তো বিদায়ী ম্যাচে নামার আগে নির্দ্বিধায় বঙ্গললনা (Harmanpreet Kaur- Jhulan Goswami) বলে দিলেন, ‘‘ভারতে মেয়েদের ক্রিকেট ধীরে ধীরে শীর্ষে উঠেছে। এখন আমরা ঠিক রাস্তায় আছি। ভাল লাগছে, আমাদের দেখে অনুপ্রাণিত ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। এখন ক্রিকেটকেও কেরিয়ার করতে পারে মেয়েরা।’’ বর্ণময় কেরিয়ার শেষ করলেও ক্রিকেট থেকে ঝুলনদের অবসর হয় না। কথায় আছে ‘লেজেন্ড নেভার রিটায়ার’। নতুন ভূমিকায় মেয়েদের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারিকে দেখার অপেক্ষায় তাঁর ভক্তরা। আইপিএলেও তাঁকে দেখা যেতে পারে। রাস্তা খোলাই আছে।