বিশ শতকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন থিওডোর রুজভেল্ট (Theodore Roosevelt)। নিউ ইয়র্কের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম হয় রুজভেল্টের। ১৮৮০ সালে তিনি হার্ভার্ড কলেজ থেকে স্নাতক হওয়ার পর কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন নিয়ে পড়ার জন্য ভর্তি হন। এরপর মাত্র ২৩ বছর বয়সে তিনি নিউ ইয়র্ক স্টেট অ্যাসেমব্লিতে দু’দফায় নির্বাচিত হন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২৬তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে সামাজিক ও প্রশাসনিক সংস্কার-সহ বেশ কিছু জরুরি নীতি ও সর্বোপরি তাঁর বিদেশনীতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বের অন্যতম ‘সুপার পাওয়ার’ হিসেবে উঠে আসতে সাহায্য করেছে। রুজভেল্ট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের মধ্যে অগ্রগণ্য। তাঁর ব্যক্তিত্ব, প্রকৃতিপ্রেম, দৃঢ়চেতা ও সংস্কারমূলক মনোভাব তাঁকে বিপুল জনপ্রিয়তা এনে দেয়।
১৯০১ সালে মার্কিন রাষ্ট্রপতি উইলিয়াম ম্যাককিনলে আততায়ীর হাতে নিহত হওয়ার পর আচমকাই রুজভেল্টকে (Theodore Roosevelt) রাষ্ট্রপতি করা হয়। তাঁর নেতৃত্বে হোয়াইট হাউসে নতুন কর্মচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। ১৯০৪ সালে নিজ দক্ষতায় ফের একবার রাষ্ট্রপতি হন রুজভেল্ট। মালিকপক্ষ ও শ্রমিকপক্ষের তিক্ত সম্পর্কে ইতি টানতে তিনি সচেষ্ট হন। এ-ছাড়া তিনি পরিবেশপ্রেমী হিসেবে দেশের বেশ কয়েকটি জায়গা মিলিয়ে ২০ কোটি একর জায়গা জুড়ে জাতীয় অরণ্য, অভয়ারণ্য তৈরি এবং উদ্ভিদ ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে সচেষ্ট হন।
অসাধারণ বিদেশনীতি, জাপান-রাশিয়ার সঙ্গে বৈঠক করে দু’পক্ষের মধ্যে চলা যুদ্ধ বন্ধ করা ও পানামা খাল নির্মাণে তাঁর অবদানের জন্য থিওডোর রুজভেল্ট নোবেল শান্তি পুরস্কার পান। তিনিই প্রথম রাষ্ট্রপতি যিনি হোয়াইট হাউসে আফ্রো-আমেরিকান শিক্ষাবিদ টি ওয়াশিংটন ও তাঁর পরিবারবর্গকে আমন্ত্রণ জানিয়ে এক নজির সৃষ্টি করেন। তিনিই প্রথম রাষ্ট্রপতি যিনি ব্যক্তিগতভাবে কালো মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দেন।
আরও পড়ুন-বিমানবন্দরের আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ
রাষ্ট্রপতি পদে বসার পর তিনি ‘National Reclamation Act’ তৈরি করেন যা সেচের কাজে বিপুল সাফল্য এনে দেয়। পরিবেশ সংরক্ষণে তিনি বিশেষ জোর দেন। পেনসিলভেনিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে চলা খনি ধর্মঘটে তিনি শ্রমিক পক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করেন।
রাজনৈতিক-কূটনৈতিক উভয় স্তরেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তর শক্তি হিসেবে তুলে ধরার কাজ শুরু হয় রুজভেল্টের আমলেই। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরও বড় ভূমিকা হওয়া উচিত বলেও মনে করতেন তিনি। তাঁর সময়ে বেশ কিছু ইউরোপীয় দেশ লাতিন আমেরিকার দেশগুলি থেকে তাদের পাওনা আদায়ে জুলুম শুরু করলে রুজভেল্ট রুখে দাঁড়ান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় লাতিন দেশগুলি ঋণ শোধ করবে বলেও জানান তিনি। মোট কথা, দেশীয় সংস্কারের সঙ্গে-সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক তৈরি ও তার স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে চেষ্টা করেন।
শান্তির পক্ষে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে রুজভেল্টের পরিচিতি থাকলেও সাম্রাজ্যবাদী তকমাও তাঁর গায়ে সেঁটে গিয়েছিল। যার ফলস্বরূপ তাঁর নোবেল পুরস্কার পাওয়া নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরিতে উৎসাহী সুইডেন রুজভেল্টকে এই পুরস্কার পাইয়ে দিয়েছে বলেও অভিযোগ ওঠে।