দেবর্ষি মজুমদার, নানুর: নানুরে বৈষ্ণব পদাবলীর কবি চণ্ডীদাসের দুর্গাপুজো অভিনবত্বে ভরপুর। বিশালাক্ষী মন্দিরের পাশেই বহু প্রাচীন দুর্গামণ্ডপ। একচালা মৃন্ময়ী মূর্তি। বংশ পরম্পরায় গড়ে সেবাইত পরেশ দত্তের পরিবার। অন্যতম সেবাইত তথা তৃণমূল নানুর ব্লক সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্য বললেন, বোধনের দিন দাঁওতা পুকুরে নবপত্রিকা স্নান করিয়ে ঘট ভরে শূকরবলির রক্তে পা দিয়ে মন্দিরের উদ্দেশে যাত্রা করা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। জলঘড়ি দেখে পুজোর নির্ঘণ্ট তৈরি হয়। জলভর্তি মাটির মালসায় ডোবানো হয় ফুটো বাটি। ২৪ মিনিটে এক দণ্ড।
আরও পড়ুন-পুজোয় পর্যটক টানতে সেজেছে চিলকিগড়ের কনকদুর্গা মন্দির
নির্দিষ্ট দণ্ডের পর বাটি ডুবে গেলে সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় নবমীপুজো। নবমীর দিন বিশেষ বলির জন্য নিঃশব্দে অপেক্ষা করে সবাই। কারণ, মন্দিরের উপর এক শঙ্খচিল উড়ে গেলে তার চিৎকারের শব্দ শুনে, ঢাকঢোল বাজিয়ে শুরু হয় ছাগবলি। নানুরের তেলিরা বর্ধমানের কেতুগ্রাম থেকে আসে নবমীর দিন। ছাগবলির পর চলে যায়। ২৫টি ছাগবলি হয়। পাশেই সেবাইতদের আরেকটি দুর্গামণ্ডপ। সেখানেও পুজো হয়।
আরও পড়ুন-রেকর্ড জয়ে আসানসোলবাসীর অকুণ্ঠ প্রশংসা আপ্লুত শত্রুঘ্নের
নানুর বাস স্ট্যান্ড থেকে কিছুটা দূরে দেড়শো বছরেরও বেশি পুরনো দেবী বাঁশুলির মন্দির। উত্তরমুখে শিবমন্দির। পশ্চিমমুখে বাঁশুলি। দুটি মন্দিরই ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগের অধীন। এই চত্বরে ১৫টি শিবমন্দির। এক ফুট উঁচু দু কেজি ওজনের কষ্টিপাথরের চতুর্ভুজা বিশালাক্ষী। তাঁর এক হাতে চণ্ডী, এক হাতে জপমালা। বাঁ পা পদ্মের উপর, ডান পা শিবের উপর। লোকশ্রুতি, এখানেই চণ্ডীদাস ‘দেহি পদপল্লব মুদারম’ লিখেছিলেন। বর্তমানে মূল শরিক ৬টি। নানুরে কিছু বিখ্যাত পারিবারিক পুজোও রয়েছে।