চিত্তরঞ্জন খাঁড়া: যুবভারতীর ‘আঁধার’-এ ডুবল মোহনবাগান। সৌজন্যে দুই বঙ্গসন্তান। কলকাতায় এবারের আইএসএলের (ISL) প্রথম ম্যাচে এগিয়ে থেকেও চেন্নাইয়িন এফসি-র (ATK Mohun Bagan- Chennaiyin fc) কাছে ২-১ গোলে হার মোহনবাগানের। জয়সূচক গোল করে চেন্নাইয়িন এফসিকে জেতালেন মোহনবাগান অ্যাকাডেমি থেকে উঠে আসা বাঙালি স্ট্রাইকার রহিম আলি। অন্যদিকে, তিন কাঠির নিচে গ্লাভস হাতে চেন্নাইয়িনের রক্ষাকর্তা হয়ে দাঁড়ালেন কয়েক বছর আগে সবুজ-মেরুন জার্সি গায়ে আই লিগ জয়ী গোলরক্ষক দেবজিৎ মজুমদার। মোহন-সংসারের দুই প্রাক্তনী এবং টমাস ব্রাডিচের দলের সুপার সাব ঘানার স্ট্রাইকার কিয়েমো কারিকারিই চেন্নাইয়িনের ত্রাতা। ম্যাচের সেরার পুরস্কারও উঠল এই বিদেশির হাতে।
মোহনবাগানে (ATK Mohun Bagan- Chennaiyin fc) আঁধার নামার আগেই অন্ধকার নেমেছিল যুবভারতীতে। অতীতের আলো-বিভ্রাটের লজ্জা ফিরিয়ে স্টেডিয়ামের ১ নম্বর গেটের দিকে ফ্লাডলাইটের আলো নিভে যাওয়ায় প্রায় ১০ মিনিট খেলা বন্ধ থাকে। এই সময়ের আগে জুয়ান ফেরান্দোর দল ১-০ গোলে এগিয়ে ছিল। খেলার ২৭ মিনিটে অনবদ্য একটি প্রতি আক্রমণ থেকে এদিন অভিষেক হওয়া অস্ট্রেলীয় বিশ্বকাপার দিমিত্রি পেত্রাতোসের পাস থেকে নিখুঁত ফিনিশে গোল করেন মনবীর সিং। এই গোলটি ছাড়া প্রথমার্ধে আধিপত্য নিয়ে খেলেও সুযোগ নষ্টের অভ্যাস বজায় রাখেন মনবীর, হুগো, আশিক কুরুনিয়নরা।
আরও পড়ুন-দেবাশিসদের বিবৃতি, পাল্টা সৃঞ্জয়ের
বিরতির পর আলো বিভ্রাটের পরই যেন তাল কাটল। চেন্নাইয়িনের জার্মান কোচ ব্রাডিচ নামিয়ে দেন ঘানার স্ট্রাইকার কারিকারিকে। তিনি নামতেই বদলে গেল দু’বারের চ্যাম্পিয়ন দলটির খেলা। গতি, জায়গা বদল, চাতুর্যে বাগান রক্ষণে ত্রাসের সঞ্চার করলেন। ৬৪ মিনিটে তাঁকে আটকাতে না পেরে বক্সে ফাউল করলেন গোলকিপার বিশাল কাইথ। রেফারি পেনাল্টির নির্দেশ দিলে বুলেট শটে গোল করেন কারিকারি। এর পর ৮৩ মিনিটে রহিমের জয়সূচক গোলটি এল তাঁরই পাস থেকে। অনূর্ধ্ব ১৭ বিশ্বকাপ খেলা বাংলার রহিম নিখুঁত শটে বল জালে জড়িয়ে দেন। তার আগে দিমিত্রি, দীপক টাংরি, আশিস রাইদের তুলে লিস্টন কোলাসো, ফারদিন আলি মোল্লা, কার্ল ম্যাকহিউদের নামিয়ে ম্যাচে ফেরার চেষ্টা করেছিলেন মোহনবাগান কোচ। কিন্তু তাতে কোনও লাভ হয়নি। ডুরান্ড কাপ, এএফসি কাপের আন্তঃআঞ্চলিক সেমিফাইনালে বিপর্যয়ের পর আইএসএলের প্রথম ম্যাচেই হার। সেই একই রোগ সারার লক্ষন নেই। জুয়ানের দলের আক্রমণভাগ ডুবিয়ে চলেছে। গোল করলেও তা ধরে রাখতে পারছে না রক্ষণও। এমন কোনও স্ট্রাইকার নেই যিনি গোলটা চেনেন। গত মরশুম পর্যন্ত যে কাজটা করেছেন রয় কৃষ্ণ এবং ডেভিড উইলিয়ামস, তাঁদের ছেড়ে দিয়ে দলকে ডুবিয়ে চলেছেন স্প্যানিশ কোচ। এই ম্যাচ হেরে আরও চাপ বাড়ল জুয়ানের উপর। ম্যাচের পর গ্যালারি থেকে ক্ষোভ, কটুক্তি উড়ে এল মোহনবাগান কোচ, কর্মকর্তাদের দিকে। খেলার শেষ বাঁশি বাজার পরেও মাথা নিচু করে দীর্ঘক্ষণ মাঠে দাঁড়িয়ে থাকেন জুয়ান। নিশ্চয় নিজের ভবিষ্যৎ পড়ে ফেলতে পারছেন। ২৯ অক্টোবরের ডার্বিই হয়তো স্প্যানিশ কোচের শেষ লাইফ লাইন হতে যাচ্ছে। দলকে ছন্দে ফেরাতে পারলে ভাল, না হলে বিদায় নিশ্চিত। আইএসএলের প্রথম ম্যাচ হেরে জুয়ান অবশ্য সাফাই দিলেন। বললেন, ‘‘মাঠে আলো নিভে যাওয়ার খেলা যখন শুরু হল, তখন আমাদের মনসংযোগের ব্যাঘাত ঘটে। তাতেই দল ছন্দ হারিয়ে ফেলে।’’ এটিকে’র সঙ্গে সংযুক্তিকরণের পর এদিন প্রথম যুবভারতীতে খেলতে নেমেছিল মোহনবাগান। কিন্তু ‘রিমুভ এটিকে’ আন্দোলনের জের হোক বা অন্য কিছু, গ্যালারি অর্ধেকও ভরল না। মাত্র হাজার পঁচিশেক সমর্থক মাঠে এসেছিলেন। প্রিয় দলের খেলা দেখে যন্ত্রণা নিয়েই ফিরলেন তাঁরা।