প্রতিবেদন : পুত্রহারা এক বাবার আপসহীন লড়াইয়ের গল্প। চিকিৎসার গাফিলতিতে হারিয়েছিলেন পুত্রকে। পুত্র সপ্তর্ষির বয়স তখন মাত্র ৩৩। কিন্তু আর পাঁচজনের মতো ভেঙে পড়েননি পুত্রশোকে। চোয়াল শক্ত করে নিজেকে প্রস্তুত করেছিলেন এক অসম লড়াইয়ের জন্য। জলজ্যান্ত ছেলের মৃত্যুর বিচার চাই। এই দাবিতে শুরু হয় পুত্রহারা বাবা সুভাষ সরকারের (Subhas Sarkar) লড়াই। এই লড়াইয়ের জন্য ৭২ বছর বয়সে আইনও পাশ করেন। তারপর ছেলের মৃত্যুর বিচার চেয়ে শুরু করেন আইনি লড়াই। আর সেই লড়াইয়ে জিতে সুভাষ সরকার এখন তৃপ্ত। সালটা ২০১০। মাত্র ৩৩ বছরে মৃত্যু হয় পুত্র সপ্তর্ষির। চিকিৎসার গাফিলতিতে মৃত্যু হয়েছিল তাঁর, উঠেছিল এমনই অভিযোগ। দীর্ঘ লড়াইয়ের পরে অবশেষে ক্রেতা-সুরক্ষা আদালত চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগেই সিলমোহর দিয়েছে। সেই সঙ্গে অভিযুক্ত দুই চিকিৎসককে ২৫ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। ক্ষতিপূরণের মামলা ছাড়াও সংশ্লিষ্ট নার্সিংহোম ও চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলাও করেন সুভাষ সরকার। সেই মামলাতেও জমা পড়েছে চার্জশিট। টাকি হাউজ স্কুল থেকে মাধ্যমিক, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে ২০০৫-এ কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরিতে যোগ দেন সপ্তর্ষি সরকার। নয়ডায় পোস্টিং হয়। তখন থেকেই অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন তিনি। কিছুদিন চিকিৎসার পরে ভুবনেশ্বরে বদলি হলেও কলকাতায় ফিরে আসেন সপ্তর্ষি। ২০১০ সালের অগাস্টে তাঁকে গড়িয়াহাটের ডোভার মেডিক্যাল সেন্টার নামে একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়। সেখানেই ১১ অগাস্ট রাতে নার্সিংহোমের শৌচালয় থেকে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। প্রাথমিক ভাবে আত্মঘাতী বলা হলেও কীভাবে তিনি আত্মঘাতী হলেন, দড়ি কোথায় পেলেন, অভিযোগ তুলে মামলা করেন বাবা সুভাষ সরকার (Subhas Sarkar)। কিন্তু নিজের ছেলের মামলা নিজেই লড়বেন বলে ৬৯ বছর বয়সে শুরু করেন আইন পড়া। ৭২ বছর বয়সে আইন পাশ করেন। ২০১৯ সালে বিশেষ আবেদন করে নিজেই ছেলের মামলা লড়তে শুরু করেন সুভাষবাবু। কিন্তু করোনার জেরে দু’বছর দেরি হয়। অবশেষে সেপ্টেম্বরের শেষে ক্রেতা-সুরক্ষা আদালত চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ মেনে নিয়ে চিকিৎসক ধ্রুবজ্যোতি শী ও জ্যোতিরিন্দ্র নাগকে ২৫ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেয়।