প্রতিবেদন : বিজেপির বিরুদ্ধে এককাট্টা নন্দীগ্রাম (Vijaya Sammilani- Nandigram) দেখল জনজোয়ার। দলের নির্দেশে বিজয়া সম্মিলনী হলেও আসলে প্রতিটি সভা পরিণত হচ্ছে জনসমাবেশে। রবিবার নন্দীগ্রামেও তার ব্যতিক্রম হল না। জনপ্লাবনে ভাসল নন্দীগ্রাম। একই সঙ্গে আন্দোলনের ধাত্রীভূমি দেখল ঐক্যবদ্ধ তৃণমূল কংগ্রেস পরিবার, যেখানে নতুনদের পাশাপাশি পুরনোরাও আছেন সসম্মানে।
পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম এক নম্বর ব্লকে তৃণমূল কংগ্রেসের বিজয়া সম্মিলনীতে জনজোয়ার দেখে আপ্লুত তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক ও মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, এটা বিজয়া সম্মিলনী না বিজয় সমাবেশ বোঝা মুশকিল। মঞ্চে হাজির নতুন-পুরনো সব নেতৃত্ব। সৌমেন মহাপাত্র, শেখ সুফিয়ানের উপস্থিতিতে কুণাল বলেন, আমাদের পারিবারিক বিবাদের জন্য কোনও গদ্দার যেন সুযোগ না পেয়ে যায়। নতুন পুরনো নিয়ে আমরা ঐক্যবদ্ধ তৃণমূল বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করব। যাঁরা তৃণমূল কংগ্রেসকে ভোট দেননি তাঁদের বাড়ি গিয়ে বোঝাতে হবে, ফেরাতে হবে। সাফ কথা কুণাল ঘোষের।
এদিনের জমায়েত ছিল চোখে পড়ার মতো। যেদিকে দু’চোখ গিয়েছে শুধু সাধারণ মানুষ-সমর্থকদের ভিড়। জেলা সভাপতি সৌমেন মহাপাত্র এবং নন্দীগ্রাম-১-এর সভাপতি এলাকার তরুণ অধ্যাপক বাপ্পাদিত্য গর্গ বারবার বলেছেন, নন্দীগ্রাম আন্দোলনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঐতিহাসিক ভূমিকার কথা। এবং সর্বস্তরে কর্মীদের লড়াইয়ের কথা।
আরও পড়ুন-উৎসশ্রীতেও স্কচ
তৃণমূল মুখপাত্র বলেন, যেভাবে নন্দীগ্রামের ফল ঘোষণা হয়েছে তাতে বাংলার মানুষ জানে কী হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজও বাংলার নয়নের মণি। বিজেপির নীতির বিরুদ্ধে কৃষকরা রাস্তায় বসে আন্দোলন করেছেন, আর সেই আন্দোলনে জিপ গাড়ি তুলে দিয়ে পিষে মেরেছে বিজেপি মন্ত্রীর ছেলে। শুভেন্দু হঠাৎ খোল-করতাল বাজিয়ে হিন্দু হয়ে গেল! তাঁর কটাক্ষ, যখনই শুভেন্দু শুনেছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লোকশিল্পীদের ভাতা দেবেন তখনই ভাতার লোভে খোল-করতাল নিয়ে ময়দানে নেমে পড়েছে। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, শিশির অধিকারী মন্ত্রী হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দয়ায়। নন্দীগ্রামের ভূমিপুত্ররা আন্দোলন করেছেন আর নেতৃত্ব দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, নন্দীগ্রামের মানুষ তার সাক্ষী। ফিরোজা বিবি শহিদ মাতা আর এখন শুভেন্দু অধিকারী বলছে মুসলমানরা জেহাদি! এটা কখনও হতে পারে?
কুণালের কটাক্ষ, অধিকারী প্রাইভেট লিমিটেডের নানা রকমের ডিলারশিপ আছে এখন হিন্দুত্বের ডিলারশিপ নিয়েছে। বিজেপির দালালি করার জন্য দল বদল করে দোল খাচ্ছে। গদ্দার, বেইমান, শুভেন্দু নাকি খাঁটি হিন্দু!
মানুষের চোখ ফেরাতে হিন্দু-মুসলমান ভেদাভেদের রাজনীতি খেলছে। তাঁর সাফ কথা, কোনও ধর্ম শেখায় না আরেকটি ধর্মকে খারাপ বলতে। তৃণমূল এত বড় একটা দল, এত মানুষ, এত এমএলএ, এত সাংসদ— ভুল হতেই পারে। ভুল হলে শোধরাতে হবে আর অন্যায় করলে শাস্তি। তাঁর কথায়, কেন্দ্রের নেতা-নেত্রীরা যতই বলুন পশ্চিমবঙ্গে কাজ হয় না অথচ কেন্দ্রের রিপোর্ট যখন বেরোয় তখন দেখা যায় পশ্চিমবঙ্গ এক নম্বরে। পঞ্চায়েত দফতরের যে রিপোর্ট সম্প্রতি বেরিয়েছে তারও এক নম্বরে পশ্চিমবঙ্গ।
শুভেন্দু অধিকারী পরিবহণমন্ত্রী থাকাকালীন একাধিক বেসরকারি এজেন্সির মাধ্যমে ড্রাইভার, কন্ট্রাক্টর পরিবহণ দফতরে নিয়োগ হয়েছে। কেন নিয়োগ হল, কারা নিয়োগ করল, কোনও কিছুর বিনিময়ে নিয়োগ হল কিনা তদন্ত হবে, কারণ অভিযোগ আসছে। সাফ কথা কুণালের। নন্দীগ্রাম থেকে যে অভিযোগ আমরা পেয়েছি তার পুরোদস্তুর তদন্ত হবে। তার উত্তর দিতে হবে শুভেন্দু অধিকারীকে। শুভেন্দুর আর যা-ই থাক মেরুদণ্ড নেই। বাঘছাল পরা একটা বেড়াল, এভাবেই কটাক্ষ করলেন তৃণমূল মুখপাত্র।
এদিন নন্দীগ্রামের মাটিতে কুণাল বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবেগ এই নন্দীগ্রাম (Vijaya Sammilani- Nandigram)। সারা বিশ্ব তাকিয়ে থাকে এই নন্দীগ্রামের দিকে। আবার নতুন ইতিহাস গড়তে পারে নন্দীগ্রাম। তৃণমূলের ভোট তৃণমূলেরই থাকবে কিন্তু বিরোধীদের বাড়িতে ঢুকে বুঝিয়ে প্রত্যেকটা ভোট বার করে নিয়ে আসতে হবে বলে জানান তিনি। কুণাল বলেন, বিরোধী শূন্য পঞ্চায়েত চাই নন্দীগ্রামে।