সংবাদদাতা, কাটোয়া : নিমগাছকে কালীরূপে পুজো করা হয় কাটোয়া ৩ নং ওয়ার্ডের পাবনা কলোনিতে। এই ‘গাছ-কালী’ ‘ঝুপো-মা’ হিসেবে খ্যাত। কাটোয়া কলেজের পিছনে ভাগীরথী-অজয়ের সঙ্গমস্থলের কাছে জায়গাটি এক সময়ে ছিল ঘন ঝোপঝাড়ে ভর্তি। তার মাঝে বেড়ে ওঠা নিমগাছকে কালীরূপে পুজো করত মূলত ডাকাত ও জলদস্যুরা। ঝোপের মধ্যে কালী, তাই তিনি ‘ঝুপো-কালী’ নামেই খ্যাত। কাটোয়ার গবেষক রণদেব মুখোপাধ্যায়ের দাবি, পুজোটি মোটামুটি ২৫০ বছরের পুরনো।
আরও পড়ুন-তিন ধর্মের মিলনভূমি কিরীটেশ্বরী সতীপীঠ
শাক্তরা কালীজ্ঞানে গাছকে পুজো করছে, এটা সাধারণত দেখা যায় না। কাটোয়া লাগোয়া গঙ্গা আর অজয় ছিল পুরনো আমলে যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম। তাই জলদস্যুদের উপদ্রব ছিল সাঙ্ঘাতিক। কাটোয়াকে কেন্দ্র করে ভাগীরথী ও অজয় লাগোয়া ৪ জেলা বর্ধমান, বীরভূম, নদিয়া ও মুর্শিদাবাদের যাত্রীদের সর্বস্ব লুটকারী ঠ্যাঙাড়ে বাহিনীর এই উপদ্রবের কথা ইতিহাসে লেখা রয়েছে। এদের নাম ছিল ‘ভাগিনা’। দুর্গম জঙ্গলাকীর্ণ এলাকা হওয়ায় বিপ্লবীরাও আত্মগোপন করতেন। পুজোর সূচনা সম্পর্কে যা জানা গেল, ইংরেজরা ডাকাত বা জলদস্যুদের শায়েস্তা করতে নানা কর্মসূচি নিত। তেমনই এক অভিযানে কাটোয়ার নদী লাগোয়া জঙ্গলে এসে হাজির হয় পুলিশ।
আরও পড়ুন-ঝড়ের ধাক্কায় ভাঙল মণ্ডপ
পুলিশের তাড়া খেয়ে আর কালীর পায়ে জবা দিতে পারেনি এলাকার এক ডাকাত সর্দার। সেকথা জেনে মুষড়ে পড়েন তার মা। রাতেই ঝোপের মধ্যে থাকা নিমগাছকে কালীজ্ঞানে পুজো করার স্বপ্নাদেশ পান। দক্ষিণাকালী মন্ত্রে গাছটিকে শাড়ি পরিয়ে কালীর ছবি ও চাঁদমালা টানিয়ে প্রতি অমাবস্যায় পুজো হয়। দীপান্বিতায় পুজো হয় মহাসমারোহে। ১৭৭০ সালের বন্যায় অজয় কিছুটা উত্তরে ও ভাগীরথী কিছুটা দক্ষিণে সরে যাওয়ায় গড়ে ওঠা স্থলভূমিতে দেশভাগের পর বাংলাদেশের পাবনার একদল উদ্বাস্তু বসবাস শুরু করেন। তাই নাম পাবনা কলোনি। পাবনা কলোনির ‘ঝুপো-কালী’কে ঘিরে বছরভর মানত-মানসিকের বন্যা বয়। পুজোয় ভক্ত-পুণ্যার্থীর ঢল নামে।