সংবাদদাতা, বাঁকুড়া : কার্তিকী অমাবস্যায় অত্যন্ত নিষ্ঠা ও ভক্তি সহযোগে সারারাত ধরে ব্যানার্জি বাড়ির দক্ষিণাকালী পূজা সম্পন্ন হয়। এখানে পুজোর দিন মা কালীর সঙ্গে বাড়ির গৃহলক্ষ্মীরও পুজো করা হয়। এই পুজোর বয়স ৩০০ বছরেরও বেশি। বর্তমানে এই কালীপুজোর সেবাইতদের মধ্যে প্রবীণ সেবাইত বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, শোনা কথায়, সবার প্রথম গ্রামের শেষের দিকে শিবগোড়া বলে একটা বাস্তু এলাকায় তাঁদের পরিবারের সকলে মিলিত হয়ে প্রথম পুজো আরম্ভ করেন। কে করেন তা সঠিক ভাবে আমার জানা নেই। তখন ছিল ব্রিটিশ আমল।
আরও পড়ুন-রক্তাক্ত কিশোরীকে উদ্ধার না করে ভিডিও রেকর্ডিং করতে ব্যস্ত জনতা!
পরিবারের মেয়েদের পক্ষে অত রাতে গ্রামের শেষে ওই জায়গায় পুজো দিতে যাওয়াটা খুব কঠিন ছিল। ব্রিটিশ সেনা, পাইকদের আনাগোনা লেগেই ছিল। তাই অন্দরমহলের মেয়েদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই পুজো গ্রামের মধ্যে ব্যানার্জি পাড়ায় সরিয়ে নিয়ে আসা হয়। বর্তমানে যা আদি কালীপূজা নামে পরিচিত। এখন ব্যানার্জিদের দুটো কালীপুজো হয়। আমাদের পুজো ঠিক আদি কালীপুজোর তিন বছরের মধ্যে আরম্ভ হয়। আমি আমার বাবা স্বর্গীয় অরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে শুনেছি, তাঁর দাদু স্বর্গীয় ভৈরবচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর নিজের ভাই লক্ষ্মীবাবুর সঙ্গে মনোমালিন্য হওয়ায় কালীপূজার রাত্রে একটা হাত কেটে নিয়ে এসে, সেই রাতেই তাল পাতা, মাটি, খড়, দড়ি ইত্যাদি দিয়ে ছাউনি করে পুজো শুরু করেন।
আরও পড়ুন-চার্লসের ঘোড়া বিক্রি
দুটি পুজোই খুব সুন্দর ভাবে পরিবারের সকল লোকজন মিলে আমরা প্রতি বছর করে থাকি। আজ থেকে প্রায় ৩০-৪০ বছর আগেও কালীপূজার পরের দিন, পঞ্চ গ্রামের ভোজন হত। বর্তমানে মানুষের এত সংগতিও নেই সাথে মানসিকতার অভাব। এক রাতের কালীপুজো করতে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা সব মিলিয়ে খরচ হয়। দশ কেজি চালের অন্ন, ন’রকমের ভাজা, পায়েস, ডাল, শুক্তো, চাটনি দিয়ে মায়ের অন্নভোগ হয়। আবার পাকা ভোগ গাওয়া ঘিয়ের লুচি, মিষ্টি ইত্যাদিও মাকে দেওয়া হয়। সপ্তদশ শতকে বাংলায় কালীপূজার প্রমাণ পাওয়া যায়। নবদ্বীপের প্রসিদ্ধ তান্ত্রিক কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশকে বাংলার কালীমূর্তি ও কালীপুজোর প্রবর্তক বলে মনে করা হলেও, অষ্টাদশ শতকে নদিয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় কালীপুজোকে জনপ্রিয় করে তোলেন।