প্রতিবেদন : নন্দীগ্রামে রাতের অন্ধকারে হামলা চালিয়ে শহিদ-তর্পণ মঞ্চ ভাঙচুর, আগুন লাগানো, মারধর এমনকী তৃণমূল কর্মীকে খুনের চেষ্টাও করল শুভেন্দুর আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। সঙ্গে শুভেন্দুর শিবিরে যোগ দেওয়ার জন্য ‘দাদা’র নাম করে হুমকিও দিল তারা। ঘটনার প্রতিবাদে সকাল থেকে দিনভর রাস্তা অবরোধ করে স্থানীয় ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির সদস্য ও গ্রামবাসীরা। যদিও অ্যাম্বুলেন্স-সহ জরুরি পরিষেবার জন্য গাড়ি ছাড়া হয়। খবর পেয়ে পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুমোদনক্রমে নন্দীগ্রাম পৌঁছোন মন্ত্রী শশী পাঁজা এবং দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক ও মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তাঁরাও স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গে ধর্নায় বসেন। শামিল হন দুই মন্ত্রী অখিল গিরি, শিউলি সাহাও। ছিলেন জেলা সভাপতি সৌমেন মহাপাত্রও। দিনভর চলে প্রতিবাদ ও অবস্থান-বিক্ষোভ। বিকেলে ডিএসপি-সহ পুলিশকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার পর ধর্না তুলে নিলেও তৃণমূল নেতৃত্ব পুলিশকে সাফ জানিয়ে দেন, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা না হলে পরবর্তী পদক্ষেপ ঘোষণা করবে তৃণমূল কংগ্রেস।
আরও পড়ুন-গর্ভাবস্থায় মধুমেহ : লড়াই নাকি আত্মসমর্পণ
বৃহস্পতিবার নন্দীগ্রামের গোকুলনগরের করপল্লির শহিদ বেদির সামনে বাইরে থেকে আনা লোক জড়ো করে উসকানিমূলক কথাবার্তা ও হুমকি দিয়েছিল শুভেন্দু। তারপরেই গভীর রাতে আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটে। স্থানীয় তৃণমূল কর্মী গোপাল গায়েন বাধা দিতে গেলে তাঁকে বেধড়ক মারধর করা হয়। গোপাল খুনই হয়ে যেতেন, বরাতজোরে বেঁচে যান। এখনও কেন তিনি এবং আরও কয়েকজন স্থানীয় তৃণমূল কর্মী বিজেপিতে শুভেন্দুর শিবিরে আসেনি তা নিয়ে হুমকি দিয়ে বলা হয়, খুব বেড়েছিস, ‘দাদা’র নির্দেশ এদিকে চলে আয়, না হলে চরম বিপদ অপেক্ষা করছে৷ এই ঘটনার প্রতিবাদে সকাল থেকেই গোকুলনগরে রাস্তা অবরোধ শুরু করে শেখ সুফিয়ান, স্বদেশ দাস, বাপ্পাদিত্য গর্গ, জয়দেব দাস-সহ অন্যরা। গ্রামবাসীরাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগ দেন অবস্থান-বিক্ষোভে। উপস্থিত হন জেলা আইএনটিটিইউসির সভাপতি শিবনাথ সরকার, যুব সভাপতি অভিষেক দাসেরা। ভিড় ক্রমশ বাড়তেই থাকে।
আরও পড়ুন-ফের ধর্ষণ করে খুন উন্নাওতে, দলিত ছাত্রীর বিবস্ত্র দেহ উদ্ধার
অবস্থান বিক্ষোভের মাঝে দাঁড়িয়ে মন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুয়ারে সরকার এনেছেন। আর বিজেপি দুয়ারে গুন্ডা এনেছে। যে সিপিএমের হার্মাদরা একসময়ে এখানে খুন-জখম-সন্ত্রাস চালিয়েছিল তারাই আজ বিজেপির গুন্ডা হয়েছে। হার্মাদদের চরিত্র বদলায়নি, মুখোশ বদলেছে। শুভেন্দুকে তোপ দেগে কুণাল ঘোষ বলেন, জেনে রাখো শুভেন্দু, নন্দীগ্রামে কোনও তৃণমূল কর্মীর গায়ে হাত পড়লে আমরা ছেড়ে কথা বলব না। চার ঘণ্টার নোটিশে কলকাতা থেকে রাজ্য নেতৃত্ব এখানে পৌঁছবে। এরপর বিকেলে একটি বাড়ির উঠোনে ডিএসপি-সহ পুলিশ কর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন কুণাল ঘোষ, শশী পাঁজা, স্বদেশ দাস, শেখ সুফিয়ান, বাপ্পাদিত্য গর্গ। অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানানো হয় সেখানে— সঙ্গে সন্দেহভাজনদের বাড়িতে তল্লাশি। পুলিশ অফিসাররা কিছুটা সময় চান। শর্ত দেওয়া হয় আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে হবে। তা না হলে আগামী মঙ্গলবার পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবে দল। নন্দীগ্রামের ব্লক তৃণমূল সভাপতি বাপ্পাদিত্য গর্গ বলেন, গোকুলনগরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকার মানুষের মধ্যে যে আবেগ তৈরি হয়েছে, তা আমরা নন্দীগ্রামের সব বুথে ছড়িয়ে দেব।