প্রতিবেদন : ডিসেম্বরের সময়সীমা বেঁধে দিয়ে শনিবার পূর্ব মেদিনীপুরের রামনগরের জনসভা থেকে শুভেন্দুকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ করলেন আদিবাসী নেত্রী ও মন্ত্রী জঙ্গলকন্যা বীরবাহা হাঁসদা। বললেন, এর আগে আমার ঝাড়গ্রাম বিধানসভা এলাকায় আপনাকে দু-দু’বার ঢুকতে দিইনি। শুভেন্দু অধিকারী, আপনাকে আবার চ্যালেঞ্জ করছি, ডিসেম্বর মাসেই আমাকে তারিখ দিন। আপনি ঝাড়গ্রামে আসুন। আপনার সঙ্গে কোনও নিরাপত্তারক্ষী থাকবে না। আর আমিও একা যাব। আপনাকে যদি আটকে দিতে না পারি তাহলে আমার নাম বীরবাহা হাঁসদা নয়।
আরও পড়ুন-ছুটি বাতিল, রাত জেগে আবাস যোজনার কাজ
একইসঙ্গে দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক ও মুখপাত্র কুণাল ঘোষও চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, হিম্মত থাকলে একা ঝাড়গ্রামে পা রেখে দেখাও শুভেন্দু অধিকারী। বীরবাহা তারিখ চেয়েছে, পুলিশ থাকবে না। আমরাও কেউ যাব না, তুমিও সেন্ট্রাল ফোর্স নিয়ে যাবে না। চ্যালেঞ্জ অ্যাকসেপ্ট করে দেখাও। আর বীরবাহাকে বলব, এমন মন্তব্যের জন্য শুভেন্দু যতদিন না ক্ষমা চাইছে, ততদিন নিজের ব্যবহার করা জুতোগুলো বীরবাহা যেন ফেলে না দেন, শুভেন্দুকে দিয়ে সেই জুতো পালিশ করিয়ে ছাড়ব। এদিন রামনগর বাজার সংলগ্ন এলাকায় ছিল সাধারণ সভা। কিন্তু একটা সময় তা পরিণত হয় জনসমুদ্রে। বাইরে থেকে নয়, শুধুমাত্র রামনগরের স্থানীয় মানুষরা আসতেই সভায় এতটাই ভিড় হয় যে তিন ঘণ্টার জন্য দিঘা-কলকাতা রুট অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। রামনগরের বিভিন্ন মোড়ে ছিল জনতার স্রোত। যদিও স্থানীয় নেতৃত্ব সকলের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন। এদিন সভার আগে বালিসাই থেকে রামনগর পর্যন্ত চার কিলোমিটার দীর্ঘ বিশাল মিছিল হয়। বীরবাহা হাঁসদা, কুণাল ঘোষ, অখিল গিরি, সুপ্রকাশ গিরি-সহ জেলা তৃণমূলের নেতা-কর্মী-সমর্থকরা মিছিলে পা মেলান। ধামসা-মাদল ও অন্যান্য বাদ্যযন্ত্র নিয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে মিছিল ও সভায় আসেন দলের কর্মী-সমর্থকরা। কুণাল ঘোষ আগেই বলেছিলেন অখিল গিরির চ্যাপ্টার ক্লোজড। কারণ রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে তাঁর অযাচিত মন্তব্যের জন্য মুখ্যমন্ত্রী-দল-তিনি নিজে ক্ষমা চেয়েছেন। কিন্তু শুভেন্দু জঙ্গলকন্যা বীরবাহা হাঁসদাকে কুৎসিত আক্রমণ করার পরেও ক্ষমা চায়নি। বিজেপিও ক্ষমা চায়নি। তাই ওর চ্যাপ্টার ওপেন।
আরও পড়ুন-গো ব্যাক? মন্ত্রী সুভাষের লাথি দলীয় কর্মীকেই!
এদিন রামনগরের সভায় এ কথা বলে শুভেন্দুকে একহাত নেন কুণাল। মন্ত্রী অখিল গিরিকে বলেন, আপনি তো কারামন্ত্রী আপনি মাথা গরম করবেন না। শুধু জেলে একটা সেল খালি করে রাখুন। ঘাড় ধরে শুভেন্দুকে ওখানে ঢোকাব। বেইমান-ব্ল্যাকমেলার-তোলাবাজ-চোর-গদ্দার-কুলাঙ্গার তৃণমূল থেকে— নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে তুমি তোমার পরিবার সব নিয়ে পিঠে ছুরি মেরেছ৷ ইডি-সিবিআই থেকে বাঁচতে এখন বিজেপিতে গিয়ে বড় বড় কথা! কুণালের সংযোজন, ২০১৭ সালে আমি চিঠি লিখে বলেছিলাম, দ্রৌপদী মুর্মুকে রাষ্ট্রপতি করুন। সেদিন বিজেপি শোনেনি। আর হালে বিজেপি শুভেন্দু অধিকারী এখন বুকে দ্রৌপদী মুর্মুর ছবি নিয়ে ঘুরছে। যদি সাহস থাকে তবে বীরবাহার চ্যালেঞ্জ অ্যাকসেপ্ট করে দেখাক। আবার আগামী ৩ ডিসেম্বর কাঁথিতে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সভা করতে আসছেন শুনেই শুভেন্দু অধিকারী দড়ির পাজামা পরা ছেড়ে ইলাস্টিকের পায়জামা পরছে। আর মুখে ডিসেম্বরের বড় বড় চ্যালেঞ্জের কথা বলছে। ও কীসের বিরোধী দলনেতা? ও আসলে ‘বিরোধী ন্যাতা’। বাঘছাল পরা এই বিড়ালকে দিয়ে আর হবে না, দিল্লির বিজেপি নেতারা তা বুঝে গেছে। তাই দিলীপ বিজেপি, সুকান্ত বিজেপির পর আরও একজনকে পঞ্চায়েতের আগে আমদানি করেছে পদ্মশিবির। তিনি হলেন মিঠুন চক্রবর্তী। অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী বাংলার গর্ব। কিন্তু বেইমান, বিশ্বাসঘাতক রাজনীতিবিদ মিঠুন চক্রবর্তী বাংলার কলঙ্ক। অ্যালকেমিস্ট চিটফান্ড-এর ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর মিঠুন চক্রবর্তী। তাঁকে গ্রেফতার করা উচিত। কেন গ্রেফতার করা হবে না, তিনি স্টার বলে? কোর্ট অর্ডার দিয়েছে, হাতি চলাচলের জায়গা, তাই হোটেল করা যাবে না। সেসব বাঁচাতে তাই এখন বিজেপি করছে। এসব আমরা বুঝি।
আরও পড়ুন-অভিষেকের সঙ্গে বৈঠকের পরেই পঞ্চায়েত প্রস্তুতি, শুক্রবারেই বীরভূমে প্রথম সভা
এদিনের জনসভায় অখিল গিরি, সুপ্রকাশ গিরি ছাড়াও অন্যান্য নেতৃত্বের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কাঁথি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তরুণকুমার মাইতি, জেলার চেয়ারম্যান অভিজিৎ দাস, জেলা সম্পাদক তরুণ জানা, জেলা সংখ্যালঘু সেলের সভাপতি আনোয়ার উদ্দিন, মহিলা তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভানেত্রী মধুরিমা মণ্ডল, জেলা আইএনটিটিইউসির সভাপতি বিকাশ বেজ, রামনগর ১ ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি নিতাইচরণ সার, রামনগর ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শম্পা মহাপাত্র প্রমুখ।