জানেন কি ?
কাশি মানবদেহের ফুসফুস এবং শ্বাসনালিকে প্রতিরক্ষা দেয়। এটি একটি প্রতিরক্ষামূলক প্রতিবর্ত ক্রিয়া। যদি কখনও ধুলোবালি, ধোঁয়া বা অন্যকিছু আমাদের শ্বাসনালিতে প্রবেশ করে সঙ্গে সঙ্গে কাশি শুরু হয়ে যায়। আর কাশির মাধ্যমে সেগুলোই শ্বাসনালি থেকে বেরিয়ে যায়। কাশি এভাবেই শ্বাসনালিকে পরিষ্কার রাখে।
আরও পড়ুন-‘তোমরাই দেশের ভবিষ্যত, কখনও ভয় পাবে না’ প্রাক-বড়দিনে শিশুদের বার্তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের
কাশতে হবে নইলে বিপদ
আসলে মানুষ কাশতে না পারলে পুরো বিষয়টাই বিপজ্জনক হয়ে যেতে পারত। কাশি না থাকলে বুকের মধ্যে কফ বা অন্য কোনও খাদ্যকণা প্রবেশ করে প্রতিনিয়তই মারাত্মক সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকত।
কাশি শুরু হতে পারে যে কোনও ধরনের বুকের সংক্রমণ থেকে। খাদ্যকণা বা ধুলো, ধোঁয়া ভুল করে শ্বাসনালিতে ঢুকে গেলে কাশির উদ্রেক হয়। তবে বেশির ভাগ মানুষই প্রথম দিকে এই কাশিকে গুরুত্ব দিতে চান না। অবহেলা করেন। নিজেই কাফ সিরাপ কিনে খেয়ে নেন।
হালকা হলেও সমস্যা গভীরে
কাশি আপাতদৃষ্টিতে হালকাফুলকা রোগ মনে হলেও অত্যধিক কাশির কারণে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হতে পারে, বমি হতে পারে, মাথাঘোরা, ইউরিন ধরে রাখতে না পারা, পাঁজরের তলায় ব্যথা, এমনকী হার্নিয়া সমস্যাও দেখা দিতে পারে। একটানা হতে থাকলে কাশি হয়ে ওঠে শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্লান্তিকর। কাশি গেড়ে বসলে নিউমোনিয়াতে টার্ন করতে পারে।
কারণে-অকারণে কাশি
স্বল্পস্থায়ী কাশির কারণ ভাইরাস সংক্রমণ। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই ধরনের কাশি মোটামুটি দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে কমে যায়। এগুলোর মধ্যে পড়ে ঊর্ধ্ব শ্বাসনালির সংক্রমণ যেমন, সাধারণ সর্দি বা ফ্লু, ইনফ্লুয়েঞ্জা, হুপিং কাশি ল্যারিঞ্জাইটিস, সাইনুসাইটিস ইত্যাদি। নিম্ন শ্বাসনালির সংক্রমণ যেমন নিউমোনিয়া বা অ্যাকিউট ব্রঙ্কাইটিস, অ্যালার্জিজনিত নাকের প্রদাহ।
আরও পড়ুন-বাংলার ধাঁচে মেঘালয়ে মহিলাদের জন্য থাকবে ‘উই কার্ড’, ঘোষণা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
ভাইরাল সংক্রমণের জন্য যে কাশি হয় তা প্রায় দু’মাস অবধি থাকতে পারে।
এগুলি ছাড়াও টিউবারকুলোসিস বা যক্ষ্মা, হৃদরোগের সমস্যা, ফুসফুসে থাকা ক্যানসারের কারণেও কাশি হয়। এই ধরনের কাশি মাসের পর মাস দীর্ঘস্থায়ী হয়ে থাকতে পারে।
কারা দায়ী
যে যে ব্যাকটিরিয়া বা ভাইরাস কাশির সংক্রমণের জন্য দায়ী সেগুলো হল রাইনোভাইরাস, প্যারাইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস, ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস অ্যাডিনোভাইরাস, রেসপিরেটরি সিনসিশিয়াল ভাইরাস ইত্যাদি।
আরও পড়ুন-‘সবাইকে ভাষা ও জাতি দিয়ে ভাগ করবেন না’ মেঘালয়ে নতুন স্বপ্নের সন্ধান দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
কাশির কারণ যক্ষ্মা হতে পারে
ভারতবর্ষের অন্যতম প্রধান দীর্ঘস্থায়ী কাশির কারণ কিন্তু টিবি বা টিউবারকুলোস বা যক্ষ্মা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যক্ষ্মা হলে কাশি ছাড়াও হালকা জ্বর এবং কফও থাকে। কাশির সঙ্গে রক্তও বেরোয় অনেক ক্ষেত্রে।
শুকনো কাশি
সারা বছর ধরে শুকনো কাশির কারণ হৃদরোগের সমস্যা হতেই পারে বা কোনও দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা যেমন অ্যাজমা, ব্রঙ্কিয়েক্টাসিস বা ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ বা সিওপিডি। অনেক সময় দীর্ঘদিন ধূমপান করলে, অ্যালার্জি হলে বা গ্যাস্ট্রো ইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজের জন্য শুকনো কাশি হয়।
আরও পড়ুন-‘সে সিবিআই কাস্টডিতে কী করে মারা গেল? আমরা ইস্যুটা তুলছিলাম’ লালনের মৃত্যু নিয়ে সরব মুখ্যমন্ত্রী
শীতে কাশি বাড়েই
দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা যেমন হাঁপানি, ব্রঙ্কিয়েক্টাসিস বা সিওপিডি-এর প্রকোপ বাড়ার কারণে শীতকালেই কাশি বাড়ে।
শীতে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ কমে যাওয়ায় ধুলোকণা বেশি ওড়ে, যার ফলে যেসব মানুষ এই সব রোগে আগে থেকেই আক্রান্ত তাঁদের আরও বাড়াবাড়ি হয়ে যায়।
এছাড়া শীতকালে জীবাণুদের প্রকোপও যায় বেড়ে। তাই সেক্ষেত্রেও দীর্ঘমেয়াদি অসুখে ভুগছেন যেসব রোগী, তাঁদের কাশি বেড়ে যায়।
একটু সতর্কতা
বয়স্ক বা বাচ্চাদের কাশি হলে তা বিশেষভাবে নজর দেওয়া উচিত। সামান্য কাশিও চেস্ট ইনফেকশন থেকে হতে পারে কারণ অনেক সময় সংক্রমণ হয়েছে তা উপর থেকে বোঝা যায় না এবং সময়মতো চিকিৎসা না করলে তা নিউমোনিয়ার আকার ধারণ করতে পারে।
কাশির চিকিৎসায় ঘরে গরম জলের গার্গল এবং ভাপ নেওয়া নিয়ে শুরু করা যেতে পারে। তবে এর পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শ জরুরি।
ঠিক সময় ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে কাফ সিরাপ ও অ্যান্টিবায়োটিকের সাহায্যে কাশি কমানো সম্ভব।
আরও পড়ুন-‘সে সিবিআই কাস্টডিতে কী করে মারা গেল? আমরা ইস্যুটা তুলছিলাম’ লালনের মৃত্যু নিয়ে সরব মুখ্যমন্ত্রী
চিকিৎসা করার পরেও কাশির সমস্যা না কমলে চেস্ট এক্স-রে, কফ ও রক্তের পরীক্ষা করা দরকার।
আর জি কর বা অন্য যে কোনও সরকারি হাসপাতালেই এই সবরকম কাশির চিকিৎসার জন্য রয়েছে মেডিসিন, বক্ষ বিভাগ বা ইমার্জেন্সি বিভাগ যেখানে বিনামূল্যে রোগ নিরাময় করা হয়।
আরও পড়ুন-পুলিশকে নির্দেশ, আবাস যোজনার সমীক্ষায় সমস্যা না হয় আশা-অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের
কাশির ঘরোয়া টোটকা
কাশির উপশমে যষ্টিমধু খুব কার্যকরী। জলে যষ্টিমধু ফুটিয়ে ওর মধ্যে মধু, লেবুর রস মেশান এবং আবার সামান্য ফুটিয়ে ওই জলটা ঠান্ডা করে খান রোজ।
আনারসে রয়েছে ব্রোমেলাইন, যা গলায় জমে থাকা মিউকাসকে পরিষ্কার করে। মিউকাসের জন্যই কাশি হয়।
যে কোনওরকম সর্দিকাশি, ঋতু পরিবর্তনজনিত সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে এলাচের জুড়ি নেই। এলাচে রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। এটি জীবাণুনাশক। এলাচ দিয়ে তৈরি লিকার চা খান নিয়মিত। চার টুকরো ছোট এলাচ, আধচামচ বিটনুন, আধচামচ ঘি মিশিয়ে ওটা দিনে তিন-চারবার খান। ছোট এলাচ মুখে রাখুন, শুকনো কাশি থেকেও মুক্তি মিলবে। হুপিং কাশি বা ফুসফুসের সংক্রমণে এলাচ খুব উপকারী।
একগ্লাস হালকা গরম জলে এক চামচ গোলমরিচ এবং এক টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে দিনে দু’বার খেলে কাশির দ্রুত উপশম হবে।
রসুন কাশি সারাতে খুব কার্যকরী। রসুনে থাকা অ্যালিসিন জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়ে। রসুন শুকনো কাশি দূর করে। কাঁচা রসুন রোজ খেতে পারেন। পেটের সমস্যা থাকলে হালকা ভেজে নিন।
আরও পড়ুন-আজ জিতলেই ফাইনালে মেসি
তুলসীপাতা লিকার চায়ে ফুটিয়ে খান রোজ সকালে, এতে খুসখুসে কাশি বা গলায় কাশি থাকলে অনেকটা কমবে।
তুলসীপাতা, মধু, লবঙ্গ একসঙ্গে ফুটিয়ে নিন, কুসুম গরম অবস্থায় খান দিনে অন্তত তিনবার।
এক চা চামচ গুঁড়ো হলুদ, দশটি গোলমরিচ, এক চামচ মধু এক গ্লাস জলে মিশিয়ে ফুটিয়ে নিন। ওই জলটা নিয়মিত খান সকালে।
বাড়িতে শিউলিফুলের গাছ থাকলে সকালে সেই গাছের দু’তিনটে পাতা তুলে নিন। ভাল করে ধুয়ে চিবিয়ে রসটা খেয়ে নিন, ছিবড়েটা ফেলে দিন। এই পাতার স্বাদ তেতো হলেও খুব উপকারী। পরপর কয়েকদিন খেলেই কাশির উপশম হবেই।
অ্যাপেল সিডার ভিনিগার দু’চামচ এবং মধু এক চামচ ঈষদুষ্ণ জলে মিশিয়ে খান। গলাব্যথা এবং কাশি দুই-ই কমবে।