মণীশ কীর্তনীয়া, শিলং: ২০২৩-এ নতুন বছরে আবার মেঘালয়ে আসবেন নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মেঘালয়ে দলের নেতা ড. মুকুল সাংমা ও রাজ্য সভাপতি চার্লস পিনগ্রোপের অনুরোধে আগামী জানুয়ারি মাসে এই মেঘ রাজ্যের গারোতে (Meghalaya- Garo- Abhishek Banerjee) কয়েকটি জনসভা করবেন তৃণমূল সুপ্রিমো। থাকবেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। মেঘালয় সফর শেষে বুধবার সকালে কলকাতা রওনা হওয়ার আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে পাইনউড হোটেলে দেখা করতে আসেন মেঘালয় তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা ও এই রাজ্যে বিরোধী দলনেতা ড. মুকুল সাংমা ও রাজ্য সভাপতি চার্লস পিনগ্রোপ। এই দু’জনের সঙ্গে প্রাক নির্বাচনী প্রচার নিয়ে বেশ কিছু নিয়ে আলোচনা করেন নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Meghalaya- Garo- Abhishek Banerjee)। সেখানেই সিদ্ধান্ত হয় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সময়-সুযোগ অনুযায়ী আগামী জানুয়ারি মাসে মেঘালয়ে নির্বাচনী প্রচারে আসবেন তৃণমূল প্রার্থীদের জন্য।
আরও পড়ুন-আরও কি মর্মান্তিক কিছু আছে? শুভেন্দুর ‘ডিসেম্বর ধামাকা’ নিয়ে মুখ খুললেন অভিষেক
এদিন শিলং বিমানবন্দরে আচমকাই একটি দোকানে ঢুকে পড়েন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পছন্দ হওয়ায় এখানকার কয়েকটি ট্রাডিশনাল জিনিস কেনেন তিনি। মেঘালয় সফর সেরে দলনেত্রীর সঙ্গেই কলকাতা ফিরে যান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় এই সফর নিয়ে তিনি লেখেন, দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দু’দিনের সফরে যে অফুরান ভালবাসা ও আন্তরিকতা পেলাম তাতে আমি অভিভূত। মুকুল সাংমা, চার্লস পিনগ্রোপ সহ মেঘালয় তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব দুর্দান্ত কাজ করছে। আগামী দিনে আমরা মেঘালয়বাসীর দাবির জন্য তাঁদের উন্নয়নের জন্য একসঙ্গে লড়াই করব ও এই জনতা বিরোধী দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারকে গোড়া থেকে উপড়ে ফেলব। মেঘালয়ে পরিবর্তন হবেই।
প্রাথমিকভাবে গারো পার্বত্য এলাকার মেন্দিপাথর সহ ৬০ আসনের মেঘালয় বিধানসভায় এই মুহূর্তে বিজেপির মাত্র ৩ জন বিধায়ক রয়েছে। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার ফলে বর্তমান কনরাড সাংমা সরকারের বিরুদ্ধে অ্যান্টি ইনকামবেন্সি ফ্যাক্টর, দুর্নীতি সহ একাধিক এমন বিষয় রয়েছে যা আগামী বিধানসভা নির্বাচনে সরকারকে বিপাকে ফেলবে। সঙ্গে রয়েছে বেকারত্ব, ইন্ডাস্ট্রি না থাকা, সীমান্ত সমস্যার মতো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ও জ্বলন্ত ইস্যু। সব মিলিয়ে বর্তমান মেঘালয় সরকার দাঁড়িয়ে রয়েছে সরু সুতোর উপরে। এই পরিস্থিতিতে নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মেঘালয় সফর দলের কর্মী-সমর্থক তো বটেই, এই রাজ্যের আমজনতাও যে উৎসাহ দেখিয়েছে তাতে এনপিপি- বিজেপি সহ বাকি রাজনৈতিক দলগুলি অশনি সংকেত দেখছে।
এই রাজ্যে নির্বাচনের আর মাত্র ২ মাস বাকি। আর কিছুদিনের মধ্যেই নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হয়ে যাবে। মুকুল সাংমাকে মুখ করেই যে তৃণমূল এগোবে সেটা নিজেই পরিষ্কার করে দিয়েছেন স্বয়ং নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গারো, খাসি, জয়ন্তিয়া সহ এই পার্বত্য রাজ্যের ৬০টি কেন্দ্রেই প্রার্থী দেবে তৃণমূল কংগ্রেস। মেঘালয়ের বর্তমান রাজনৈতিক পটভূমিতে দাঁড়িয়ে তৃণমূল কংগ্রেস নিঃসন্দেহে ডিসাইডিং ফ্যাক্টর হতে চলেছে। মেঘালয় সফর শেষে কলকাতা রওনা হওয়ার আগে নেত্রী মমতা বলেন, এই রাজ্যে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে তিনি আশাবাদী। তাঁর কথায়, মানুষ তো আশা করবেই। আশা নিয়েই তো মানুষ বাঁচে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মেঘালয় তৃণমূল নেতৃত্বকে নির্দেশ দিয়েছেন মেঘালয়বাসীদের সুখ-দুঃখ-প্রয়োজনকে মাথায় রেখে ও এই সরকারের ব্যর্থতাকে তুলে ধরে নির্বাচনী ম্যানিফেস্টো তৈরির কাজ শুরু করতে। আগামী জানুয়ারি মাসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন মেঘালয়ে প্রচারে আসবেন দলের প্রার্থীদের জন্য সেসময় দলের ম্যানিফেস্টো প্রকাশ করবেন তিনি। তার আগে মেঘালয়ের ৬০টি বিধানসভা কেন্দ্রের প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ করবে মেঘালয় তৃণমূল কংগ্রেস। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের প্রতি তাঁদের স্পষ্ট বক্তব্য, কলকাতা থেকে কোনও সিদ্ধান্ত মেঘালয়ে চাপিয়ে দেওয়া হবে না। মেঘালয়ের ভূমিপুত্ররাই মেঘালয় চালাবেন। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই প্রার্থীতালিকা তৈরিতে মুকুল সাংমা, চার্লস পিনগ্রোপ ও দলের তরফ থেকে দলের স্টেট ইনচার্জ মানস ভুঁইয়ার প্রত্যক্ষ ভূমিকা থাকবে।