প্রবীর ঘোষাল,দোহা, ১৫ ডিসেম্বর : আগেরদিন খেলা শুরুর অনেক আগে থেকেই আর্জেন্টিনার সমর্থকদের দাপটের কথা লিখেছিলাম। কিন্তু বুধবার রাতে মরক্কানদের মাঠে এবং বাইরে যে রূপে দেখলাম তা কোনওদিন ভোলার নয়। কে বলবে এরা এই প্রথম বিশ্বকাপে প্রাথমিক পর্বের গণ্ডি পেরিয়ে সেমিফাইনালে খেলছে। মনে হয় না, আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের বাইরে আর কোনও দলের এত সমর্থক কাতার বিশ্বকাপে উপস্থিত হয়েছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, মরক্কোর সমর্থকদের মধ্যে শুধুমাত্র দেশের মানুষই নয়, মাঠে তাদের হয়ে গলা ফাটিয়েছে আরব অঞ্চলের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষজন। বাদ যায়নি ইউরোপ এবং আফ্রিকান দেশগুলির খেলা দেখতে আসা বেশ কয়েক হাজার ফুটবলপ্রেমীও।
আরও পড়ুন-বিরাটের ম্যাচ প্রস্তুতিও দেখার মতো : দ্রাবিড়
ম্যাচের দিন বিকেলে মেট্রো স্টেশনে পৌঁছে দেখলাম মরক্কোর সমর্থকদের প্রচণ্ড দাপাদাপি। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে। সকলের গলায় সে দেশের জাতীয় সংগীত। আর গানের তালে তালে হাততালি। বাঁশি-বিউগলও বাজছে। হাতে সবার জাতীয় পতাকা। হাজারে হাজারে মানুষের ভিড়ে ফ্রান্সের সমর্থকদের কার্যত খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছে না। বিশ্বকাপে কে কোন দলের সমর্থক সেটা চেনা যায় তাদের সাজপোশাকে। মেট্রো ট্রেনে পাশাপাশি বসে মাঠে যাচ্ছিলেন কলকাতা থেকে খেলা দেখতে আসা সম্রাট দাসশর্মা আর অনাদি হাজরা। তাঁরা সঙ্গে করে একটা ফ্রান্সের পতাকা নিয়ে এসেছেন। কিন্তু ওদের লম্ফঝম্প দেখে সেটা ব্যাগ থেকে বের করতেই কিন্তু কিন্তু করছেন।
আরও পড়ুন-‘ফিল্মের জগতে পশ্চিমবঙ্গ হবে রয়েল বেঙ্গল টাইগার’, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ রাজ্যপাল
আল বায়াত স্টেডিয়ামে ঢোকার আগেও দেখলাম মরক্কোর সমর্থকদের দোর্দণ্ডদাপট। নাচ-গান-স্লোগানে তারা মাতোয়ারা। ছেলেদের সঙ্গে সমানে পাল্লা দিচ্ছে মেয়েরাও। চেনা-অচেনায় কোনও কুণ্ঠা নেই। আর সেলফি তোলার হিড়িক। স্টেডিয়ামের ভিতর দর্শক গ্যালারিতে তো ফ্রান্সের দর্শকদের কার্যত দূরবিন দিয়ে খুঁজতে হচ্ছিল। দল মাঠে নামার অনেক আগে থেকেই ব্যান্ড বাজিয়ে গান আর গর্জনে মরক্কোর সমর্থকরা বোঝাতে চাইছিল, তারা এবার মরণপণ লড়াই করে বিশ্বকাপ জিতেই ফিরতে চায়। মাঠে উপস্থিত আমার মতো অনেক দর্শকই হয়তো ভাবছিলেন, জনতার এই জাগরণের স্রোতের বিরুদ্ধে এমবাপে-জিরুর দল মাঠে লড়বে কী করে? কিন্তু পেশাদার ফুটবলারদের কাছে দর্শকরা বোধহয় প্রধান ফ্যাক্টর নয়। যদি হত তাহলে বুধবার রাতে ফল অন্য হতেই পারত। অবশ্য ভাগ্যও মরক্কানদের পক্ষে ছিল না।
আরও পড়ুন-‘রানীকে দিয়ে আমি বাংলায় সংলাপ লিখিয়ে নিয়েছি’ মঞ্চে উঠেই ভাঙা বাংলায় মন কাড়লেন বাদশা
ফেরার পথে পরাজিত দলের সমর্থকদের কোথাও অভাব্য আচরণ করতে দেখিনি। বরং দু’দলের সমর্থকরা নিজের নিজের দেশের জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে হাসিমুখে পোজ দিয়ে ছবি তুলতে দেখেছি। মরক্কোর সমর্থকরা তীরে এসে তরী ডোবার জন্য মুহ্যমান হলেও, ভেঙে পড়েনি। বরং আগামী দিনে আরও আক্রমণাত্মক ফুটবলের প্রত্যাশা জাগিয়ে তারা দেশে ফিরে যাচ্ছে।