অংশুমান চক্রবর্তী
ফজলি পত্রিকা
সম্পাদক : নির্মলেন্দু শাখারু
মালদার গাজোল থেকে প্রকাশিত হয় ‘ফজলি পত্রিকা’। বেরিয়েছে ১৪ বছরের শারদীয়া সংখ্যা। স্থান পেয়েছে ছোটদের মনের মতো নানা স্বাদের লেখা। শুরুতেই পবিত্র সরকারের ছড়া ‘প্রশ্নই জীবন’। চরম বাস্তবতা ফুটে উঠেছে লেখায়। করেছেন সতর্ক। শুরুটা এইরকম ‘লিখতে পড়তে শিখবে, তবে/ প্রশ্ন করতে শেখো।/ গাড়িঘোড়া চড়াটাই সব/ নয়, তা মনে রেখো।’ শুধু ছোটদের নয়, ছড়াটি ভাল লাগবে বড়দেরও।
ভবানীপ্রসাদ মজুমদারের ছড়া ‘এই দুটি হাত চায় রুটি-ভাত’। শুরুতে কবির হাত ধরে পৌঁছে যেতে হয় ভাবজগতে। শেষপর্যন্ত ফিরে আসতে হয় বাস্তবতার মাটিতে। তিনি সোচ্চার হয়েছেন যুদ্ধের বিরুদ্ধে।
আরও পড়ুন-আপনারাই ঠিক করুন প্রার্থী : অভিষেক
আনসার উল হকের ছড়া ‘পাখি ও আয়ানসোনা’। একটি ছোট্ট ছেলের মনের কথা চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন কবি।
পাশাপাশি শ্যামাপ্রসাদ ঘোষের ‘চাঁদের বাড়ি’, হাননান আহসানের ‘আমাদের পুজো’, অশ্রুরঞ্জন চক্রবর্তীর ‘পথশিশুদের দুঃখ’, সুনীতি মুখোপাধ্যায়ের ‘খুশির খবরের ঠিকানা’, সুখেন্দু মজুমদারের ‘নীল আকাশের চিঠি’, সমর পালের ‘রঙের খেলা’, জুলি লাহিড়ীর ‘হুলোর চুরি’, উদয়শঙ্কর বাগের ‘পাখির সঙ্গে খোকনসোনা’, রবিনকুমার দাসের ‘এলোমেলো পুজো এলো’, নির্মল করণের ‘অবিকল’ প্রভৃতি ছড়াগুলো পড়তে ভাল লাগে।
আরও পড়ুন-আপনারাই ঠিক করুন প্রার্থী : অভিষেক
আছে কয়েকটি গল্প। মুকুল মাইতি লিখেছেন ‘বিনুদের বাগান’। পুরোপুরি শিক্ষামূলক। শোভন শেঠের গল্পের শিরোনাম ‘জাগরণ’। কেন্দ্রীয় চরিত্র স্কুলছাত্রী মেঘা। গল্পটি দেশাত্মবোধ জাগায়। হনুমানের মৃত্যু বদলে দেয় একজন শিকারির মন। রূপক চট্টরাজের মানবিক গল্প ‘শেষ শিকার’। এ ছাড়াও সঞ্জিতকুমার সাহা, শীতল চট্টোপাধ্যায়, প্রদীপরঞ্জন দাস, মানস সরকার প্রমুখের গল্প রোদের মতো উজ্জ্বল।
সুভাষ মুখোপাধ্যায়, অনন্তদেব মুখোপাধ্যায়, অনুশ্রী মুখার্জির প্রবন্ধ উৎকৃষ্ট মানের। প্রথমজন লিখেছেন ছোটদের পত্রিকার পাঠকদের নিয়ে। দ্বিতীয়জনের বিষয় নজরুল। তৃতীয়জন লিখেছেন জাপানের শিশুশিক্ষা নিয়ে। তিনটি রচনাই তথ্য সমৃদ্ধ।
লোককথা উপহার দিয়েছেন সৈয়দ রেজাউল করিম। কল্যাণকুমার দে-র জ্ঞানবিজ্ঞান, প্রীতিশেখরের আবৃত্তির পাঠশালা পড়তে ভাল লাগে। আছে স্মৃতিচারণ, নলেজ ব্যাঙ্ক, কচিকাঁচার আসর এবং কার্টুন। অলংকরণ পত্রিকাটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। সুসম্পাদিত সংখ্যাটির দাম ৮০ টাকা।
আরও পড়ুন-ব্যবস্থাপনায় খুশি শাহ, মুখ্যমন্ত্রীর আমন্ত্রণে দফতরে
সঞ্চিতা
সম্পাদক : তরুণকুমার সরখেল
২৮ বছরের পত্রিকা ‘সঞ্চিতা’। প্রকাশিত হয় পুরুলিয়া জেলা থেকে। বেরিয়েছে উৎসব সংখ্যা। গদ্যেপদ্যে ঠাসা। শুরুতেই ছড়া লিখেছেন সুনির্মল চক্রবর্তী। শিরোনাম ‘পিঁপড়ে যায়’। ছড়ার চলনটি বেশ। মনে দোলা দিয়ে যায়। আরও একটি পিঁপড়ের ছড়া লিখেছেন দীপ মুখোপাধ্যায়। নাম ‘খুঁটিনাটি’। ছড়াটি মজার। এ ছাড়াও ভাল লাগে অপূর্বকুমার কুণ্ডু, অমিয়কুমার সেনগুপ্ত, স্বপনকুমার রায়, বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়, মৌসুমি চট্টোপাধ্যায় দাস, জুলি লাহিড়ী, মধুমিতা রাণা প্রমুখের ছড়া-কবিতা।
আছে কয়েকটি মূল্যবান নিবন্ধ। সমুদ্র বসুর লেখার শিরোনাম ‘দুর্গা যখন শাকম্বরী’। ভাস্কর বাগচী লিখেছেন ‘দেউলঘাটার কালোদুর্গা নিয়ে’। দুটি লেখা চমৎকার। বেশ ভালো লাগে প্রদীপকুমার পালের ‘এস্কিমো ও তাদের জীবনযাত্রা’ লেখাটি। নিপুণ দক্ষতায় একটি জনগোষ্ঠীকে পাঠকদের সামনে তুলে ধরেছেন।
গল্প শুরু হয়েছে অনন্যা দাশের লেখা দিয়ে। শিরোনাম ‘কাজের সময় কাজ’। গল্পটি শিক্ষামূলক। সাগরিকা রায় লিখেছেন ‘ছাতামাথায় লোকটি’। মন ছুঁয়ে যায়। এ ছাড়াও ভাল লাগে গুরুস্বরূপ মুখোপাধ্যায়, জয়তী চট্টোপাধ্যায়, সৌরভকুমার ভুঞ্যা, স্মৃতিকণা মুখোপাধ্যায় প্রমুখের লেখা। ছোটদের মনের মতো একটি পত্রিকা। দাম ৫০ টাকা।
আরও পড়ুন-তাঁতশিল্পীদের নিয়ে অভিষেকের ভাবনা
কিশোর তূর্য
সম্পাদক : বিশ্বনাথ মাঝি
বজবজ থেকে প্রকাশিত হয় ‘কিশোর তূর্য’। উৎসব সংখ্যায় উঠেছে ছন্দছড়ার ঢেউ। শুরুতেই পার্থজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের একগুচ্ছ ছড়া। কবি কঠোর বাস্তববাদী। ফুলের পাশাপাশি দেখিয়েছেন সমাজের হুল এবং ভুলগুলো। ‘হিংসুটেরা হারে’ ছড়ায় তিনি লেখেন, ‘যার সাথে রোজ ইস্কুলে যাই/ একই বেঞ্চে বসি,/ পাশের ছেলের চুল টেনে সে-ই/ আমায় করে দোষী।’ পরমুহূর্তেই প্রশ্ন তোলেন, ‘কেমন করে বন্ধু ভাবি ওকে,/ কাণ্ড দেখে জল এসে যায় চোখে।’ পাশাপাশি ‘আসবে নাকি’, ‘ভয় পাবো না আর কখনও’, ‘সেই দামি দৃশ্য’, ‘জল’, ‘ভিজতে ভিজতে’ ছড়াগুলিও চমৎকার। আছে বৈচিত্র্য।
ভবানীপ্রসাদ মজুমদার লিখেছেন ‘ঢাকের বোলে হৃদয় দোলে’। স্বভাবসিদ্ধ ভাবেই ছন্দ নিয়ে খেলেছেন।
আরও পড়ুন-তারকেশ্বরে তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মিসম্মেলনে ঘোষণা, প্রতি বুথের কর্মিদল ঘুরবে বাড়ি বাড়ি
আসর জমিয়ে দিয়েছেন দীপ মুখোপাধ্যায়। তাঁর লেখার শিরোনাম ‘তবুও সোহাগ মাখা’। লিখেছেন, ‘দুই দিকে গাছপালা পাখিরাও নিজেদের মতো/ রাস্তা গড়িয়ে গেছে ধুলোবালি মাখামাখি কত।/ একটা গরুর গাড়ি থেমে আছে ছায়া খুঁজে নিয়ে/ পলক পড়ে না চোখে আনমনে থেকেছি তাকিয়ে।’ ছড়া নয়, অনবদ্য এক কিশোর কবিতা।
আনসার উল হক ‘তোমরা যারা কচিকাঁচা’ ছড়ার শুরুতে লিখেছেন ‘চতুর্দিকে বইছে হাওয়া/ মন্দ এবং ভালো,/ তার ভিতরে অস্থিরতা/ হঠাৎই চমকালো।’ শেষে লিখেছেন, ‘তোমরা আমার বন্ধু-সুজন/ বাড়িয়ে আছি হাত,/ তোমরা পারো মুছিয়ে দিতে/ বিভেদ ও জাতপাত।’ যুগ যুগ ধরে কবিরা এইভাবেই মানুষকে সচেতন করেছেন। দেখিয়েছেন সঠিক দিশা।
আরও পড়ুন-জিতেই ফিরব, হুঙ্কার দেশঁর
এ ছাড়াও মনে রাখার মতো ছড়া-কবিতা উপহার দিয়েছেন উত্থানপদ বিজলী, সুখেন্দু মজুমদার, অবশেষ দাস, অরুণ মণ্ডল, স্বপন চক্রবর্তী, শিবপ্রসাদ ভৌমিক, ব্রজেন্দ্রনাথ ধর, সুনীল করণ, উৎপলকুমার ধাড়া, প্রদীপ দেববর্মন, মানস চক্রবর্তী, বসন্ত পরামাণিক, পলাশ পোড়েল, অলোককুমার প্রামাণিক প্রমুখ।
বাদল মাঝির ‘আঁখি ও পরী’ গল্পটি ভাল লাগে। আছে কয়েকটি আঁকা। দাম ৬০ টাকা।