প্রতিবেদন : বড়দিনের (Christmas- Vishwa Hindu Parishad) মতো কার্যত সর্বজনীন এক উৎসবকে কেন্দ্র করেও বিভাজনের বিষ ছড়ানোর চেষ্টা গেরুয়া শিবিরের। ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ও সৌহার্দ্যের পরিবেশকে ধ্বংস করতে শিশুদের নিয়েও রাজনীতি শুরু করল বিজেপির দোসর বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। হিন্দুত্ববাদী এই সংগঠনের তালিবানি ফতোয়া, বড়দিনে হিন্দু শিশুদের সান্তাক্লজ সাজানো যাবে না। কৃষ্ণ, গৌতম বুদ্ধ, রাম বা মহাবীর সাজানো যেতে পারে। কিন্তু কোনওভাবেই সান্তাক্লজ সাজানো চলবে না। তাদের যুক্তি, সান্তাক্লজ নিয়ে উদযাপন হিন্দু সংস্কৃতির বিরোধী। বিজেপি-শাসিত মধ্যপ্রদেশে এমনই ভেদাভেদের ফতোয়া জারি করে ভিএইচপি। এমন সাম্প্রদায়িক নির্দেশ সামনে আসতেই ধর্ম নির্বিশেষে সমালোচনা শুরু হয়েছে। অনেকেই এই ফতোয়াকে আমল দিতেই নারাজ। এর আগেও মধ্যপ্রদেশে বিজেপি বা তাদের দোসর সংগঠনগুলি নানাভাবে সংখ্যালঘুদের উপর ধর্মীয় ও সামাজিক চাপ তৈরি করেছে, এমন উদাহরণ ভূরি ভূরি। এবার শিশুদের সান্তাক্লজ সাজা নিয়েও তাদের আপত্তির রক্তচক্ষু!
হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের দাবি, মধ্যপ্রদেশের বিভিন্ন বেসরকারি বা কনভেন্ট স্কুলে পড়ুয়াদের বড়দিনে সান্তাক্লজের মতো পোশাক পরে স্কুলে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে। এই বিষয়ে আপত্তি ভিএইচপির। সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অভিভাবকদের অনুমতি ছাড়া কোনও স্কুল পড়ুয়াদের সান্তাক্লজ সাজতে বাধ্য করতে পারবে না স্কুল। এমনকী, পড়ুয়াদের ক্রিসমাস-ট্রি আনতেও বাধ্য করা যাবে না। কারণ শিশুদের সান্তাক্লজ সাজিয়ে প্রকারান্তরে ধর্মান্তরকরণের বীজ বপনের চেষ্টা হচ্ছে। ভিএইচপি সংগঠকদের বক্তব্য, সুপ্রাচীন কাল থেকেই ভারত সন্তদের দেশ, সান্তাক্লজের নয়। তাই ভারতীয় শিশুদের কৃষ্ণ, রাম, বুদ্ধ, মহাবীর, গুরু গোবিন্দ সিং, বলরাম সাজানো যেতে পারে। কিন্তু সান্তাক্লজ নয়। ফতোয়া অগ্রাহ্য করা হলে সংশ্লিষ্ট স্কুলের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপেরও হুমকি দেওয়া হয়েছে। তবে ঠিক কোন স্কুল বা সংস্থা হিন্দু পড়ুয়াদের জোর করে সান্তা সাজাচ্ছে সে বিষয়ে স্পষ্ট করে বলতে চাননি ভিএইচপি নেতারা।
আরও পড়ুন-ফের তুঘলকি আচরণ উপাচার্যের, পাশ করা ছাত্রকে সাসপেন্ড
মধ্যপ্রদেশে এমন ফতোয়ার পাশাপাশি বিজেপি-শাসিত উত্তরাখণ্ডে বড়দিনের (Christmas- Vishwa Hindu Parishad) উৎসবে হামলা হয়েছে। বড়দিনের প্রার্থনার নামে জোর করে ধর্মান্তরকরণ করা হচ্ছে এমনই অভিযোগ তুলে শনিবার উত্তরাখণ্ডের বেশ কয়েকটি জায়গায় হামলা চালায় কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের সদস্যরা। এই ঘটনায় তাল কেটেছে উৎসবের আমেজে। ঘটনার জেরে ৬ জনকে আটক করা হলেও পরে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। বরং যাঁদের উপর হামলা হয়েছিল তাঁদেরই আটক রাখে পুলিশ। জানা গিয়েছে, রাজধানী দেরাদুন থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার দূরে উত্তরকাশী জেলার ছোট্ট গ্রাম পুরোলায় বড়দিনের উৎসব চলছিল। চলছিল প্রার্থনা। সেই সময় আচমকাই বেশ কয়েকজন যুবক লাঠি, রড ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে প্রার্থনাসভায় হামলা চালায়। হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের সদস্যদের হাত থেকে রেহাই পাননি প্রার্থনার দায়িত্বে থাকা ফাদার ও তাঁর স্ত্রী। পুলিশ জানিয়েছে, গ্রামবাসীরা নিজেদের মধ্যে কথা বলে বিষয়টি মিটিয়ে নিয়েছে। ঘটনা ধামাচাপা দিতে ব্যস্ত রাজ্যের পুলিশ।