প্রতিবেদন : বাংলায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চালু করা রেশন মডেলকে কপি করে সুকৌশলে এবার ‘নেপোয় দই মারতে’ চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার। চালু হচ্ছে ‘প্রধানমন্ত্রী গরিব অন্ন সুরক্ষা যোজনা’ নাম দিয়ে নতুন প্রকল্প। যা ছিল ‘প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনা’। ২০২০ সালে করোনার সময়ে এটি চালু হয়েছিল। শুধু ‘সুরক্ষা’ শব্দটি ব্যবহার করে পুরনো প্রকল্পই নতুন ভাবে লঞ্চ করে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চাইছে বিজেপি। যা আদতে জালিয়াতি ছাড়া আর কিছুই নয়।
আরও পড়ুন-কৃত্রিম উপগ্রহের অবদান
একইসঙ্গে এই নাম বদলের মধ্যে দিয়ে এক ঢিলে দুই পাখি মারার ব্যবস্থা করা হয়েছে। নাম বদলে নতুন প্রকল্পে সুরক্ষা শব্দ জুড়ে যাওয়ায় এতে রেশন গ্রাহকরা মাথাপিছু ৫ কেজি করে যে অতিরিক্ত খাদ্যশস্য পেতেন তা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে বছরে কেন্দ্রের সাশ্রয় হবে ১ লক্ষ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। আবার ভোটের ময়দানে রাজনৈতিক ফায়দাও তোলা যাবে নতুন প্রকল্পের নাম করে। কিন্তু এতে আখেরে ক্ষতি হবে কোটি কোটি গরিব মানুষের। তাঁরা বঞ্চিত হবেন তাঁদের প্রাপ্য থেকে। এ-রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০২০-র এপ্রিল থেকে বিনা পয়সায় চাল-গম দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। এতে গরিব মানুষ তো বটেই, স্বল্প রোজগারের মানুষেরাও প্রভূত উপকৃত হচ্ছেন। কেন্দ্রের নয়া ফন্দি-ফিকিরে কোটি কোটি রেশন গ্রাহকের কপালে আদতে বাড়তি কিছুই জুটবে না। এতে আর যা-ই হোক, দেশের খেটে খাওয়া নিচুতলার মানুষের কল্যাণ তো দূর অস্ত, বানিয়া নীতির পোস্টার বয় মোদি ও তাঁর বিজেপি সরকারের এই শব্দের মারপ্যাঁচ ও রাজনৈতিক ফায়দা তোলার মাঝে পড়ে পিষে মরবে দেশের কোটি কোটি মানুষ, যাঁরা রেশন ব্যবস্থার ওপর ভরসা তাঁদের জীবনযাপন করেন। এই ঘটনার তীব্র সমালোচনা করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। এটা স্রেফ জালিয়াতি ছাড়া আর কিছুই নয়। স্পষ্ট বক্তব্য তৃণমূল নেতৃত্বের। সোমবার কেন্দ্রের তরফে রাজ্য সরকারকে একটি নোটিশ পাঠিয়ে পুরনো প্রকল্পের বন্ধের কথা জানানো হয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ থাকার কারণে রাজ্য সরকারকে বলা হয়েছে, এবিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে।
আরও পড়ুন-যাত্রামঞ্চ মাতল সরকারি প্রকল্প নিয়ে জেলা সহ-সভাধিপতির সংলাপে
কেন্দ্রীয় সরকার জালিয়াতি করছে কীভাবে? করোনার সময়ে ২০২০-র এপ্রিল মাস থেকে চালু হয় ‘প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনা’। প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এ-মাসেই। এতে গ্রাহকদের মাথাপিছু ৫ কেজি করে অতিরিক্ত খাদ্যশস্য বিনা পয়সায় দেওয়া হত। এই প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সরকারের বছরে প্রায় ১ লক্ষ ৬৩ হাজার কোটি টাকা বেঁচে যাবে। অর্থাৎ, প্রকল্পের নামে ‘কল্যাণ’-এর বদলে ‘সুরক্ষা’ শব্দটি ব্যবহার করে কেন্দ্র বিপুল পরিমাণ অর্থ সাশ্রয়ের পরিকল্পনা করেছে। অথচ, দেশের মানুষ আগে যে সুবিধা পেত, তার থেকে বঞ্চিত হবে। নয়া প্রকল্প চালু করতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার যে নোট প্রস্তুত করা হয়েছিল, তাতেই খরচ সংক্রান্তের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। আরও বলা হয়েছে, আগামী দিনে খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্পের আওতায় থাকা মানুষের সংখ্যা কমবে। এখন ৮১ কোটি ৩৫ লক্ষ গরিব মানুষ এই প্রকল্পের উপভোক্তা। এই সংখ্যা ভবিষ্যতে কমবে।
আরও পড়ুন-মানা হবে কোভিড বিধি, আজ থেকে প্রাথমিকে ইন্টারভিউ শুরু হচ্ছে
প্রতিক্রিয়ায় সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় বলেছেন, এটা কেন্দ্রের আর এক ধরনের জালিয়াতি। আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে উচ্চমানের খাদ্যসামগ্রী রেশনে বণ্টন করা হয়। গরিবরা যা বিনাপয়সায় পান। এটাই দেশের মডেল। কিন্তু এই নতুন প্রকল্পে নাম বদল করে ঠকানোর পথ তৈরি করেছে কেন্দ্র।
দেশে এই মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রীর নামাঙ্কিত এক ডজন প্রকল্প চলছে। কিন্তু প্রশ্ন হল, এইসব প্রকল্পে রাজ্যকেও টাকা দিতে হয়। তাহলে প্রকল্পে মুখ্যমন্ত্রীর নামও যুক্ত করতে হয়। কিছু প্রকল্প রয়েছে মহাত্মা গান্ধী, ইন্দিরা গান্ধী, রাজীব গান্ধীর নামে। এঁরা সকলে শহিদ হয়েছেন। সুতরাং এইভাবে শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রীর নামাঙ্কিত— এটা কেন হবে?
আরও পড়ুন-বিরোধীদের বিরুদ্ধে তৃণমূলের মিছিলে ঢল
রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মডেলকেই অনুসরণ করছে কেন্দ্র। জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা নীতিতে যে কথা বলা আছে তা মানছে না কেন্দ্রীয় সরকার। এই নতুন প্রকল্পে গরিব মানুষ ও কোটি কোটি রেশন গ্রাহকরা বঞ্চিত হবেন। কেন্দ্রকে বারবার বলা সত্ত্বেও তারা নিম্নমানের ২-৩ টাকা কেজির চাল দেয়। আমরা তা নিইনি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে আমরা বাইরে থেকে ভাল চাল কিনে দিই। খাদ্যমন্ত্রীর সংযোজন, ২০২০-র সময় থেকে যেটা দেওয়া হচ্ছিল তার মেয়াদ বাড়াতে বলা হয়েছিল। সাংসদ সৌগত রায়ও চিঠি দিয়েছিলেন। কিন্তু নতুন প্রকল্পের নামে ফন্দি-ফিকির করে গরিব মানুষকে বঞ্চিত করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, মানুষ ঠকানোর কল ছাড়া আর কিছুই নয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চালু করা প্রকল্পের অনুকরণ করতে গিয়ে মানুষ ঠকাচ্ছে। ওরা দিত না, বন্ধ করে দিতে পারত। রাজ্য সরকারই পুরোটা দিত। বাড়তি যে টাকা লাগত সেটাও রাজ্য সরকার দিত। প্রধানমন্ত্রী নিজের নাম কেনার জন্য এসব করছে।