প্রতিবেদন : শুদ্ধিকরণে কড়া বার্তা দলের। দুর্নীতির প্রশ্নে তৃণমূল (TMC) শীর্ষ নেতৃত্ব যে কাউকে রেয়াত করবে না বুধবার চার গ্রেফতারের মধ্যে দিয়ে তা স্পষ্ট হয়ে গেল। এদিন সদ্য অপসারিত পঞ্চায়েত প্রাক্তন প্রধান শেখ সেলিম আলিকে বোল্ডার দুর্নীতিতে জড়িত থাকার কারণে গ্রেফতার করা হয়। একইসঙ্গে এদিন গ্রেফতার হন একজন প্রাক্তন কাউন্সিলর ও একজন ঠিকাদার ও মাতঙ্গিনী পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি দিবাকর জানাও। এদের সকলের বিরুদ্ধেই ভূরি ভূরি দুর্নীতির অভিযোগ ছিল। বিশেষ করে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় দীর্ঘদিন ধরে অধিকারীদের ঘনিষ্ঠ ঠিকাদার রামচন্দ্র পন্ডা একচ্ছত্র রাজ চালিয়েছে। সব নিয়মকানুনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এই রামচন্দ্র পন্ডাকেই সব কাজ পাইয়ে দিতেন শুভেন্দু-সৌমেন্দু। ঘনিষ্ঠ ঠিকাদারের গ্রেফতারের পর নিশ্চিতভাবে চাপ বাড়বে লোডশেডিং অধিকারীদের।
চাকরি দেওয়ার নামে প্রায় ৪ লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে শিল্পনগরী হলদিয়া পুরসভার ৮ নং ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর প্রশান্ত দাসকে গ্রেফতার করল দুর্গাচক থানার পুলিশ। তাকে বৃহস্পতিবার হলদিয়া মহকুমা আদালতে তোলা হবে। বুধবার সন্ধ্যায় জেলা পুলিশের তরফে সাংবাদিক বৈঠক করে এখবর জানানো হয়। গ্রেফতার প্রশান্ত দাস হলদিয়া পুরসভার প্রাক্তন পুরপ্রধান শ্যামল আদকের একেবারে ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। আবার শ্যামল আদক শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ। সূত্রের খবর, শিল্পনগরী হলদিয়ার দুর্গাচক এলাকায় একটি কোম্পানিতে জাহাঙ্গির হোসেন নামে এক শিক্ষিত যুবককে ভাল পোস্টে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে টাকা আত্মসাৎ করে প্রশান্ত।
আরও পড়ুন-আস্থা ভোটে জয় অনিতদের
এদিন সিআই মানবেন্দ্রনাথ পাল বলেন, এলাকার যুবক জাহাঙ্গির হোসেন বেশ কয়েকদিন আগে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন কাউন্সিলর প্রশান্ত দাসের বিরুদ্ধে। দুর্গাচক থানার তদন্তকারীরা তদন্ত করেন। বুধবার মামলা রুজু করে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে অসঙ্গতি দেখা দিলে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়। কাঁথির ধৃত ঠিকাদার রামচন্দ্র পন্ডা, আঠিলাগড়ির বাসিন্দা৷ গত ৪ নভেম্বর কাঁথি রাঙামাটি শ্মশান কেলেঙ্কারির স্টল দুর্নীতি মামলায় এই রামচন্দ্র পন্ডাকেই গ্রেফতার করেছিল কাঁথি থানার পুলিশ। এবার ভুয়ো শংসাপত্র দিয়ে কাঁথি পুরসভায় ঠিকাদারি করার অভিযোগ উঠেছে সেই রামচন্দ্রের বিরুদ্ধে। গত ২৫ ডিসেম্বর কাঁথি পুরসভার ইঞ্জিনিয়ার শান্তনু পন্ডার স্ত্রী কাকলি পন্ডা কাঁথি থানায় রামচন্দ্র পন্ডার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তদন্তে নেমে পুলিশ ওই ঠিকাদারকে গ্রেফতার করে। তাকে বুধবার কাঁথি মহকুমা আদালতে তোলা হয়। কাঁথি থানার পুলিশের পক্ষ থেকে আদালতে ১০ দিনের পুলিশ হেফাজতের আবেদন জানানো হয়। কাঁথি আদালতের বিচারক রামচন্দ্রের ৭ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন। উল্লেখ্য, ২০১১-২০২১ সাল পর্যন্ত কাঁথি পুরসভার পুরপ্রধান ছিলেন বর্তমান রাজ্যের বিরোধী দলনেতার ভাই সৌমেন্দু অধিকারী। তিনি এখন বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক। গ্রেফতার হওয়া রামচন্দ্র পন্ডা সৌমেন্দু অধিকারীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিল। সেই সময় কাঁথি পুরসভায় একাধিক ঠিকাদারির কাজ করে রামচন্দ্র পন্ডা। অধিকারীদের ঘনিষ্ঠ এই ঠিকাদারের বিরুদ্ধে আগেই একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। কাঁথি পুলিশের দাবি, ঠিকাদারি করতে হলে শংসাপত্র দিতে হয়। কিন্তু এই ঠিকাদার ‘ভুয়ো’ শংসাপত্র দিয়ে কাজ পেয়েছিল বলে অভিযোগ। আবার কাজ না করে টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। সৌমেন্দু ছাড়াও দীর্ঘদিন ধরে শুভেন্দুও এই ঠিকাদারের সব কাজে মদত দিয়ে গিয়েছেন।