প্রতিবেদন : দেশ জুড়ে গরিব মানুষের জন্য বরাদ্দ রেশনের চাল-ডাল-গম খেয়ে সাফ করে দিয়েছে বিজেপি। যেখানেই তাদের ডবল ইঞ্জিন সরকার রয়েছে সেখানেই হয়েছে বেলাগাম রেশন-দুর্নীতি। গরিবের চাল-গম খাওয়ার প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছে যোগী-রাজ্য উত্তরপ্রদেশ (Uttar Pradesh)। মোদি-শাহর রাজ্য গুজরাতও পিছিয়ে নেই। সেখানেও হয়েছে ব্যাপক রেশন-দুর্নীতি। এছাড়া মধ্যপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, কর্নাটকেও সাফ হয়েছে রেশন। এ-কোনও মনগড়া অভিযোগ নয়। খোদ কেন্দ্রীয় সরকারের ঘরেই রেশন-দুর্নীতি নিয়ে মোট ৫,৭৯৮ অভিযোগ জমা পড়েছে। এর বেশিরভাগই উত্তরপ্রদেশের (Uttar Pradesh)। এই ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে প্রশাসনিক মহলে। এখন প্রশ্ন হল, বেড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে? যেখানে বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিই দুর্নীতির আখড়া সেখানে চোর ধরা পড়বে কি? নানা ছুতোনাতায় বিরোধী দলগুলির বিরুদ্ধে এজেন্সি লেলিয়ে দেয় বিজেপি। এবার কি ইডি-সিবিআইয়ের টিম যাবে বিজেপি-শাসিত উত্তরপ্রদেশ, মোদি-শাহর গুজরাত, কর্নাটক, মধ্যপ্রদেশে রেশন-দুর্নীতির কিংপিনদের ধরতে? কে জানে! রেশন-দুর্নীতি নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের স্পষ্ট বক্তব্য, বাংলায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চালু করা মডেল কপি করে নতুন ভাবে শুরু করছে কেন্দ্র। আর বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিতে এই পাহাড়প্রমাণ রেশন-দুর্নীতি হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস আমজনতার কাছে বিষয়টি জোরালো ভাবে তুলে ধরবে। এই বিপুল রেশন-দুর্নীতি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের মন্ত্রী-সাংসদ ও সমাজতত্ত্ববিদেরা।
আরও পড়ুন-মোক্ষম খোঁচা দিলেন অভিষেক
পার্থ ভৌমিক, মন্ত্রী : যে কোনও বিজেপি-শাসিত রাজ্যে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়। গরিব মানুষের কথা ভাবে না। আমাদের নেত্রী বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রান্তিক মানুষদের কথা চিন্তা করেন। তাঁরা যাতে দু’বেলা-দু’মুঠো খেয়ে-পরে বাঁচতে পারে আগে তার সংস্থান করেন। নিরন্ন মানুষের চিন্তা করেন। মানুষ বেঁচে না থাকলে আধুনিক সমাজের সভ্যতার সুফল কারা পাবেন? গুটিকয়েক শিল্পপতি? বিজেপি এসব ভাবে না।
দোলা সেন, সাংসদ : ২০১৯ সালে দেশে ৩০৩টি আসন জিতে বিজেপি মনে করছে ওরা যা ভাববে, যা করবে সেটাই শেষ কথা। দুর্নীতির প্রশ্নে আমি বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলোকে দেখে মোটেই অবাক হই না। কারণ মোদি হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়। আসলে চোরের মায়ের বড় গলা। ২০২৪-এ দেশের মানুষ জবাব দেবে।
সুস্মিতা দেব, সাংসদ : বিজেপি বলেছিল ‘না খাউঙ্গা না খানে দুঙ্গা’। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে বিজেপি সবথেকে বেশি খাচ্ছে। খাদ্যসুরক্ষা— এটা দেশের মানুষের অধিকার। এটা পরিষ্কার, ভারতবর্ষে বিজেপির ডবল ইঞ্জিন সরকারের ইঞ্জিন ফেল করছে।
মানস ভুঁইয়া, মন্ত্রী : বাংলার রেশন ব্যবস্থা সারা দেশে মডেল। সেই ব্যবস্থাকে এরা নকল তো করছেই, একই সঙ্গে গোটা দেশ জুড়ে বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলোতে পাহাড়প্রমাণ দুর্নীতি করেছে বিজেপি। মোদির রাজ্য গুজরাত এই দুর্নীতির বাইরে নয় সেটা আজ আরও একবার প্রমাণ হয়ে গেল। যোগী-রাজ্য তো সবদিক থেকেই এক নম্বরে এখন! সে খুন-খারাপি, ধর্ষণ, দুর্নীতি যা-ই হোক না কেন।
উদয়ন গুহ, মন্ত্রী : এর আগেও বারবার বলেছি বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলো দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। এরা নানা ছলে-বলে-কৌশলে বাংলার সরকারকে বিরক্ত করছে— ডিস্টার্ব করছে— ব্যতিব্যস্ত করছে। একই সঙ্গে দেশের মানুষকেও ভাঁওতা দিচ্ছে। আর নিজেরা ডুবে থাকছে আকণ্ঠ দুর্নীতিতে। এরা বিরোধীদের পিছনে এজেন্সি লাগাচ্ছে, কিন্তু এজেন্সি বিজেপির বিরুদ্ধে যেদিন লাগবে সেদিন এরা লুকোনোর জায়গা খুঁজে পাবে না।
রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, স্টেট ইনচার্জ, ত্রিপুরা : বিজেপি দলটা কতটা নীচ হলে এটা করতে পারে। এরা মুখে বড় বড় কথা বলে। আর দুর্নীতিতে ডুবে থাকে। নিজেদের দোষ ঢাকতে বিরোধীদের দিকে আঙুল তোলে। এমন একটা ভাব দেখায় যেন সব অপরাধ বিরোধীদের! এর আগেও বারবার প্রমাণিত হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের করা জিনিসকে বিজেপি নকল করেছে চুরি করেছে। এবার বাংলার রেশন-মডেলকেউ তারা চুরি করছে।
নৃসীংহপ্রসাদ ভাদুড়ী, লেখক-সমাজতত্ত্ববিদ : যাঁরা নিজেরা দুর্নীতিতে থাকেন তাঁরাই অন্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতি খুঁজে বেড়ান। বিজেপিও নিজেদের দোষ দেখে না। পরের ছিদ্র খুঁজে বেড়ায়। ওঁরা রাজত্ব করেন, মন্ত্রিত্ব করেন কিন্তু নিজেদের দোষ দেখতে পান না। রেশনের উপর গরিব মানুষ নির্ভর করেন। কিন্তু ওঁরা সেখানেও থাবা মারতে ছাড়ছেন না।