সংবাদদাতা, কাটোয়া : দেশের সর্বোচ্চ আদালত ঘোষণা করেছে, নোটবন্দির সিদ্ধান্ত নির্ভুল ছিল। তাই শুনেই ফুঁসছেন কালনার রাহাতপুর গ্রামের যুবক মিলন মাণ্ডি। নোটবন্দির সিদ্ধান্ত যে কতখানি ‘ভুল’ ছিল তার সাক্ষী রাহাতপুর গ্রামের হতদরিদ্র মিলন-সহ দেশের হাজার হাজার দিন আনা দিন খাওয়া পরিবার। এই রায়ে ফিরেছে ৬ বছর আগে ২০১৬-র ৮ নভেম্বর ঘোষিত নোটবন্দির দুঃস্বপ্নের স্মৃতি। নোটবন্দির সিদ্ধান্তের বলি হন মিলনের বাবা ভাগচাষি শিবু মাণ্ডি (৪২)।
আরও পড়ুন-গ্যাসের পাইপলাইন হলদিয়ার জমিতে
নিজের গচ্ছিত টাকা তুলতে না পেরে পাওনাদারদের তাগাদায় অতিষ্ঠ হয়ে আত্মঘাতী হন তিনি। ২০১৬ সালের ২১ নভেম্বর সেই মর্মান্তিক ঘটনায় রাজ্য সরকারই পাশে দাঁড়ায়। শিবুর ছেলে মিলনকে চাকরি দেয়। না হলে পরিবারটি ভেসে যেত। কাটোয়ার বিধায়ক তথা পূর্ব বর্ধমান জেলা তৃণমূল সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ‘কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের একের পর এক জনস্বার্থ বিরোধী সিদ্ধান্তের মতো নোটবন্দিও ছিল গরিব-বিরোধী সিদ্ধান্ত। কালনার ভাগচাষির আত্মহত্যা তার বড় উদাহরণ।’ মিলনের আক্ষেপ, ‘ওই সিদ্ধান্তের জন্যই আমার বাবা অকালে চলে গেল।’
আরও পড়ুন-কোর্টের নির্দেশে বিপাকে ববিতা
শিবুর আত্মহত্যার খবর শুনে তাঁর রাহাতপুরের বাড়িতে ‘মমতার দূত’ হিসেবে ছুটে আসেন মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ, তৃণমূল নেতা দেবু টুডু, প্রণব রায়েরা। পরিবারটিকে বাঁচাতে কালনা নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতির ইন্দিরা বাজারে অস্থায়ী কর্মী হিসেবে নিযুক্ত হন প্রয়াত শিবুর ছেলে মিলন। মিলন বলেন, ‘সেদিন যদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের পাশে না দাঁড়াতেন, তাহলে পরিবারটাই ভেসে যেত।’ স্ত্রী ও তিন সন্তানকে নিয়ে টানাটানির সংসার ছিল শিবুর। সেবার জমি ভাগে নিয়ে পেঁয়াজ চাষ করেন। চাষের জন্য জল, সার কেনা, মজুর লাগানোর টাকা ধার করেছিলেন। আচমকা নোটবন্দির ঘোষণায় অথৈ জলে পড়ে যান। স্থানীয় সমবায়ে লাখের উপর টাকা জমা ছিল। নোটবন্দির জন্য সেই টাকা তুলতে পারছিলেন না। পাওনাদারদের তাগাদা, হুমকি, অপমান থেকে রেহাই পেতে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন আদিবাসী ভাগচাষি শিবু।
আরও পড়ুন-পাঁচ হাজার সুস্বাস্থ্যকেন্দ্রে টেলিমেডিসিন
সেই ঘটনা সম্পর্কে দেবু টুডু বলেন, ‘নোটবন্দি যে কতখানি হঠকারী সিদ্ধান্ত তা দেশের গরিব মানুষ টের পেয়েছেন।’ নোটবন্দিকে নির্ভুল বলে সুপ্রিম কোর্ট রায় দেওয়ায় শুধু কালনার আদিবাসী পরিবারটিই নয়, হতবাক পূর্ব বর্ধমান জেলার বিভিন্ন স্তরের, বিভিন্ন পেশার মানুষ। পেশায় শিক্ষক বিশ্বনাথ সাহা বলেন, ‘সেইসময় দেখেছি অনেক অবসরপ্রাপ্ত চাকুরের ব্যাঙ্কের সামনে দুশ্চিন্তা নিয়ে দাঁড়ানো। চোখ দিয়ে জল গড়ানো। আরও চিন্তাভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিলে এত মানুষ বিপাকে পড়তেন না।’ তাঁত শ্রমিক সুমন দে, জাকির মণ্ডল, ছোট দোকানি সুভাষ ঘোষ, তপন মণ্ডলদের অভিজ্ঞতা, নোটবন্দির জন্য নগদে টান পড়ে। ব্যবসার হাল খুবই খারাপ হয়।