দুর্দান্ত গল্প বলেন সায়ন্তন ঘোষাল। বরাবর। চুম্বকের মতো টেনে রাখতে পারেন নানা বয়সের দর্শকদের। তাঁর পরিচালিত আগের ছবিগুলো দেখলে সেটা বেশ বোঝা যায়। তাই তাঁর কাছে দর্শকদের বিপুল প্রত্যাশা। তিনি সেটা সাফল্যের সঙ্গে পূরণ করে চলেছেন। একটার পর একটা ছবির মধ্যে দিয়ে।
আরও পড়ুন-যুবদিবসে তৃণমূলের মহামিছিল
নতুন বছর আরও একটি অন্যরকমের ছবি নিয়ে হাজির হচ্ছেন পরিচালক। নাম ‘এলএসডি লাল সুটকেসটা দেখেছেন’। সম্প্রতি সামনে এসেছে ছবির পোস্টার। যা নিয়ে শুরু হয়েছে জোর চর্চা। পোস্টারে দেখা যাচ্ছে সোহম চক্রবর্তী এবং সায়নী ঘোষকে। দুজনের মুখে লেগে রয়েছে ভয়ের ছাপ। পিছনে রাখা একটি লাল সুটকেস। তার মধ্যে থেকে বেরিয়ে এসেছে কিছু জামাকাপড় এবং একটি রক্তমাখা হাত।
বছরের শুরুতে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টারটি শেয়ার করে সোহম লিখেছেন, এবার শহরে, নতুন বছরে, নতুন রহস্য, লাল সুটকেসটা দেখেছেন।
সোহমের সংস্থা সোহমস এন্টারটেইনমেন্ট এই ছবিটি প্রযোজনা করছে। ফলে এই ছবিতে তাঁর দ্বৈত ভূমিকা। অভিনেতা এবং প্রযোজক।
ছবির নামটি অদ্ভুত। আসলে এই লাল স্যুটকেসের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে যাবতীয় রহস্য। তবে এটা ক্রাইম থ্রিলার ঘরানার ছবি নয়। বিশুদ্ধ ডার্ক কমেডি। সাজিয়ে তোলা হয়েছে মূলত একটি রাতের গল্প। যে-রাতের পরতে পরতে ছড়িয়ে রয়েছে রোমাঞ্চ।
আরও পড়ুন-দলে পাঁক, পদ্ম ছেড়ে তৃণমূলে
ছবিতে সোহম এবং সায়নী ফুটিয়ে তুলছেন অমর্ত্য এবং রূপসার চরিত্র। রূপসা একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে। কলেজের সিনিয়রের পাল্লায় পড়ে নেশার মধ্যে ডুবে যাচ্ছিল। পালাতে চাইছিল দূরে কোথাও। কিন্তু কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছিল না মুক্তির পথ। এর মধ্যেই তার বিয়ে ঠিক হয়ে যায়। তখন আচমকাই সে তার কলেজের এক বন্ধু, অমর্ত্যর সঙ্গে যোগাযোগ করে। অমর্ত্যও আষ্টেপৃষ্ঠে বন্দি নিয়মের জটিল বেড়াজালে। তখন রূপসাই তাকে পরামর্শ দেয় ‘এলএসডি’র ট্রিপ করতে। সেই রাতের ট্রিপে একসঙ্গে মিশে যায় কয়েকটি জীবন। অনেককিছু পাল্টে যায়। ঘটনার মধ্যে দিয়ে এগোতে এগোতে তারা একজন অভদ্র ক্যাব চালককে হত্যা করে। বডি লোপাট করতে চায় লাল স্যুটকেসে পুরে। কিন্তু সমস্যা হল, তারা দুজনেই ড্রাগসের নেশায় বুঁদ। তাদের পিছনে ধাওয়া করতে থাকে পুলিশ, গুন্ডা এবং পরিবার। আর সেখানেই লুকিয়ে নানান ট্যুইস্ট, রহস্য। রূপসা এবং অমর্ত্য এই ট্রিপে একসঙ্গে পা মেলাতে গিয়ে নিজেদের অস্তিত্বের সঙ্গে সঙ্গে তাদের মধ্যে থাকা ভালবাসাকেও আবিষ্কার করে। বহু মানুষের আবেগ, যন্ত্রণা রাতের অন্ধকারে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। পরদিন ভোরে আলো ফুটলে, তারা উপলব্ধি করে, জীবনের মতো নেশা আর কিছুতেই নেই। এইভাবেই ঘটে যায় দুজনের নেশামুক্তি। গল্পটা মূলত এইরকম।
আরও পড়ুন-হঠাৎ অসুস্থ দ্রাবিড়,পাশে থাকল সিএবি
মাদক হিসাবে এলএসডি-র যথেষ্ট ‘নামডাক’ আছে। তবে এই ছবির মাধ্যমে বদলাতে চলেছে এলএসডি-র সংজ্ঞা। পরিচালক জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে এলএসডি-র সঙ্গে সম্পর্কিত ছবিগুলির খোঁজ করতে চেয়েছিলাম। এটি একটি ডার্ক কমেডি। যা বাংলায় বিরল। ছবিটির প্রতিটা শট রিয়েল লোকেশনে শ্যুট করা হয়েছে। কখনও পাবলিক টয়লেটে, কখনও যৌনপল্লিতে। কারণ সেটে শ্যুট করলে আসল ফ্লেভারটাই হারিয়ে যেতে পারত। শ্যুটিং দেখার জন্য জমে যেত লোকজনের ভিড়। সবকিছু সামলে খুব মজা করেই কাজটা করেছি আমরা। রহস্যে মোড়া হলেও, আমার কাছে এটা মূলত একটি প্রেমের গল্প। চরিত্রগুলি অন্ধকার থেকে ফিরে আসে আলোয়। খুঁজে পায় জীবনের মানে। একটি বিশেষ বার্তা দিতে চেয়েছি ছবির মাধ্যমে। যাঁরা দেখবেন তাঁরা ঠিক বুঝবেন।
আরও পড়ুন-বিরোধী নেতার বিরুদ্ধে কেন মামলা হবে না ?
সায়ন্তনের সঙ্গে আগেও কাজ করেছেন সোহম। দুজনের দারুণ বন্ডিং। সেটা বোঝা গেছে শ্যুটিংয়ে। এবার ফুটে উঠবে পর্দায়। এই ছবিতে প্রথম বার দর্শকের সামনে আসছে সোহম-সায়নী জুটি। সংবাদমাধ্যমকে সোহম জানিয়েছেন, রোমাঞ্চ ছড়িয়ে রয়েছে ছবির প্রতিটি পরতে। বাংলা ছবিতে আগে এমনভাবে গল্প বলা হয়নি। রোমাঞ্চর মোড়কে হালকা মজাও রয়েছে। সায়ন্তনের সঙ্গে এটা আমার দ্বিতীয় কাজ। কীভাবে একজন অভিনেতার কাছ থেকে কাজটা বার করে আনতে হয় এই পরিচালকের খুব ভাল জানা আছে। আমি ভবিষ্যতে আবারও সায়ন্তনের সঙ্গে কাজ করতে চাই। ব্যস্ততা রয়েছে। তার মধ্যেও করে চলেছেন একটার পর একটা কাজ। তাই খুব খুশি সায়নী।
আরও পড়ুন-দিদির সুরক্ষা কবচে আপ্লুত পাঁশকুড়া
অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করছেন কাঞ্চন মল্লিক, লাবণি সরকার, সুমিত সমাদ্দার, জুন মালিয়া, অভিজিৎ গুহ, সুভদ্রা মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। স্যাভি এই ছবিতে রয়েছেন সংগীত পরিচালনার দায়িত্বে। সিনেমাটোগ্রাফি রম্যদীপ সাহার। চিত্রনাট্য এবং গল্প সায়ন দাশগুপ্তের। জানা গেছে, ২০২৩ সালেই মুক্তি পাবে ছবিটি।