প্রতিবেদন : যেখানে বিরোধী দল ক্ষমতায় রয়েছে সেসব জায়গায় তাদের ভাতে মারার চক্রান্ত করছে বিজেপি। তোমরা আজ ক্ষমতায় আছো, তাই হিরো, একদিন ক্ষমতায় থাকবে না— সেদিন কিন্তু জিরো হয়ে যাবে, বিগ জিরো। সোমবার মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘির মাটিতে দাঁড়িয়ে বললেন মুখ্যমন্ত্রী তথা দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সঙ্গে তাঁর স্পষ্ট হুঁশিয়ারি, বদলা আমি নেব না, কিন্তু বদল আমি করবই। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে এদিন তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীদের উদ্দেশ্যে নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্পষ্ট বার্তা, লোভ করবেন না। যদি অন্যায় করে থাকেন তাহলে ক্ষমা চান। টাকা নিলে ফেরত দিন। ক্ষমা চাইলে মানুষ ক্ষমা করেন।
আরও পড়ুন-ভাঙল বাড়ি
সোমবার মুর্শিদাবাদের সভা থেকে কেন্দ্রীয় বঞ্চনা-সহ দুয়ারে সরকার নিয়ে কুৎসা, এজেন্সিকে কাজে লাগিয়ে ‘দিদির সুরক্ষা কবচ’ হেনস্তা, নদীভাঙন— এরকম একাধিক ইস্যুতে তুলোধোনা করেছেন বিজেপি-সহ বাম-কংগ্রেসকে। রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারকে কি আটকানো যায়? সোমবার সাগরদিঘিতে তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য নেত্রীর। তৃণমূল কংগ্রেসের বহু পুরনো নেতা- জেলা সভাপতি-মন্ত্রী-একাধিক দায়িত্ব সামলানো সুব্রত সাহার মৃত্যুর পরে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতেই সাগরদিঘি গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন একগুচ্ছ সরকারি পরিষেবাও এই সভা থেকে উপভোক্তাদের হাতে তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী। কেন্দ্রের বঞ্চনায় ফের সরব : ১০০ দিনের কাজের টাকা-সহ বাংলা আবাস যোজনা এবং রাজ্যের পাওনাগন্ডা নিয়ে ফের সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সাগরদিঘির সভা থেকে তাঁর তোপ— কেউ যদি মনে করে এটা বিজেপির নিজস্ব তহবিল, তাহলে ভুল ভাবছে। মানুষকে ভাতে মেরে বিজেপির এই রাজনীতি চলবে না। বাংলাকে ভাতে মারতে গিয়ে বিজেপি বাংলার মা-বোন, শ্রমিক-গরিব মজুরদের ভাতে মারছে।
আরও পড়ুন-গোটা গ্রামই যেন তাঁর পরিবার
রাম-বাম-শ্যাম : বাংলার বিরুদ্ধে বিজেপি চক্রান্ত করছে, আর তাতে শামিল হয়েছে কংগ্রেস ও বামেরাও। তিনটি দলকে এক বন্ধনীতে এনে নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তীব্র কটাক্ষ, এখন রাম-বাম-শ্যাম এক হয়েছে। এদের চিনে নিন। মানুষ এদের জবাব দেবে।
বুলডোজারের বদলে ক্লোজার : বিজেপির বুলডোজার রাজনীতির বিরুদ্ধে আবারও তোপ দাগলেন দলনেত্রী। বললেন, আমি বুলডোজারের পক্ষে নই। গণতন্ত্রে বুলডোজার চলে না। দেশের মানুষ তোমাদের ক্লোজার করবে। আমি বদলা নেব না কিন্তু বদল আমি করবই।
টাকা না দিয়ে কেন্দ্রীয় দল পাঠাচ্ছে : বাংলার পাওনা টাকা না দিয়ে রোজ একটা করে কেন্দ্রীয় দল পাঠাচ্ছে। কই গুজরাট, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, অসমে কত ঘটনা ঘটছে। সেসব জায়গায় তো কেন্দ্রীয় দল যায় না। নেত্রীর হুঁশিয়ারি, বিজেপি মনে রেখো কীভাবে টাকা জোগাড় করতে হয় আমি জানি। তোমাদের টাকা নেই তোমাদের ভোটও নেই। তৃণমূল কংগ্রেস বাঘের বাচ্চার মতো লড়ে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন-প্রবল ঠান্ডায় কাঁপছে দিল্লি
নদীভাঙন : নদীভাঙন রুখতে কেন্দ্রীয় সরকার কোনও সাহায্য করেনি। একটা টাকাও দেয়নি। ফরাক্কা চুক্তি অনুযায়ী আমাদের ৭০০ কোটি টাকা পাওয়ার কথা ছিল দেয়নি। আমরা ১০০ দিনের কাজের জন্য ওদের কাছ থেকে ৬ হাজার কোটি টাকা পাই। কাজ করিয়ে টাকা দিচ্ছে না। আমরা আমাদেরটা বুঝে নেব। আমাদের টাকা ফেরত দাও। মানুষকে বাঁচতে দাও।
দুয়ারে সরকার বিশ্বে এক নম্বর : বাংলার দুয়ারে সরকার বিশ্বে প্রথম। ‘দিদির সুরক্ষা কবচ’ শুরু হয়েছে, কোনও সমস্যা থাকলে জানাবেন, সমাধান হবে। ‘দিদির দূত’রা গ্রামে গ্রামে যাচ্ছে। মুর্শিদাবাদ জেলায় আজ অষ্টম পর্যায়ের ৫ হাজার সবুজসাথীর সাইকেল বিলি করলাম। গোটা জেলায় এক লাখ তিরিশ হাজার সাইকেল বিলি হবে। দুয়ারে সরকারে পঞ্চম পর্যায়ে আবেদনকারী ৭ হাজার ২০০ মহিলাকে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের চেক দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও একাধিক সরকারি পরিষেবা দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন-প্রবল ঠান্ডায় কাঁপছে দিল্লি
রাজনৈতিক প্রতিহিংসা : রাজনৈতিক চক্রান্ত ও প্রতিহিংসার কারণে বিরোধী দলগুলির বিরুদ্ধে এজেন্সিকে কাজে লাগাচ্ছে বিজেপি। আমাদের দুর্ভাগ্য, এই জেলায় আমরা একজনকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম। বেছে বেছে তৃণমূল নেতাদের বাড়িতে এখন ইডি-সিবিআই পাঠাচ্ছে। নাম না করে তোপ দাগেন শুভেন্দুর বিরুদ্ধে। জাকির হোসেন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। অনেক সেফ এবং সাউন্ড। ওরা বিষয়টা ঠিক বুঝে নেবে। বিড়ি শ্রমিক, গরিব চাষীদের ক’জনের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট আছে যে তাদের অ্যাকাউন্টে টাকা যাবে? তাদের তো ক্যাশেই দেওয়া হয়। বাড়িতে টাকা ছিল, থাকবেই। আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ার সাকেত গোখলেকেও একাধিকবার গ্রেফতার করেছে। দু’দিন আগে ওকে দিল্লির বঙ্গভবন থেকে ধরে নিয়ে গেছে। এমনকী গুজরাট পুলিশ সব সিসিটিভিও তুলে নিয়ে গেছে। এর পর থেকে আর কোনওদিন কোনও বিষয়ে আমাদের অনুমতি ছাড়া যেন বঙ্গভবন থেকে কোনও কিছু করতে না পারে সেটা দেখতে হবে। এই অধিকার কে দিল ওদের? রাজ্যের মুখ্যসচিবকে স্পষ্ট নির্দেশ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সোমবার ৭৯ কোটি টাকার প্রকল্পের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। সবমিলিয়ে মুর্শিদাবাদ জেলায় ৭০০ কোটি টাকার প্রকল্প দেওয়া হয়েছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী।