প্রতিবেদন : গত কয়েকদিন ধরে ভারতীয় শেয়ার বাজারে রক্তক্ষরণ৷ শেয়ার জালিয়াতির গুরুতর অভিযোগ ওঠার পর মোদিঘনিষ্ঠ দেশের অন্যতম প্রধান শিল্পপতি গৌতম আদানির (Adani Group) সবক’টি সংস্থার শেয়ারের দামে বড়সড় পতন ঘটেছে। আদানিদের বিভিন্ন সংস্থার শেয়ারের দামে পতনের কারণে বড়সড় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে জীবনবিমা নিগম বা এলআইসি। কারণ, ২৪ জানুয়ারি আদানি গ্রুপের শেয়ারে এলআইসির মোট বিনিয়োগ ছিল ৮১,২৬৮ কোটি টাকা। ২৭ জানুয়ারি যা ৬২,৬২১ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। অর্থাৎ, এলআইসি প্রায় ১৮,৬৪৬ কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। এই ক্ষতির কারণ হল, আদানিদের বিভিন্ন সংস্থায় রয়েছে এলআইসির শেয়ার বা বিনিয়োগ।
দেশের প্রায় ২৫ কোটি মানুষের বড় ভরসার জায়গা জীবনবিমা নিগম। কিন্তু সেখানে ধস নামায় মানুষের ভবিষ্যৎ কতটা সুরক্ষিত তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। জানা গিয়েছে, আদানি (Adani Group) টোটাল গ্যাসের শেয়ারে এলআইসির ক্ষতি হয়েছে ৬২৩২ কোটি টাকারও বেশি। আদানি এন্টারপ্রাইজে এলআইসির প্রায় ৪ কোটি ৮২ লক্ষ টাকার শেয়ার রয়েছে। যা সংস্থার মোট শেয়ার মূল্যের ৪.২৩ শতাংশ। সংস্থার শেয়ারের দামে বড়সড় পতন হওয়ায় এলআইসির ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৩২৪৫ কোটি টাকা। অন্যদিকে আদানিদের বন্দর বাণিজ্যে এলআইসির হাতে ছিল সংস্থার মোট শেয়ারের ৯.১৪ শতাংশ। এক্ষেত্রে জীবনবিমা নিগমের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩১০০ কোটি টাকা। একইভাবে আদানি ট্রান্সমিশনে সংস্থার ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৩০৫০ কোটি টাকা। গৌতম আদানির শক্তি সংক্রান্ত ব্যবসা আদানি গ্রিনে এলআইসির ক্ষতির পরিমাণ ৮৭৫ কোটি টাকা।
এরই মধ্যে জানা গিয়েছে, আদানি গোষ্ঠীকে সবচেয়ে বেশি ঋণ দিয়েছে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, আদানি গোষ্ঠীর এই বিপুল ক্ষতির ফলে কি এসবিআইয়ের ঋণ ঝুঁকির মুখে পড়ল? এ বিষয়ে এসবিআই–এর বক্তব্য, ঋণমূল্যের সমপরিমাণ সম্পত্তি ব্যাঙ্কের কাছে গচ্ছিত রয়েছে। ফলে ব্যাঙ্কের অর্থ সুরক্ষিত আছে।
আরও পড়ুন-সনাতন ধর্মই দেশের রাষ্ট্রধর্ম, বিতর্কিত মন্তব্য মুখ্যমন্ত্রী যোগীর
আদানি গোষ্ঠীর বিপুল শেয়ার জালিয়াতি নিয়ে যে মার্কিন বিশেষজ্ঞ সংস্থা হিন্ডেনবার্গ দাবি করেছে, তারা এর আগে বিশ্বের অন্যান্য বড় বড় আর্থিক অনিয়মও ফাঁস করেছিল৷ ফলে মোদিঘনিষ্ঠ শিল্পগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ ঘিরে শোরগোল উঠেছে৷ রক্তক্ষরণ শুরু হয়েছে শেয়ার বাজারে৷ হিন্ডেনবার্গের অভিযোগ, আদানি গোষ্ঠী তাদের বিভিন্ন সংস্থার শেয়ারের দাম কৃত্রিমভাবে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখিয়েছিল। সে কারণেই হঠাৎ করেই সংস্থার শেয়ারে বড় মাপের পতন ঘটেছে। যার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এলআইসি। মরিশাস, আরব আমিরশাহির মতো বেশ কিছু দেশে আদানি পরিবারের মালিকানাধীন বেশ কয়েকটি ভুয়ো সংস্থা রয়েছে। আয়কর ছাড়ের সুবিধা নীতেই ওই ভুয়ো সংস্থা খোলা হয়েছে। অন্যদিকে হিন্ডেনবার্গের এই বক্তব্যকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে আদানি শিল্পগোষ্ঠী। তাদের দাবি, নিতান্তই কল্পনাপ্রসূত কথাবার্তা বলেছে হিন্ডেনবার্গ। এজন্য সংশ্লিষ্ট মার্কিন গবেষণা সংস্থার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷