প্রতিবেদন : ধর্মগুরুরা ধর্মে থাকুন, রাজনীতিতে কেন? সাফ কথা তৃণমূল কংগ্রেসের। বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে তাদের কথামতো তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বৃহত্তর ও ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আইএসএফ বিধায়ক নৌশাদ সিদ্দিকি। এর পূর্ণাঙ্গ তদন্ত দাবি করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। একইসঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস চায় কোন কোন বিজেপি নেতার সঙ্গে নৌশাদের কী চ্যাট হয়েছে তার বিশদ তথ্য সামনে আনুক পুলিশ।
আরও পড়ুন-কেশপুরে আজ সভা অভিষেকের
শনিবার বিকেলে তৃণমূল ভবনে দলের তরফে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ও তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক ও মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তাঁদের স্পষ্ট অভিযোগ, বিজেপির অঙ্গুলিহেলনে ভাঙড়ে গোলমালের পরিকল্পনা করেছেন নৌশাদ। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে এর উদ্দেশ্য কী? নৌশাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে বিপুল পরিমাণ টাকা এল কোথা থেকে? কী উদ্দেশ্যে, কারা এই টাকা পাঠিয়েছে? ধর্মগুরুর চাদর পরে কেউ রাজনীতি করছে। শুধু তা-ই নয়, দেশে যে দলটা বারবার সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার চালিয়েছে, গুজরাতে দাঙ্গায় কয়েক হাজার মানুষ মেরেছে। এদের জন্য কয়েকদিন আগে দিল্লির দাঙ্গায় ৫২ জন প্রাণ হারিয়েছে সেই বিজেপির সঙ্গে সম্পর্ক রাখব আর ভোট-কাটুয়া হয়ে বাংলায় তৃণমূল কংগ্রেসের ক্ষতি করব, এসব বরদাস্ত করব না। স্পষ্ট কথা ফিরহাদ হাকিমের। তাঁর সংযোজন, ধর্মগুরু-হুজুরদের আমি, আমরা সকলে শ্রদ্ধা করি। কিন্তু রাজনীতি করলে নীতি দিয়েই বিরোধিতা হবে। তৃণমূল বিরোধিতা করতে হবে বলে দাঙ্গাবাজ— সবথেকে বেশি মানুষ খুন-করা বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে তাদের বি-টিম হয়ে আইএসএসএফ-সিপিএম-কংগ্রেস সকলে মিলে একসঙ্গে কাজ করছে।
আইএসএফ বিধায়ক নৌশাদ সিদ্দিকির মোবাইলের তথ্য ছানবিন করে একাধিক বিজেপি নেতা, বিশেষ করে দিল্লির কয়েকজন বিজেপি নেতার সঙ্গে নৌশাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট প্রকাশ্যে এনেছে লালবাজার।
আরও পড়ুন-দুর্ঘটনার কবলে রাজ্যের মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়র কনভয়
শনিবার সেই চ্যাটের কপি তুলে ধরে ফিরহাদ হাকিম বলেন, আইএসএফের জোটসঙ্গী সিপিএম। অথচ বাংলাকে অশান্ত করার জন্য নৌশাদ গোপন আঁতাঁত করেছে বিজেপির সঙ্গে, যা বিশ্বাসঘাতকতার শামিল। জানতে চাই এই বুদ্ধি কার? আগে জানতাম হায়দরাবাদে ওয়াইসির দল মিম বিজেপির বি-টিম হয়ে ভোট কাটে। এখন দেখছি নৌশাদরাও বিজেপির বি-টিম হয়ে ভোট-কাটুয়া হতে চাইছে। কুণাল ঘোষের স্পষ্ট দাবি, নৌশাদের বিপুল টাকার উৎস কী জানতে চাই। বিজেপির কোন কোন নেতার সঙ্গে কী কথা হয়েছে পুলিশ প্রকাশ্যে আনুক। যারা সংখ্যালঘুদের বন্ধু সেজে মুখোশ পরে বিবৃতি দিচ্ছে সেই দিলীপ-সুকান্ত-শুভেন্দু-মিঠুনরা আগে বলুক সিএএ-এনআরসি হবে না। তারপর বাকি কথা হবে। কুণালের সংযোজন— ফুরফুরা শরিফের পিরজাদা হুজুরদের সঙ্গে আমারও খুব ভাল সম্পর্ক। তাঁরা ধর্মগুরু, তাঁদের শ্রদ্ধা করি। কিন্তু তাঁরা যখন রাস্তা অবরোধ করে লক্ষ লক্ষ মানুষকে বিপদে ফেলে রাজনীতি করবেন তখন তাঁদের সমালোচনা করলে, তাঁরা যেন অসম্মানিত বোধ না করেন। ধর্মগুরুরা ধর্মে থাকুন, রাজনীতিতে কেন? এরপরই ফিরহাদ হাকিম বলেন, যে শুভেন্দু বলেছিল নন্দীগ্রামে আমার ৩০ শতাংশের ভোট চাই না ৭০ শতাংশের ভোট হলেই চলবে— সেই শুভেন্দু এখন বলছে মুসলমানরা মাঠে নামুক। ও কী মনে করে নিজেকে? আমরা বোকা! সংখ্যালঘু ভোট চাই! মুসলমানরা কোনওদিন বিজেপিকে বিশ্বাস করেনি। করবেও না। তৃণমূল কংগ্রেস ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী। আমরা মানুষের সেন্টিমেন্ট নিয়ে খেলি না। নৌশাদরা বিজেপির হাত শক্ত করছে।
আরও পড়ুন-আদানি ইস্যু: উত্তাল সংসদ, সোমবার পর্যন্ত মুলতুবি লোকসভা
তৃণমূল কংগ্রেসের তিন দাবি
* ধৃত আইএসএফ বিধায়ক নৌশাদের অ্যাকাউন্টে বিপুল পরিমাণ অর্থ। এই অর্থ কোথা থেকে এল পুলিশ তা প্রকাশ্যে আনুক
* নৌশাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট প্রমাণ করছে, বিজেপির দিল্লির নেতাদের সঙ্গে নানা কথা হয়েছে। নৌশাদের কাদের সঙ্গে কী কথা হয়েছে তা মানুষকে জানানো হোক
* যারা সংখ্যালঘুদের বন্ধু সেজে মুখোশ পরে বিবৃতি দিচ্ছে, তারা বলুক সিএএ আর এনআরসি লাগু হবে না