অলোক সরকার: তিনি বলেন মনের জোর। যেটা আছে বলে কেরিয়ারের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়েও এখনও লড়ে যাচ্ছেন!
তিনি মনোজ তিওয়ারি (Manoj Tiwary)। রাজনীতিক, মন্ত্রী ও বাংলার অধিনায়ক। ইডেনে শেষবেলায় যখন ব্যাট করতে নামলেন, বাংলা (West Bengal- Saurashtra) ৪৭/৩। সেই তিনি দিনের শেষে ক্লান্ত শরীরটাকে যখন টেনে নিয়ে এলেন ড্রেসিংরুমে, বাংলা ১৬৯/৪। মনোজ অপরাজিত ৫১ রানে। ১০৭ বল। ৮টি চার। তবে এসব তথ্য দিয়ে মধ্য তিরিশের বঙ্গ অধিনায়ককে মাপার দরকার নেই। চরম ব্যর্থ বোলিং লাইন-আপ, ততোধিক ব্যর্থ টপ অর্ডার বাটিংয়ের মধ্যে অনুষ্টুপ মজুমদারকে নিয়ে একা লড়ে গেলেন।
এখনও ৬১ রান দরকার সৌরাষ্ট্রকে ফের ব্যাট করাতে। সুতরাং বহুদূর বাকি লড়াইয়ের। মনোজ-শাহবাজ জুটির পর স্বীকৃত ব্যাটার শুধু অভিষেক পোড়েল। বঙ্গ শিবির থেকে মনোজকে ঘিরে তবু আশার বাতাস বইছে। তবে বিপক্ষ কোচ নীরজ ওদেদ্রা সেটাকে খুব একটা পাত্তা দিচ্ছেন বলে মনে হল না। ইডেন ছেড়ে বেরোনোর সময় বলে গেলেন, ‘‘আর দুটো উইকেট। আমরা ঠিক জায়গায় রয়েছি। তবে এটা পাঁচ দিনের ম্যাচ। এটাও মাথায় রাখতে হচ্ছে।”
দুপুরে অনুষ্টুপ আর মনোজ যখন দারুণ একটা পার্টনারশিপ গড়ে তুলেছেন, তখন অনেকে ২০০১-এর ভারত-অস্ট্রেলিয়া ঐতিহাসিক টেস্ট ম্যাচের কথা মনে করতে শুরু করেছিলেন। ফলো অনের পর ভিভিএস লক্ষ্মণ আর রাহুল দ্রাবিড় মিলে ভারতকে অসাধারণ জয় এনে দিয়েছিলেন। কিন্তু ব্যাপারটা সেদিকে গেল না। অনুষ্টুপ (৬১) যখন লম্বা ইনিংসের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন, তখনই উইকেট দিয়ে গেলেন উনাদকাটকে। ৯৯ রানের পার্টনারশিপটা থেমে গেল এখানেই। অনুষ্টুপ ফিরে আসতেই হতাশায় মাথা ঝাঁকালেন কোচ লক্ষ্মী। স্বাভাবিক। বাংলা তখনও ৮৪ রানে পিছিয়ে।
মরশুম জুড়ে ওপেনারের খোঁজ চালিয়েছে বঙ্গ টিম ম্যানেজমেন্ট। কম করেও সাত-আটজনকে অভিমন্যু ঈশ্বরণের পার্টনার করার পর নিট ফল অবশ্য শূন্য। ফাইনালে এসেও এই সমস্যার কোনও সমাধান হয়নি। এদিন যেমন সুমন্ত গুপ্ত ফিরে গেলেন ১ রানে। দলের রানও তখন ১। প্রথম ইনিংসে এই রান করেছিলেন বড়িশার ব্যাটার। দুই ইনিংস মিলিয়ে ১১ বল খেলে অবদান ২। দুম করে ক্লাব ক্রিকেট থেকে সোজা রঞ্জি ফাইনালে নামিয়ে দেওয়ার চাপ নিতে পারেননি তিনি।
আরও পড়ুন: ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার আতসুর দেহ
চাপটা অবশ্য আরও বেড়ে যায় ৪৭ রানের মধ্যে বাংলার (West Bengal- Saurashtra) ৩ উইকেট চলে যাওয়ায়। সুমন্তর পর আউট হলেন অভিমন্যু (১৬)। তারপর সুদীপ (১৪)। সেই জয়দীপ উনাদকাট আর চেতন শাকারিয়া বাঁহাতি ডায়গোনাল ডেলিভারিতে ধাক্কা দিয়ে গেলেন। ১৫.৪ ওভারের মধ্যে তিন উইকেট হারিয়ে বাংলা তখন সত্যিই চাপে।
সকালে সৌরাষ্ট্র নিজেদের ইনিংস শেষ করেছে ৪০৪ রানে। তাদের লিড ২৩০ রানের। সৌরাষ্ট্রের রানটা আরেকটু কম হত। হয়নি বঙ্গ ফিল্ডিংয়ের সৌজন্যে। গোটা দুয়েক ক্যাচ পড়ল এদিন। লক্ষ্মীরতন শুক্লা এই ফিল্ডিংয়ের কথাই বলছিলেন দ্বিতীয় দিনের শেষে। দেখা গেল ফিল্ডিং আছে সেই তিমিরেই!
সকালে ২৩ ওভার খেলেছে সৌরাষ্ট্র। তাতে ৮৭ রান উঠেছে পাঁচ উইকেট হারিয়ে। সৌরাষ্ট্রকে যত তাড়াতাড়ি পারা যায় অল আউট করার লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন মুকেশ-আকাশদীপরা। তাতে আংশিক সফল। একটা সেশনের মধ্যেই গুটিয়ে দেওয়া গেল বিপক্ষের বাকি অর্ধেক ইনিংস। কিন্তু আগের দিন সৌরাষ্ট্র পাঁচ উইকেটে ৩১৭ রান তুলে দেওয়ার পর চাপটা থেকেই গেল। দু’শোর বেশি রানের লিড চাপের বিষয়। যেটা টের পাওয়া গেল প্রথম বল থেকে।
আগের দিনের দুই নট আউট ব্যাটারের মধ্যে প্রথমজন আউট হলেন অর্পিত বাসবদা (৮১)। মুকেশের বলে তাঁর ক্যাচ নেন অভিষেক পোড়েল। পরের উইকেটটা চিরাগ জনির (৬০)। সেই এক কম্বিনেশন। কট অভিষেক পোড়েল বোল্ড মুকেশ কুমার। এরপর প্রেরক মানকর (৩৩) আর ধর্মেন্দ্র সিং জাদেজা (২৯) যা কিছু রান করে গেলেন। আর তাতেই সৌরাষ্ট্র ইনিংস শেষ ৪০৪ রানে।
মুকেশ ১১১ রানে ৪ উইকেট নিয়ে গেলেন। ৩ উইকেট আকাশদীপ ও ঈশান পোড়েলের। বঙ্গ সিমাররা উইকেট নিলেও সেই ঝাঁজ দেখা যায়নি, যা উনাদকাট-শাকারিয়ার বোলিংয়ে ছিল। থাকলে সৌরাষ্ট্র চারশো পার করতে পারত না। বাংলাকেও এই বিপাকে পড়ত হত না!