বাবুই পাখিরে ডাকি
বলিছে চড়াই,
‘‘কুঁড়ে ঘরে থেকে করো
শিল্পের বড়াই,
আমি থাকি হাসিমুখে
অট্টালিকা পরে
তুমি কত কষ্ট পাও
রোদ, বৃষ্টি, ঝড়ে।”
আরও পড়ুন-বিপ্লবী জীবনের অজানা কথা
সেই কৈশোরে এই কবিতা পড়ে বুঝে অথবা না বুঝে আমরা বাবুই পাখিকে সমর্থন করতাম, কেননা সে স্বাধীন থাকতে চায়। কষ্টে বাঁচে, কিন্তু কারও দয়ায় বাঁচতে চায় না। আজও আমরা বাবুই পাখিকে খড়কুটো সংগ্রহ করে অসামান্য শিল্পসমৃদ্ধ বাসা বানাতে দেখি। কিন্তু চড়ুই আর দেখতে পাই না। চড়ুইগুলো সব গেল কোথায়? কোথায় উধাও হল তারা? চলে গেল কোন নিরুদ্দেশে? কেন? মানুষের প্রতি অভিমানে কি তারা বিদায় নিল? উদার প্রকৃতির বুকে থেকে গেল আর সমস্ত পশুপাখি, প্রাণী এমনকী অতি ক্ষুদ্র কীটাণুকীটেরাও। শুধু হতভাগ্য চড়ুইদেরই স্থান সঙ্কুলান হল না? হায় চড়ুই, বিপন্ন বিষণ্ণ চড়ুই, হায় আদরের ‘স্প্যারো’! কোথায় চলে গেলে তোমরা?
আরও পড়ুন-প্রসঙ্গ : চিরঞ্জিত
কতদিন ঘাসে আর মাঠে আমার উৎসাহে প্রাণ কাটে,
খড় খুঁটি— অশ্বত্থের শুকনো
পাতা চুপে উল্টাই
দু-একটা পোকা যদি পাই
আমারে চেন না নাকি;
আমি যে চড়াই।
এমন পরিবেশবান্ধব, এমন উপকারী মানুষের নিত্যসহচর আদুরে পাখিগুলো যদি প্রকৃতি থেকে একেবারে বিলুপ্ত হয়ে যায় তাহলে খুব একটা বড় ক্ষতি কি হবে জগতের?
হ্যাঁ, বিরাট ক্ষতি হবে। সেই অভিজ্ঞতা ইতিমধ্যেই হয়েছে মানবজাতির।
আরও পড়ুন-গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূল কংগ্রেসের জয় নিশ্চিত
চড়ুই পাখি ফসল খেয়ে সর্বনাশ ডেকে আনে, এই ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী হয়ে ১৯৫৮ সালে চিনদেশে অসংখ্য চড়ুই নিধন করা হয়।
কেননা, একটি চড়ুই বছরে চার থেকে পাঁচ কেজি শস্য খায়। তাই চড়ুই হত্যার জন্য সেই দেশে তৈরি হয় ‘স্প্যারো আর্মি’। বিভিন্ন পদ্ধতিতে চড়ুই মারা হতে থাকে। খুব জোরে জোরে ড্রাম বাজাতেই উড়ে উড়ে ক্লান্ত চড়ুইয়েরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে মাটিতে পড়তে থাকে। জাল দিয়েও ধরা হয় অসংখ্য চড়ুই। ডিম নষ্ট করা হয়। বন্দুক দিয়েও মারা হয়।
একসময় চড়ুইশূন্য হয় চিন। ১৯৬১-’৬২ সাল। চিনে দেখা দেয় দুর্ভিক্ষ। মারা যায় ২০ থেকে ৩০ মিলিয়ন মানুষ। ফসলের খেতে বিভিন্ন ক্ষতিকর পোকামাকড়ের উপদ্রব এতটাই বেড়ে যায় যে ফসল আর তোলাই সম্ভব হয় না। দুর্ভিক্ষ আর মৃত্যুমিছিলে বিপর্যস্ত হয়ে টনক নড়ে চিনের। নিরুপায় হয়ে দেশে চড়ুই ফিরিয়ে আনতে অন্যান্য দেশ থেকে চড়ুই আমদানি করতে বাধ্য হয় তারা।
চড়ুই প্রধানত শস্যদানা, ঘাসের বীজের পাশাপাশি অসংখ্য পোকামাকড় খেয়ে থাকে। বিশেষ করে পোকার শূককীট, মুককীট বা লেদাপোকা, যারা শস্য উৎপাদনের অন্তরায়। এরা যেসব পোকামাকড় খায় তাদের মধ্যে বিটল পোকা, ছারপোকা, পিঁপড়ে, মাছি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এসব পোকার ক্ষতিকর আক্রমণ থেকে ফসল, শাকসবজির খেত ও বনাঞ্চল বাঁচিয়ে পরিবেশ ও অর্থনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে চড়ুই।
আরও পড়ুন-গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূল কংগ্রেসের জয় নিশ্চিত
কতদিন তোমাদের
ভোরের উঠানে
দু-একটা খই আর
মুড়কির ঘ্রাণে
উড়ে আসি চুপে
দেখি কোনো রূপে
চাল ডাল ছোলা খুদ
খুঁজে পাই কিনা
ঝুরঝুর ক’রে ফুল
ঝরায় সজিনা
থুপ্ থুপ্ থুপ্ থুপ্—
একাকী লাফাই
ঘুম নাই— চোখে ক্লান্তি নাই…
আরও পড়ুন-আজ ভার্চুয়াল বৈঠকে নেত্রী
এমন জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ মহামূল্যবান পাখি , পরিবেশের ও প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় যুগে যুগে যাদের অবদান অপরিসীম, তাদের তো যে কোনও মূল্যে বাঁচিয়ে রাখতে হয়। রক্ষা করতে হয়। সংরক্ষণ করতে হয়। সেই ভাবনা থেকেই জন্ম নেয়
‘বিশ্ব চড়ুই দিবস’ উদযাপনের সংকল্প। হারিয়ে যেতে বসা এই ছোট্ট পাখিদের প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধি করতে প্রতি বছর ২০ মার্চ পালিত হয় বিশ্ব চড়ুই দিবস (World Sparrow Day)। ২০১০ সালে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে প্রথম পালিত হয় চড়ুই দিবস। মোবাইল টাওয়ারের বাড়বাড়ন্ত এবং শব্দদূষণ বৃদ্ধির কারণে চড়ুই পাখিরা প্রায় বিলুপ্তির পথে। ন্যাশনাল ফরএভার সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া ও ফ্রান্সের ইকো-সিস অ্যাকশন ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় এক আন্তর্জাতিক উদ্যোগ হিসেবে বিশ্ব চড়ুই দিবসের সূচনা হয়। বিশ্ব জুড়ে আরও অনেক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা চড়ুই-সহ বিলুপ্তির মুখে থাকা অন্যান্য পাখি সম্পর্কেও সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে। চড়ুই সংরক্ষণের সচেতনতা বাড়িয়ে তোলার এই বৃহৎ উদ্যোগ সমগ্র মানবসভ্যতার পক্ষে অতীব তাৎপর্যপূর্ণ। ব্রিটেনের ‘রয়্যাল সোসাইটি অফ প্রোটেকশন অফ বার্ডস’ লাল তালিকাভুক্ত করেছে চড়ুইকে। যতই দিন এগোচ্ছে, একদিকে গ্লোবাল ওয়ার্মিং, গাছ কেটে নগর তৈরি এবং ডিজিটালাইজেশনের দৌলতে মোবাইল টাওয়ার থেকে বেরিয়ে আসা তরঙ্গ পাখিদের মারণাস্ত্র। এসব ক্ষতি থেকে পাখিদের বাঁচাতেই হবে। অস্ট্রেলিয়া থেকে উত্তর আমেরিকা পর্যন্ত বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশে একসময় চড়ুইয়ের আধিক্য ছিল। এই আধিক্যের ফলেই তারা ‘কমন হাউস স্প্যারো’ নামে পরিচিত ছিল। কিন্তু এখন দিনে দিনে এরা ক্রমশ লুপ্তপ্রায়। ভারতও এর ব্যাতিক্রম নয়। নগরোন্নয়ন, উচ্চ দূষণমাত্রা, সারা পৃথিবীর উষ্ণতা ও পরিবেশগত ক্ষতির কারণে এদেরকে ক্রম-অবলুপ্তি থেকে রক্ষা করাই এখন মানুষের প্রধান চিন্তা।
আরও পড়ুন-সমর্থকদের ট্রফি উৎসর্গ দিমিত্রিদের, গোয়েঙ্কার উপহার, সরে গেল এটিকে
তোমাদের এত কী আমোদ।
ছোটো ছোটো ছেলে আর
মেয়েদের দল
উঠানে কিসের এত ভিড়
ছোটো ছোটো ছেলেমেয়ে—
তোমাদের নরম শরীর
হাতে তবু পাটকেল— ঢিল?
আমারে তাড়াও কেন?
আমি বুঝি দাঁড়কাক চিল!
আরও পড়ুন-মোহনবাগান থেকে সরল ATK, বেঙ্গালুরুকে হারিয়ে আইএসএল সবুজ-মেরুনের
পৃথিবীর সর্বব্যাপী পাখিদের অন্যতম চড়ুই। মানুষের প্রাচীন সহচর। গৃহস্থালি চড়ুই। মানুষের কাছাকাছি থাকতে এরা ভীষণ ভালবাসে। খড়কুটো, শুকনো ঘাসপাতা দিয়ে কড়িকাঠে, কার্নিশে কার্নিশে বাসা বানায়, বসবাস করে। সারাক্ষণ কিচিরমিচির গান গায় আর লাফিয়ে বেড়ায়। একটুও অবসর নেই তাদের, নেই ছুটি। ভারি মিষ্টি, আদুরে, আনন্দময় ও পরোপকারী এই পাখিরা আজ মানুষের থেকে অনেক দূরে সরে গেছে নানা কারণে। তাদের পতন আমাদের চারপাশের পরিবেশের ক্রম-অবক্ষয়ের সূচক। গবেষণায় দেখা গেছে মোবাইল টাওয়ারের পাশে চড়াইয়ের বাসায় ডিম ফুটতে চায় না। চড়ুইয়ের শরীরে টাওয়ারের ইলেকট্রো-ম্যাগনেটিক রশ্মি ভীষণ নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। পুরোনো বাড়িগুলো বিলুপ্ত হচ্ছে, বাগান কমছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গাছকাটা হচ্ছে, তাহলে কোথায় আশ্রয় নেবে এরা? খেতজমি যেটুকু আছে সেখানেও অতিরিক্ত কীটনাশকের ব্যবহারে চড়ুইদের খাদ্যসংকট তৈরি হচ্ছে। বাড়ির ঘুলঘুলি ও ভেন্টিলেটরের ধারণাও এখন এই আধুনিক নগরোন্নয়ন পরিকল্পনায় অনেকটাই বদলে গেছে। মোবাইল অপারেটরদের টাওয়ারগুলো যেখান দিয়ে তরঙ্গ প্রবাহিত করে সেই জায়গাগুলোই চড়াইদের ওড়ার জন্য প্রকৃত উচ্চতা। ফলে তারা বেশিরভাগ সময়েই সাবলীলভাবে উড়তে পারে না। পথ হারায়, ভয় পায় উড়তে। ইদানীং আবার জলাধারগুলো ভরাট করে চলে কল-কারখানা ও বাড়িনির্মাণ। ফলে তেষ্টা মেটানোর জলটুকু পর্যন্ত পাচ্ছে না হতভাগ্য চড়ুইয়েরা। পাচ্ছে না খাদ্য। এ-রকম নানা কারণে আমাদের চিরপ্রতিবেশী এই পাখিরা চলে যাচ্ছে দূরে । আমরা কি এদের জন্য প্রতিদিন বাড়িতে বেঁচে যাওয়া কিছু ভাত এবং সঙ্গে কিছু পরিমাণ জল রেখে দিতে পারি না বারান্দায়, ছাদে, উঠোনে, বাগানে ও সামনের রাস্তায়? তাহলেই কিন্তু এরা আবার ফিরে আসার ভরসা ও আশ্বাস পেতে পারে। অথচ এমনই নির্দয় আমরা যে একটু করতেও আমাদের আশ্চর্য অনীহা। ধুলো-ধোঁয়ার দূষণে আক্রান্ত এই নিরীহ ও সুবোধ পাখিদের দল আজ চরম সংকটাপন্ন।
আরও পড়ুন-এবার স্বাবলম্বী হতে নয়া উদ্যোগ, ১ এপ্রিল থেকে আবেদন শুরু,রাজ্যে ভবিষ্যৎ ক্রেডিট কার্ড
কংক্রিট নগরীতে এরা ছিন্নমূল। মানুষের আরাম-বিলাসের অগণিত শীততাপনিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের নির্মম আগ্রাসন তো আছেই। জলাধার, খাবার, ঝোপঝাড়, কার্নিশ, চিলেকোঠা, বারান্দা, ছাদ, উঠোন, বাগান— কিছুই আর সহজলভ্য নয় ওদের কাছে আজ। কোথায় বাসাঘর বানাবে ওরা? থাকবে কোথায়? ডিম পাড়বে কোথায়? মাত্র পাঁচ-ছয় বছর তো বাঁচে এরা। সেটুকু বাঁচাও কি একটু শান্তি ও আনন্দের হতে পারে না এদের? মানুষের লোভের শেষ কোথায়?
এখানে কার্নিশে আমারে ঘুমাতে দেবে ভাই
আমি যে চড়াই—
থাক ঘুম— যাই উড়ে যাই
আমি যে চড়াই। ঘুম নাই
চোখে ক্লান্তি নাই
কাঠমল্লিকায়
কাঁঠালী শাখায় করবীর বনে
হিজলের সনে বেগুনের ভিড়ে ঘাসের শরীরে
যাই-যাই-যাই
চাই-চাই-চাই
গাই-গাই-গাই
ঘুম নাই— নাই
আমি যে চড়াই।
আরও পড়ুন-সমর্থকদের ট্রফি উৎসর্গ দিমিত্রিদের, গোয়েঙ্কার উপহার, সরে গেল এটিকে
চড়ুই পাখি আকারে ছোট্ট। এদের মসৃণ গোলাকার মাথা ও গোলাকার ডানা। এরা গান গায় মিষ্টি সুরে। এদের প্রকৃতি চঞ্চল। চড়ুই বা চড়াইদের সম্পর্কে যে বৈজ্ঞানিক তথ্যগুলি পাওয়া যায় তাতে দেখা যায় যে passer-গণের যেকোনও প্রজাতিকেই Sparrow, (House Sparrow) চড়ুই বলা হয়। সারা বিশ্ব জুড়ে বহু রকমের চড়ুই দেখা যায়। দেশের বিচারে ও বসবাসের প্রকৃতি অনুসারে নানা নামে এদের ডাকা হয়। সাধারণত এদের গায়ের রঙ বাদামি ধূসর হয়ে থাকে। প্রজাতিভেদে অবশ্য কিছু রঙের হেরফের দেখা যায়। এদের লেজ খাটো। প্রজাতি ভেদে এদের দৈর্ঘ্য ১১ থেকে ১৮ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। ওজনের বিচারেও হেরফের হতে পারে। ১৩.৪ গ্রাম থেকে ৪০ গ্রাম অবধি এদের ওজন হতে পারে। কখনও কখনও অনেক চড়ুই একসঙ্গে দেখা গেলেও এরা কোনও দলের অন্তর্গত হয়ে বসবাস করে না। পুরুষ-চড়ুই স্ত্রী-চড়ুইয়ের চেয়ে আকারে একটু বড় হয়। এরা প্রধানত খাদ্যশস্য, ফুলের কুঁড়ি, বাদাম জাতীয় ফল ইত্যাদি আহার করে। সারাদিনে একটি চড়ুই মাত্র পাঁচ থেকে সাত গ্রাম খাবার খায়। এদের বৈজ্ঞানিক নাম : Passer domesticus। স্ত্রী-চড়ুই একসঙ্গে ৩ থেকে ৫টি ডিম প্রসব করে।
আরও পড়ুন-ছাত্র-যুবর প্রস্তুতি বৈঠক
চতুর চড়ুই এক ঘুরেফিরে আমার ঘরেই বাসা বাঁধে। অন্ধকার ঠোঁটে নিয়ে সন্ধ্যা ফেরে যেই সেও ফেরে;
এ বাড়ির খড়কুটো,
ও বাড়ির ধান
ছড়ায় শব্দের টুকরো
ঘর জুড়ে কিচিমিচি গান।
আরও পড়ুন-লং মার্চে অংশ নিয়ে প্রাণ হারালেন কৃষক
পরিবেশ বিজ্ঞানীরা, সমাজতাত্ত্বিক ও রাষ্ট্রনায়কেরা দেশ, সমাজ তথা বিশ্ব পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে ‘বিশ্ব চড়ুই দিবস’ উপলক্ষে যে সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন তা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। তবে আমাদের কিন্তু শুরু করতে হবে একেবারে শূন্য থেকে অর্থাৎ নিজের নিজের বাড়ি থেকে। বিলুপ্তির মুখ থেকে চড়াইদের রক্ষা তথা সংরক্ষণ এবং তাদের আবার প্রকৃতিতে মর্যাদার সঙ্গে ফিরিয়ে আনার কাজ শুরু করতে হবে এই মুহূর্ত থেকে। পাড়া, এলাকা, মহল্লা, আবহমান গ্রাম-বাংলার মাঠে, ঘাটে, খেতে, খামারে, বাগানে ও গাছে গাছে চড়ুইবন্ধুদের ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতেই হবে। উদ্যোগ নিতে হবে শহরে, নগরে ও বিস্তীর্ণ মফসসলে। এমন নরম ও তুলতুলে ছটফটে মায়াবী পাখিদের আত্মীয়তা আমাদের সমস্ত প্রজন্মের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যেও খুবই প্রয়োজন। ছোট-বড়ো সব পড়ুয়ার মনে জাগিয়ে তুলতে হবে চড়ুইবন্ধুদের প্রতি স্নেহমমতা ও অকৃত্রিম ভালবাসা। বোঝাতে হবে এই পাখিরা আমাদের বেঁচে থাকার অর্থাৎ আমাদের অস্তিত্বের এক অতি-গুরুত্বপূর্ণ অংশ যা একইসঙ্গে অবিচ্ছেদ্য। এরা খাদ্য, জল ও উপযুক্ত আশ্রয় পেয়ে নির্ভয়ে বাধাহীন উড়তে পারলে আমরাও ভাল থাকব। এদের অনলস কর্মচঞ্চলতা আমাদের নিত্যদিনের কর্তব্যকর্মে যেন প্রাণিত ও ঋদ্ধ করে অতীতের মতোই, সেই ব্যাপারেও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে আমাদের সকলকেই। স্কুলস্তরে ক্যুইজ থেকে বসে আঁকো প্রতিযোগিতায়, নাচে-গানে ও কবিতায় চড়ুইকে প্রধান বিষয় করে তোলার উদ্যোগ নেওয়া যেতেই পারে। মোটকথা যে কোনও মূল্যে চড়ুই-হত্যা বন্ধ করতে হবে। চড়ুই যে মানুষের কাছে এসে ভুল করেনি, সেটা প্রমাণ করার দায় মানুষেরই।