মণীশ কীর্তনিয়া, ভুবনেশ্বর: দেশের স্থায়ী যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে সুরক্ষিত ও শক্তিশালী রাখার ব্যাপারে তাঁরা দু’জনেই সহমত হয়েছেন। বাংলা-ওড়িশা দুই পড়শি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর মেগা বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে নিজেরাই বললেন সেকথা। একইসঙ্গে দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা ও তাঁদের নিরাপত্তার দিকটি সুনিশ্চিত করা নিয়েও তাঁরা আলোচনা করেছেন বলে জানালেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক (Naveen Patnaik- Mamata Banerjee)। বৃহস্পতিবার ভুবনেশ্বরে ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েকের বাড়ি ‘নবীন নিবাস’-এ পাক্কা আধ ঘণ্টার এই মেগা বৈঠকে আলোচনা হল বাংলা-ওড়িশা দুই পড়শি রাজ্যের মধ্যে পারস্পারিক সম্পর্ক আরও মজবুত করতে হবে এবং তার জন্য প্রশাসনিক স্তরে আরও যা পদক্ষেপের প্রয়োজন তাও করা হবে বলে জানিয়েছেন দু’জনেই। এই পর্বেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রীকে বাংলা-ওড়িশার মধ্যে ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল করিডর’ তৈরির কথা বলেন। তাতে সহমত হন নবীন পট্টনায়েকও। এদিন পুরী থেকে রওনা হয়ে ঠিক বিকেল ৪.৩০ মিনিটে ভুবনেশ্বরে নবীন ভবনে ঢোকেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠকের শুরুতেই নবীন পট্টনায়েকের হাতে লৌহ আকরিক নিয়ে মার্চেন্ট চেম্বার অফ কমার্সের একটি ফাইল তুলে দেন। এছাড়াও পুরীতে প্রস্তাবিত গেস্ট হাউস সংক্রান্ত কাগজপত্রও ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Naveen Patnaik- Mamata Banerjee)। মুখ্যমন্ত্রী যার নাম দিয়েছেন ‘বিশ্ববাংলা ভবন’। এই গেস্ট হাউস তৈরির জন্য ২ একর জমি নিচ্ছে বাংলা। সাংবাদিক বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রশ্ন করা হয়, তাঁদের দু’জনের মধ্যে রাজনৈতিক আলোচনা কী হল? তাঁরা কি তৃতীয় ফ্রন্ট নিয়ে কোনও আলোচনা করলেন? উত্তরে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনের এখনও এক বছর দেরি। এখনই এসব নিয়ে আলোচনার কী আছে। এরপরই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তাত্পর্যপূর্ণ মন্তব্য, আমরা যা আলোচনা করেছি এভাবে এখানে দাঁড়িয়ে সবটা বলতে পারি না। কারণ আমরা দু’জনেই বেশ কিছু বিষয়ে একমত হয়েছি। কিন্তু সব বিষয়ে যে নবীনজি একমত হবেন তা নাও হতে পারে। আমি একা যখন বলব তখন আপনাদের সব কথার উত্তর দেব। আপনাদের জন্য ‘উত্তরের গোল্ডেন বক্স’ অপেক্ষা করছে। নবীন পট্টনায়ক বলেন, আমরা দু’জনেই দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে শক্তিশালী ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় মানুষের অধিকারকে সুরক্ষিত রাখার বিষয়ে একমত।
আরও পড়ুন: ক্যাগ রিপোর্টে ফেঁসে গেল বামেদের বেলুন
এদিন মমতা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খানিকটা স্মৃতিমেদুর হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, আমি যখন প্রথম সাংসদ হয়েছিলাম তখন বিজু পট্টনায়ক আমায় এখানে আমন্ত্রণ করেছিলেন। আমি এসেছিলাম। সেই স্মৃতি কখনও ভোলার নয়। মুখ্যমন্ত্রীর সংযোজন, আমি নবীনজিকে বলেছি, দিঘায় আমরা জগন্নাথ মন্দির তৈরি করছি। তাঁকে ওখানে আসার আমন্ত্রণও জানিয়েছি। আমাদের দুই রাজ্যের সম্পর্ক- বন্ধন অটুট থাকবে। লৌহ আকরিকের জোগান নিয়ে শিল্পপতিরা আমায় বলেছিলেন। সেকথাও বললাম নবীনজিকে। সেই সঙ্গে তিনি যোগ করেন, পুরীতে পুজো দেওয়া- জমি পরিদর্শন সহ যাবতীয় সব বিষয়ে যেভাবে নবীনজি আয়োজন করেছেন তাতে আমি অভিভূত। সব মিলিয়ে বাংলার পড়শি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে নতুন পথচলার শুরুয়াত হল একরকম। এর আগেও তিনি এখানে এসেছিলেন কিন্তু এবারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তিনদিনের ওড়িশা সফর ছিল অন্য মেজাজ ও অন্য সুরে বাঁধা।