অলোক সরকার: তিনি ঘুরছেন এই নেট থেকে অন্য নেটে। তাঁর সঙ্গে আঠার মতো সেঁটে আছে দুটো ব্যাট। তিনি বিরাট কোহলি। এক ঘণ্টায় সোনালি হেলমেট পরে তিন নেট ঘুরেও যাঁর ক্লান্তির কোনও লক্ষণ নেই!
থাকার কথা নয়। আরসিবি ছাড়ুন, ভারতীয় ক্রিকেটের সবথেকে ফিট ক্রিকেটার। ইয়ো-ইয়ো টেস্টে এক নম্বর। যাঁর সম্পর্কে অনেক গল্পের মধ্যে একটা এইরকম, দেশের মাঠে এক রাতের ম্যাচ। এক প্রাক্তন মহাতারকা কমেন্ট্রি টিমে ছিলেন। কাজ সেরে অনেক রাতে হোটেলে ফিরে তিনি দেখেন মাঠ থেকে ফিরে বিরাট ঘরে না গিয়ে সোজা জিমে ঢুকে পড়েছেন। ফিটনেস নিয়ে এই পাগলামি থাকলে ক্লান্তি আসে কী করে!
এমনিতে আর পাঁচটা কেকেআর (KKR- RCB) ম্যাচের মতোই ছবি ইডেনের। ক্লাব হাউসের সামনেটা মুড়ে ফেলা হয়েছে বেগুনি-হলুদ ব্যানারে। একটা হোর্ডিং চোখ টানতে বাধ্য। তাতে লেখা, ‘বাড়ি ফিরছি এবার, আমি কেকেআর’। চার বছর বাদে নাইটরা হোম ম্যাচ খেলবে ইডেনে। আর প্রথম ম্যাচেই কেকেআর ভক্তদের সামনে শ্যাম রাখি না কুল রাখির প্রশ্ন। হৃদয়ে নাইট, আবেগে বিরাট। ধোনির মতোই বিরাট-ভক্তরা ছড়িয়ে গোটা দেশে। বিরাট টানে ক্লাব হাউসের গেটে বিকেল গড়িয়ে রাতেও ভিড়। যদি দেখা মেলে নায়কের!
আরও পড়ুন- শিখরের দাপটে জিতল পাঞ্জাব
মুশকিলে পড়েছেন আকাশ দীপ সিং। ক’দিন আগে ইডেনে রঞ্জি ফাইনাল খেলেছেন। আর এখন হোম ড্রেসিংরুম ছেড়ে ভিজিটর্স ড্রেসিংরুমে উঠেছেন। বঙ্গ ক্রিকেটার আরসিবির হয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে এসে বলছিলেন, ‘‘এটাই আমার হোম গ্রাউন্ড। এই মাঠকে আমি এতদিন চিনি।” কিন্তু আইপিএলে এটা হয়। পান্ডিয়া, চাহাররা দুই ভাই দু’দলে ছড়িয়ে পড়েছেন। আকাশ বললেন, ‘‘ইডেনে পেসাররা শুরুতে সুবিধা পায়। আমার সেটা নিয়ে প্রচুর পরিকল্পনা আছে। পাওয়ার প্লে-কে কাজে লাগাতে চাই আমি।”
বৃহস্পতিবারের আরসিবি (KKR- RCB) ম্যাচে টিকিটের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। যার অনেকটাই বিরাটকে ঘিরে। যিনি এদিন প্রথমে একটা নেটে ঢুকে কিছুক্ষণ খেললেন। তারপর সোজা চলে গেলেন সেন্টার পিচের পাশের নেটে। নাগাড়ে বল ছোঁড়া হল। আর বিরাট পেল্লাই শট হাঁকালেন। কিন্তু এতেই থামার লোক নন ভিকে। ফিরে এসে কার্তিককে প্রায় নেটছাড়া করে ঢুকে পড়লেন প্রথম নেটে। খেললেন অনেক বোলারের সঙ্গে আকাশ দীপকেও। বঙ্গ পেসার একটু আগে বলেছেন, বিরাটকে বল করাও শিক্ষণীয় বিষয়।
নাইটদের জন্য প্রথম চিন্তা যদি বিরাট-ডুপ্লেসি জুটি হয়, তাহলে দ্বিতীয়টা নিজেদের টপ অর্ডার ব্যাটিং। অনুকূল আর মনবিন্দর আপাতত তোপের মুখে। কোচ চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত সাংবাদিকদের সামনে এসে টপ অর্ডারে বদলের ইঙ্গিত দিয়ে গেলেন। কিন্তু এটাও বললেন, ‘‘আমরা বিশেষ কারও উপর নির্ভর করি না। এই ছেলেরাও ঘরোয়া ক্রিকেটে ভাল খেলে এসেছে। আর শেষ ম্যাচে আমরা শেষপর্যন্ত ম্যাচে ছিলাম।” তবু ভেঙ্কটেশকে শুরুতে নিয়ে আসার কথা হচ্ছে। নারিনও আগের মতো ইনিংস শুরু করতে পারেন। আসলে নাইট শিবির বুঝেছে এটা বিরাট-ম্যাচ। কুছ ভি হো সকতা হ্যায়!
ম্যাচের ফল যাই হোক, হ্যামলিনের বাঁশিওলার মতো ইডেনকে চেনা চেহারায় ফিরিয়ে এনেছেন কিং কোহলি। চার বছর পর। ক্লাব হাউসের সামনে তারকা দর্শনের ভিড়। বটতলার জটলা। টিকিটের খোঁজে উৎসাহী জনতা। যাঁদের সামনে মস্ত ধাঁধা। বিরাট না রাসেল। বিরাট না কেকেআর। আজ সত্যিই দোটানার ম্যাচ। শুধু চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত হাসিমুখে দাবি করে গেলেন, ‘‘কেকেআর, হ্যায় তৈয়ার।’’ তা দেখা যাক!