প্রতিবেদন : ২০২১ সাল থেকেই চলছিল বিতর্ক। কিন্তু তাতে আমল না দিয়ে শেষ পর্যন্ত নিজেদের অবস্থানেই অনড় রইল কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকার। সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমগুলির যাবতীয় আপত্তি উড়িয়ে কেন্দ্র এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়েছে, ভারত সরকার নিয়ে কোনও খবরের সত্যাসত্য যাচাই করে দেখবে সরকারি সংস্থা পিআইবি বা প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো। পিআইবি কোনও খবরকে ভুল বলে চিহ্নিত করলে সেই খবর প্রচার করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হবে। কেন্দ্রের এই বিজ্ঞপ্তি ঘিরে ইতিমধ্যে খবর প্রকাশে অযাচিত সরকারি হস্তক্ষেপের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সরকারের অপছন্দের খবর প্রকাশিত হলে হেনস্তার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছে না মিডিয়া মহল।
আরও পড়ুন-নয়া পেনশন স্কিম খতিয়ে দেখতে ৪ সদস্যের কমিটি
কেন্দ্রের তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, খবর যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরোকে বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। পিআইবি কোনও খবরকে ভুয়ো বা ফেক বলে চিহ্নিত করলে ট্যুইটার, গুগল, ফেসবুক-সহ সব ধরনের সামাজিক মাধ্যম থেকে ওই খবর অবিলম্বে সরিয়ে দিতে হবে। একইভাবে সংবাদমাধ্যমেও ওই খবর প্রকাশ করা যাবে না। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, প্রচারিত কোনও খবরকে যদি পরবর্তী ক্ষেত্রে পিআইবি ফেক নিউজ বলে চিহ্নিত করে তাহলে সেই খবর সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যাহার করতে হবে। পাশাপাশি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সংশ্লিষ্ট সংবাদমাধ্যমকে জানাতে হবে, খবরটি ভুল ছিল। এরপরও যদি কোনও সংবাদমাধ্যম বা সোশ্যাল মিডিয়া ভুয়ো বলে চিহ্নিত খবর প্রকাশ করে তবে আদালতে ওই খবরের সত্যতা প্রমাণের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট সংস্থাকেই নিতে হবে।
আরও পড়ুন-কুড়মি অবরোধে বিপর্যস্ত তিন জেলা
কেন্দ্র যখন থেকে এই পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা করেছিল সেই সময় থেকেই তাতে আপত্তি জানিয়েছিল এডিটর্স গিল্ড এবং দ্য নিউজ ব্রডকাস্টার অ্যান্ড ডিজিটাল অ্যাসোসিয়েশনের মতো সংস্থা। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকরা কেন্দ্রের এই পরিকল্পনায় আপত্তি তুলে সরকারের কাছে স্মারকলিপি দেয়। এডিটর্স গিল্ডের দাবি, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করল মোদি সরকার। এতে সরকারি বিরোধী খবর যাতে প্রকাশিত না হয় তার জন্য পরোক্ষ চাপ তৈরি করা হল। নিজেদের অছন্দের কোনও খবরকে যেকোনও অছিলায় ফেক নিউজ বা ভুয়ো খবর বলে চিহ্নিত করার সুযোগ তৈরি করতে চায় সরকার। সরকারের বহু পরিকল্পনা ও নীতিই সরকারিভাবে ঘোষণা হওয়ার আগেই সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়ে থাকে। সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক তাঁর নিউজ সোর্স বা সংবাদসূত্র ব্যবহার করে এই ধরনের খবর প্রকাশ করেন।
আরও পড়ুন-বঙ্কিম-সাহিত্যের আলো-কালো নারীচরিত্র
এবার থেকে তাতে রাশ টানতে চায় মোদি সরকার। সুপ্রিম কোর্ট বারবার সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার পক্ষে স্পষ্ট সওয়াল করলেও উল্টো ভূমিকা নিচ্ছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। অপছন্দের খবর প্রকাশের পর সাংবাদিকদের দেশদ্রোহের মামলায় যুক্ত করে জেলে পোরার একাধিক ঘটনা মোদি জমানায় ঘটেছে। এবার আরও একধাপ এগিয়ে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে থাকা প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরোকে ময়দানে নামাতে চাইছে কেন্দ্র। আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে, কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে অস্বস্তির কারণ হলে সংশ্লিষ্ট খবরকে ভুয়ো বা ফেক বলে ঘোষণা করতে পারে পিআইবি।