সোজা কথাটা প্রথমেই সোজা ভাষায় বলে নেওয়া ভাল। বাঘ সম্ভবত জাতীয় পশুর মর্যাদা হারাতে চলেছে।
এরকম একটা সম্ভাবনা তৈরি হওয়ার কারণ একটাই কর্নাটকের বন্দিপুর ব্যাঘ্র সংরক্ষণ প্রকল্পে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। ক্যামেরাবান্ধব প্রধানমন্ত্রীর (PM Modi) পোশাক পরিচ্ছদ মেকআপ পোজ, কোথাও কোনও ঘাটতি ছিল না। ক্যামরা নিয়ে হাজির ছিল চিত্রগ্রাহকও। বিভিন্ন সংবাদ সংস্থার সূত্রে প্রাপ্ত সেই অপূর্ব উপস্থিতির নানবিধ চিত্র দেশের নানা সংবাদপত্রে মুদ্রিত হয়েছে বিভিন্ন টিভি চ্যানেল প্রদর্শিত হয়েছে।
কিন্তু আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের কারণেই হোক কিংবা বিরোধী পক্ষের কলকাঠি নাড়ার সুবাদেই হোক, মাথায় হ্যাট চোখে রোদচশমা, পরনে জিম করবেট কেতার পোশাক পরিহিত প্রাধানমন্ত্রীর সামনে কোনও বাঘমামা হাজির হয়নি। কর্নাটকের বিধানসভা নির্বাচনের মুখে সেখানকার একটি বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পে বাঘ দেখার বাসনা নিয়ে হাজির হওয়া প্রধানমন্ত্রী বাঘ দেখতে না পেয়ে বিফল মনোরথ হয়ে ফিরে এসেছেন, এরপর তো বাঘের জাতীয় পশু হিসেবে সম্মানিত হওয়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচিত হওয়াটাই স্বাভাবিক।
মেক আপ-কস্টিউম পরিহিত প্রধানমন্ত্রীর ব্যস্ত কর্মসূচির তিন-তিনটে ঘণ্টা কার্যত নষ্ট হল যে দুষ্ট পশুর কারণে, তার ‘জাতীয় পশু’র শিরোপা থাকে কী ভাবে?
বন্দিপুরের সংরক্ষণ অরণ্যে, প্রায় ১০ হাজার ৮০০ সেকেন্ড বাঘের আত্মগোপন কার্যত প্রধানমন্ত্রীকে অসম্মান প্রদর্শন।
প্রধানমন্ত্রীকে অসম্মানিত করা দেশদ্রোহিতার নামান্তর, এমন দেশদ্রোহী প্রাণীর জাতীয় পশু হিসাবে মান্যতা পাওয়ার কোনও অর্থ নেই।
এটাই সাম্প্রতিক ভারতের নিষ্ঠাবানদের যুক্তিক্রম। আর, এই যুক্তিক্রমের পরিণতিতেই বাঘের ‘জাতীয় পশু’র খেতাব হারানোর সম্ভাবনা সমধিক।
আরও পড়ুন- কোন্দলে জর্জরিত কর্নাটকে বিজেপির শেষ ভরসা মোদিই
বাঘের এমন বেয়াদবির কারণ তদন্ত করার জন্য কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলোকে ঘোঘের বাসা খোঁজ করার দায়িত্ব এখনও সমর্পিত হয়েছে কি না, সেটা অবশ্য এখনও জানা যায়নি, তবে এর পেছনে বিরোধীদের হাত আছে, তারা এরকম জাতীয়তা বিরোধী চক্রান্তে জড়িত, সেটা প্রমাণ করার জন্য কেন্দ্রীয় তদন্তকারী এজেন্সিগুলোকে বাজারে নামানো যেতেই পারে, মলিটিক্স নিউজ ওয়েবসাইটে সতীশ আচার্যের একটি ব্যঙ্গচিত্র দেখা যাচ্ছে। তদনুসারে ব্যাঘ্র সমাজ ইতিমধ্যেই ইডি-র নোটিশ পেয়ে গেছে।
কমেডিয়ান শ্যাম রঙ্গিলা বাজারে ভিডিও ছেড়েছেন, সেখানে দেখা যাচ্ছে, বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পে ভ্রমণার্থী বকাঝকা করছেন চিত্রগ্রাহককে, কারণ তাঁর বাঘের সঙ্গে ছবি ওঠেনি। হতে পারে। এমনটা হতেই পারে কিন্তু গোটা ঘটনায় পরিবেশ মন্ত্রী ভূপেন্দ্র যাদবের কোনও প্রতিক্রিয়া এখনও পাওয়া যায়নি, এটা মনে পড়লেই গা-টা কেমন যেন ছমছম করছে, অনেকগুলো প্রশ্ন জাগিয়ে দিচ্ছে এই ঘটনাক্রম।
তবে কি যে গাড়িটি ভারতেশ্বরকে বন্দিপুরের বাঘ প্রকল্পে নিয়ে গিয়েছিল সেই গাড়িটির চালক কিংবা রক্ষণাবেক্ষণকারীরাই এই ঘটনার জন্য দায়ী? গাড়ির তীব্র আওয়াজের চোটে বাঘেরা সেদিন পালিয়েছিল? দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস নামক সর্বভারতীয় ইংরেজি সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরের সূত্রে তেমনটাই মনে হচ্ছে। ওই সংবাদে প্রকাশ ভারতীয় জঞ্জাল পার্টি বা বিজেপি নেতৃবর্গের একাংশ এবং বনবিভাগের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা ভারতেশ্বরের জঙ্গল সাফারির দায়িত্বপ্রাপ্ত গাড়ি চালকের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার দাবি তুলেছেন, কিন্তু বন্দিপুর বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের বরিষ্ঠ আধিকারিকদের কয়েকজন সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর বনভ্রমণে নিরাপত্তাকর্মীদের অতি-উৎসাহের কারণেই সেদিন বাঘেদের দেখা মেলেনি।
কেউ কেউ আবার বলছেন শুধু কর্নাটকের বন্দিপুর কেন, তামিলনাডুর মুদুমালাই ব্যাঘ্র সংরক্ষণ প্রকল্পে গিয়েও তো প্রধানমন্ত্রী মোদি (PM Modi) বাঘের দেখা পাননি। বাঘেতে মোদিতে মুখোমুখি সাক্ষাৎ হয়নি।
পুরো ঘটনাক্রম বিশ্লেষণ করলে একটা কথাই স্পষ্টতর হয়।
একই জঙ্গলে দুজন শার্দূল একই সময়ে রাজ করবেন, এটা হয় না। তাই লাঙ্গুলযুক্ত ব্যাঘ্রাচার্যেরা দ্বিপদ পরাক্রমী ব্যাঘ্রকে দেখেই চম্পট দিয়েছিল।
মোদিজিকে বাঘেও এড়িয়ে চলে!