নবনীতা মণ্ডল, নয়াদিল্লি : নরেন্দ্র মোদির ইচ্ছাপূরণে এখন বিপন্নতার মুখে বন্যপ্রাণ ও পরিবেশের ভারসাম্য। প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে জমকালো প্রচার করে বিদেশ থেকে চিতা এনে মধ্যপ্রদেশের কুনো (Kuno National Park) জাতীয় উদ্যানে ছাড়া হয়। কয়েক মাসের মধ্যেই সেই চিতাগুলির (leopard death) জীবন সংশয় এবং এখানকার পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে না পারার কারণে বাড়তে থাকা সমস্যা উল্টে রাজ্য প্রশাসনের মাথাব্যথা হয়ে উঠেছে। বিপদের সম্ভাবনা বাড়ছে কুনোর জাতীয় উদ্যান সংলগ্ন গ্রামগুলিতেও।
বিষয়টি নিয়ে নামিবিয়ার লাইবনিজ-আইজেডব্লিউ’র ‘চিতা গবেষণা প্রকল্প’-র বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে একাধিক চিতা ভারতে আনার ক্ষেত্রে ভারতের স্থানীয় ভৌগোলিক পরিবেশ বিচার না করেই একতরফা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ভারতের গবেষকদেরও বক্তব্য, তাড়াহুড়ো করে চিতা প্রকল্পের মাধ্যমে নাম কামাতে গিয়ে এখন প্রাণ সংশয়ের মুখে ফেলে দেওয়া হয়েছে প্রাণীগুলিকে। ইতিমধ্যেই মৃত্যু (leopard death) হয়েছে দুটি চিতার। সেপ্টেম্বরে সাশা নামে এক চিতার মৃত্যুর পর জানানো হয়েছিল, কিডনিজনিত সমস্যার কারণেই মৃত্যু। যদিও উদয় নামের চিতাটি কীভাবে মারা গেল তার কারণ এখনও প্রকাশ্যে আনেনি কেন্দ্রীয় সরকার। নামিবিয়ার গবেষকরা আগেই জানিয়েছেন, এখানকার চিতাগুলির বসবাসের ক্ষেত্রে উপযুক্ত জায়গা হল, ১০০ বর্গ কিলোমিটার পিছু একটি চিতা। ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে প্রথম আন্তঃমহাদেশীয় চিতা প্রকল্পের আওতায় কুড়িটি চিতাকে দক্ষিণ আফ্রিকার নামিবিয়া থেকে আনা হয়েছিল এদেশে। এর মধ্যেই মারা গিয়েছে দুটি চিতা। ফলে কুনো ন্যাশনাল পার্কে এখন মোট ১৮টি চিতা আছে।
আরও পড়ুন- আরও দুই ভারতীয় সংস্থার কাশির ওষুধে বিষ, সতর্ক করল ‘হু’
১৯৯৩ সালে কুনো জাতীয় উদ্যান প্রথমে সিংহ প্রকল্পের জন্য নির্বাচিত হয়। সেই অনুযায়ী সাহারিয়া উপজাতি অধ্যুষিত ৩০টি গ্রাম উচ্ছেদ করা হয়। চিতা প্রকল্পের ফলে স্থানীয় অর্থনীতির উন্নতি হবে, এই কারণ দেখিয়ে সেই সময় সেখানকার বাসিন্দাদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। হঠাৎ করেই সিংহ প্রকল্প বাদ দিয়ে চিতা আনা হয় প্রধানমন্ত্রীর ৭০ তম জন্মদিন উপলক্ষে। একের পর এক চিতামৃত্যু প্রসঙ্গে বন্যপ্রাণী গবেষক অজয় দুবে স্পষ্ট জানালেন, সরকারের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ টিম ব্যর্থ এই চিতাগুলির মৃত্যুর কারণ খুঁজে পেতে। এখানে আনার পর থেকে ক্রমাগত চিতাগুলিকে বন্দি অবস্থায় রাখা হয়েছে যা তাদের জন্য চরম অস্বাস্থ্যকর। চিতা হল বিড়াল প্রজাতির সবচেয়ে সংবেদনশীল প্রাণী। যে পরিবেশে সিংহ থাকতে পারে সেই পরিবেশ চিতার জন্য নয়, এটা সরকারের আগেই ভাবা উচিত ছিল। সদ্যমৃত চিতা উদয় হৃদ্যন্ত্রজনিত এবং শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভুগেছিল বলে প্রাথমিকভাবে জানানো হয়েছে। অজয় দুবে জানান, সরকারের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ টিম ব্যর্থ চিতাদের রক্ষণাবেক্ষণে। কুনো ন্যাশনাল পার্কে চিতাদের দেখভালের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত যে অফিসার, তাঁর উপর আরও চারটি জাতীয় উদ্যানের দায়িত্ব রয়েছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই তাঁর একার পক্ষে এতগুলি চিতার সঠিকভাবে দেখভাল করা সম্ভব নয়। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় সরকার যখন দায়িত্ব নিয়ে চিতাদের ভারতে এনেছে, সেখানে এতবড় প্রকল্পের মধ্যে যদি কোনও ভুলত্রুটি হয়ে থাকে সরকারের উচিত তা প্রকাশ্যে আনা যাতে বাকি চিতাদের জীবন বাঁচানো যায়। কুনো জাতীয় উদ্যানে দু-একটি ছাড়া বেশিরভাগ চিতাই বন্দি অবস্থায় রয়েছে। সেক্ষেত্রে, অতি সংবেদনশীল এই প্রাণীগুলি অবসাদে ভুগছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। একাধিক চিতা দুর্বল স্বাস্থ্য এবং ডিহাইড্রেশনে ভুগছে বলে রিপোর্ট পাওয়া গিয়েছে।