ছোটপর্দা মানেই দাপট মেয়েদের। একচেটিয়াভাবে নায়িকারাই দখল করে থাকেন প্রধান চরিত্র। তাঁদের ঘিরেই তৈরি হয় গল্প, রচিত হয় চিত্রনাট্য। বাকি চরিত্ররা কেউ কম কেউ বেশি শুধু সঙ্গত করে যান। এমনকী নায়কদের ক্ষেত্রেও তেমনটাই দস্তুর। অর্থাৎ বড়পর্দার বদলা নেয় ছোটপর্দা! সরলীকরণ হলেও সত্য। আপাতত এই ছক ভেঙে শুরু হয়েছে ধারাবাহিক ‘রাম কৃষ্ণা’। এই গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র রাম। রামকে কেন্দ্র করেই গল্প আবর্তিত। নায়িকা কৃষ্ণা যথাযথভাবে থাকলেও এক্ষেত্রে চালকের আসনে নায়ক রামই। শুরুতেই এ-প্রসঙ্গ উত্থাপনের কারণ, চ্যানেলের তরফেই এই ধারাবাহিককে ‘প্রমোট’ করা হচ্ছে এভাবেই।
আরও পড়ুন-ভেবেছিলাম বার্মিংহাম টেস্টে বিরাট নেতৃত্ব দেবে, ফিরে দেখা শাস্ত্রীর
খুব স্বাভাবিকভাবেই ‘রাম’কে তৈরি করা হয়েছে অতি-যত্ন ভরে, অতি-খেয়াল নিয়ে। আর এ-জন্যই পাওয়া গেছে এক অন্যরকম চরিত্র যার ভাবনায় ঐতিহ্য ও আধুনিকতা পরস্পরের সঙ্গে সহাবস্থান করে। এক সফটওয়্যার কোম্পানিতে কাজ করলেও রাম এমন এক পরিবারের সদস্য যাদের পরম্পরায় পৌরোহিত্য। অর্থাৎ কিনা পেশায় পুরোহিত। বাড়ি-বাড়ি গিয়ে পুজো করেন। আর এই পুজো করতে গিয়েই গল্পের শুরু হয়। রামানন্দের বাবা নারায়ণ ভট্টাচার্যের কথা ছিল অর্ঘ্য মুখোপাধ্যায়ের বাড়ির এক বিশেষ পুজোয় পৌরোহিত্য করার। ঘটনাচক্রে তিনি যেতে না পারায় পাঠান ছেলে রামানন্দকে। আর রামানন্দ গিয়েই মুখোপাধ্যায় পরিবারের চেনা হিসেব খানিক গোলমাল করে দেয়। যদিও সেটা করে নিজের অজান্তেই। কিন্তু এর জন্য সবচেয়ে বেশি ভুগতে হয় কৃষ্ণাকে। যে কিনা অর্ঘ্য মুখোপাধ্যায়ের প্রথম পক্ষের সন্তান। ফলত প্রথম দেখা থেকেই রাম হয়ে ওঠে কৃষ্ণার চক্ষুশূল।
আরও পড়ুন-উত্তরে বন্ধ ভেঙে চা-বাগানে স্বাভাবিক কাজ
কারণটা এরকম, যে, রামানন্দের পুজো করার ধরন, মন্ত্রোচ্চারণ, ভক্তি ও নিখুঁত আচারে মুগ্ধ হয় মুখোপাধ্যায় পরিবারের প্রায় সব সদস্য। আজকের দিনে এমন বয়সের একটি ছেলে যে সংস্কৃত মন্ত্র শুধু মুখস্থ বলে না, তার মর্মার্থ অনুধাবন করে এবং নিজের অন্তর থেকে বিশ্বাসও করে। সব মিলিয়ে রামানন্দের প্রতি এতটাই মুগ্ধতা তৈরি হয় যে উচ্চবিত্ত পরিবারটি রামানন্দকে একটি গাড়ি উপহার দিতে চায় যা তৎক্ষণাৎ প্রত্যাখ্যান করে রাম। যুক্তি হিসেবে দেখায়, এটা তার প্রাপ্য নয়। কারণ তার পারিশ্রমিকের দ্বারা অর্জিত হবে না এই গাড়ি। সুতরাং এটা সে নিতে পারবে না। রামানন্দের এই সুচারু যুক্তি যেন চোখ খুলে দেয় পরিবারের কর্তার। যিনি পরের দিনই তাঁর আদরের কন্যা কৃষ্ণাকে নিজের কোম্পানির সিইও হিসেবে রিক্রুট করতেন। কিন্তু করেন না। বদলে মেয়েকে পাঠান তিন মাসের জন্য এক অন্য কোম্পানিতে কাজ করতে এবং সেখানে নিজেকে প্রমাণ করতে পারলে তবেই কৃষ্ণা বাবার কোম্পানিতে সিইও পোস্ট পাবে! এতে চরম হতাশ কৃষ্ণা ও তার মা রোহিণী। কারণ মেয়েকে মা যেভাবে তৈরি করেছেন মেয়ে সেভাবেই বেড়ে উঠেছে, যদিও সেই বেড়ে ওঠাটা মোটেই প্রশংসনীয় নয়। কারণ কৃষ্ণা এককথায় বড়লোকের বিগড়ে যাওয়া মেয়ে। সে মনে করে পৃথিবীতে অর্থই শেষ কথা আর এই অর্থ দিয়েই সে সব কিছু পেতে পারে। শুধু এই নয়, মায়ের কারণে সে এই ধারণা নিয়েও বড় হয়েছে যে, যাদের অর্থবল কম, তাদের পৃথিবীতে কোনও গুরুত্বই নেই, তাদের অনায়াসে অপমান, খুব সহজে অগ্রাহ্য করা যায়। এহেন কৃষ্ণা যে রামানন্দের ওপর চটবে তা স্বাভাবিক, কারণ, শুধু যে ওই ছেলেটার কারণে তার পরদিনের সাকার হতে যাওয়া স্বপ্ন ভেস্তে গেল তাই নয়, যে কোম্পানিতে তাকে পাঠাল বাবা চাকরি করতে, সেখানে গিয়েও এই ছেলেটার মুখোমুখি সে! কারণ রাম ওই সফটওয়্যার কোম্পানিরই কর্মী! দুজনে মুখোমুখি হয় এবং সংঘাতের শুরু।
আরও পড়ুন-দান্তেওয়াড়ায় বদলার খুন?
এই সংঘাতে অবশ্য রামের কোনও ভূমিকা নেই। তার সে স্বভাবই নয়। ছোট থেকে সব বিষয়ে পারদর্শী হওয়া সত্ত্বেও অহংকার শব্দটা তার অভিধানে নেই। পরিবারের প্রতিটা সদস্য তার প্রাণ। শুধু তা-ই নয় এককথায় রামকে ভালবাসে না এমন মানুষ মেলা ভার। সেটা সবটাই রামের স্বভাব, ব্যবহার ও তার জীবনধারার কারণেই। সনাতন ভারতের রীতিনীতি, আদর্শ, আচারে রামানন্দ এতটাই বিশ্বাস রাখে যে তার ছাপ পড়ে তার জীবনের সব ক্ষেত্রে। গীতার শ্লোক রামানন্দের মুখস্থ তো বটেই কিন্তু গীতার শ্লোকের অন্তর্নিহিত ব্যাখ্যা, উপদেশ দিয়ে বাস্তব জীবনকেও বিচার করে সে। তাই কৃষ্ণা যতই উদ্ধত, অহংকারী আচরণ করুক, তার প্রতি কর্কশ হোক, রামানন্দ চেষ্টা চালায় নিজের মতো করে তা সামলে নিতে।
আরও পড়ুন-গঙ্গাভাঙন দেখতে সেচমন্ত্রী
প্রাথমিকভাবে গল্প এভাবেই গড়ায়। তবে যে কোনও ধারাবাহিকের গল্পের গড়ান কোথাও একটা একমুখী হয়েই যায়, ‘রাম কৃষ্ণা’ও ব্যতিক্রমী হবে না তা ধারাবাহিকের কলাকুশলী থেকে পরিচালক— সকলেই মানেন। কিন্তু সেই জার্নিটাই আপাতত উপভোগের পালা। দর্শক উপভোগ করছেনও। ‘রাম কৃষ্ণা’ পরিচালনা করছেন গোপাল চক্রবর্তী। কাহিনি, চিত্রনাট্য ও সংলাপের দায়িত্বে আছেন যথাক্রমে পৌলমী ভৌমিক, ক্যামেলিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় এবং এন কে সলিল৷ প্রযোজনা সুরিন্দর ফিল্মস-এর। অভিনয়ে যাঁরা আছেন, নীলাঙ্কুর মুখোপাধ্যায় (রামানন্দ), নন্দিনী দত্ত (কৃষ্ণা), অরিন্দম বন্দ্যোপাধ্যায় (নারায়ণ), ঋতজা চক্রবর্তী (কমলা), তনিমা সেন (পূর্ণিমা), অনিন্দ্য চক্রবর্তী (অর্ঘ্য), অনিন্দিতা কপিলেশ্বরী (রোহিণী), সংযুক্তা রায়চৌধুরী (শর্মিলা) প্রমুখ। ধারাবাহিকটি দেখা যাচ্ছে সোম থেকে রবি, রাত্রি আটটায়।