অলোক সরকার: একটা করে উইকেট পড়ছে আর গ্যালারি লাফাচ্ছে! ভেসে আসছে চিৎকার… জিতেগা ভাই জিতেগা…। ক্যালেন্ডারের পাতায় ছ’টা দিন। আগের চেহারায় ফিরল ইডেন। অবশ্য হার-জিতের ছবিটা একই থাকল এই মাঠে। চেন্নাইয়ের পর গুজরাট টাইটান্সের (Gujarat titans- kkr) কাছেও হেরে গেল কেকেআর। ক্যাচ ফেলে ম্যাচ খোয়াল নাইটরা।
ছ’দিন আগে হলুদ বসন্ত দেখেছে এই মাঠ। কিছু করার নেই! তিনি মহেন্দ্র সিং ধোনি। তা হার্দিকরা তো কেউ এমএসডি নন। অতএব ইডেন আবার কেকেআরের। যে ইডেন আঁতকে উঠল সুয়শকে মিলারের ক্যাচ ফেলতে দেখে। জিততে গুজরাটের ৫ ওভারে দরকার ছিল ৫০ রানের। এই ক্যাচই ভীষণ দামি হয়ে গেল কেকেআরের জন্য। ম্যাচ শেষ হল ১৩ বল আগেই। এই হারে কেকেআর আরও তলিয়ে গেল আইপিএল টেবলে। এখান থেকে উঠে এলে অষ্টম আশ্চর্য বলতে হবে!
মিলারকে জীবন দেওয়া মানে হাত থেকে ম্যাচ ফেলে দেওয়া। নাইটরা (Gujarat titans- kkr) সেটাই করল। তবে হার্দিক আর শুভমন পরপর আউট হয়ে যাওয়ার পর খেলে গেলেন থ্রি-ডি ক্রিকেটার বিজয়শঙ্কর। যিনি নট আউট থাকলেন ৫১ রানে। বিশ্বকাপে রায়াডু দলে সুযোগ না পেয়ে নির্বাচকদের কথা টেনে থ্রি-ডি ক্রিকেটার বলে বিঁধেছিলেন বিজয়শঙ্করকে। রায়াডু এখন অতীত। বিজয়শঙ্কর কিন্তু এই আইপিএলে দুর্দান্ত খেলছেন।
আরও পড়ুন- কুণালের মানহানি মামলায় তলব ৩ সিপিএম নেতাকে
তিনে হার্দিকের আসা বড় চমক গুজরাটের। এসে যে দুমদাম মারলেন, এমন নয়। কিন্তু উল্টোদিকে দাঁড়িয়ে শুভমনকে মনোবল জুগিয়ে গেলেন। শেষপর্যন্ত ১০ ওভারে ৮৯ /১ তুলে ফেলে গুজরাট। ১৮০ টার্গেট নিয়ে খেলতে নেমে ঠিকঠাক শুরু। তখন মনে হচ্ছিল পাটা উইকেটের সুবিধা নিয়ে এগোচ্ছে অতিথিরা।
হার্দিক অবশ্য ফিরে গেলেন হরষিত রানার বলে। ২০ বলে ২৬ রান করে এলবি হয়ে গেলেন। গুজরাট ৯১/২। তবে ম্যাচটা তখনও তাদের দিকে ছিল শুভমনের জন্য। কিন্তু তিনি যখন নারিনের বলে রাসেলের হাতে ধরা পড়লেন, ম্যাচ দুলতে শুরু করেছে। আইপিএলে দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছেন পাঞ্জাব ব্যাটার। এদিন আউট হওয়ার আগে পর্যন্ত ছন্দে থাকলেন। শেষপর্যন্ত ৩৫ বলে ৪৯। এইসময় ৩ রানে ২ উইকেট পড়ে যায় গুজরাটের।
৫ ওভারে ৪৭/২ হয়ে যাওয়ার পর ক্লাব হাউসের দিক থেকে বল করতে এলেন রশিদ খান। তাঁর জন্য এটা বিশেষ ম্যাচ। আইপিএলে শততম ম্যাচ খেললেন তিনি। প্রথম ওভার অবশ্য রশিদের জন্য ছিল না। দিলেন ১৪ রান। আসলে ম্যাচটাই রশিদের জন্য ছিল না! তাঁর উপর নির্দয় ছিলেন গুরবাজ। যিনি ২৭ বলে হাফ সেঞ্চুরি করলেন। ৩৯ বলে ৮১ রান আফগান কিপার-ব্যাটারের। তবে তাঁর এই লড়াই কাজে এল না!
হাল্কা বৃষ্টিতে খেলা শুরু হয়েছিল ৪৫ মিনিট দেরিতে। হার্দিক অবশ্য টসে জিতে ফিল্ডিং নেন। হাতে রশিদ ও নুরের মতো স্পিনার রয়েছে। আর এটা এখন পরীক্ষিত সত্য যে, ইডেনের স্লো উইকেট স্পিনারদের সাহায্য করছে। কিন্তু রশিদ আসার আগেই কেকেআরের দুটো উইকেট চলে যায় মহম্মদ শামির হাতে। জগদীশন (১৯) ভাল শুরু করেও ফিরে গেলেন এলবি হয়ে। আর শার্দূল (০) তিনে এসে খেলেছেন মোটে চারটি বল।
পাওয়ার প্লে-র ৬ ওভারে কেকেআর যেভাবে খেলছিল তাতে মনে হচ্ছিল রান ভাল জায়গায় যাবে। কিন্তু মিডল ওভারে পরপর উইকেট চলে গেল। ভেঙ্কটেশ (১১) ও নীতীশ (৪) দ্রুত আউট হয়ে গেলেন। দু’জনেই ফর্মে ছিলেন। কিন্তু জশুয়া লিটলকে ঝটপট উইকেট দিয়ে গেলেন। ৮৪ আর ৮৮ রানে এই দুটো উইকেট চলে গেল। নাহলে নাইটদের রান হয়তো দুশো পার করত।
রশিদ এদিন ৪ ওভারে ৫৪ রান দিয়েছেন। মাইলস্টোনের ম্যাচে এটা স্বস্তির পারফরম্যান্স নয় মোটেই। কিন্তু নুর আমেদ ৪ ওভারে ২১ রান দিয়ে দুটি উইকেট নিয়ে গেলেন। যেটা বলার, বাঁহাতি সিমার লিটলও ভাল বল করলেন। ৪ ওভারে ২৩ রানে দুই উইকেট। তাঁর পাশে শামির অবদান ৩৩ রানে ৩ উইকেট। এই শামি, নুর আর লিটলই পরেরদিকে নাইটদের চেপে ধরেন।
রিঙ্কু এদিন ১৯ রানে ফিরেছেন নুরের বলে। এই রিঙ্কুই এবার কেকেআর ব্যাটিংকে টানছেন। পাশে কখনও গুরবাজ, কখনও নীতীশকে পেয়েছেন। এদিন কিন্তু ৩৫তম জন্মদিনে নাইটদের ইনিংসকে টানলেন আন্দ্রে রাসেলও। ১৯ বলে ৩৪ রান করেন। তবে তিনি যদি শামিকে ওড়াতে গিয়ে তেওতিয়ার হাতে ধরা না পড়তেন, নাইটরা বোধহয় ১৭৯/৭-এ আটকে যেত না।
৯ ম্যাচে ৬ হার। ৩ জয়। সাকুল্যে ৬ পয়েন্ট। বিরাট কোনও অঘটন ছাড়া নাইটদের আর কোনও আশা নেই।