নয়াদিল্লি : ফের সামনে এল নরেন্দ্র মোদি সরকারের স্বেচ্ছাচারিতা। দিল্লিতে আমলা নিয়োগ ও বদলির অধিকার নিয়ে শীর্ষ আদালতের সর্বসম্মত রায় পছন্দ না হওয়ায় প্রথমে অর্ডিন্যান্স বা অধ্যাদেশ জারি এবং তারপর কোর্টে রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি। সব মিলিয়ে দিল্লিতে জনগণের ভোটে নির্বাচিত আপ সরকারের ক্ষমতা খর্ব করতে মরিয়া কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। অধ্যাদেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে কেজরিওয়াল সরকারও (kejriwal Government)৷ অধ্যাদেশ জারির পর কেন্দ্রের পদক্ষেপকে নির্লজ্জ ও আদালতের অবমাননা বলে তোপ দেগেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল৷
রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, দিল্লির প্রশাসনিক ক্ষমতা বণ্টনের অধিকার নিয়ে রায় কেন্দ্রের বিপক্ষে যাওয়ায় মাথায় বাজ পড়েছে মোদি সরকারের। কারণ, সুপ্রিম কোর্টের রায় মানতে হলে উপরাজ্যপালকে ব্যবহার করে রাজ্য সরকারকে ব্যতিব্যস্ত করার কৌশল ধাক্কা খাবে। তাই অর্ডিন্যান্স বা অধ্যাদেশ জারি করে এবার আদালতের সঙ্গেও সংঘর্ষে নামল কেন্দ্র। একইসঙ্গে রায় বদলের আর্জি নিয়ে মামলা দায়ের করা হল।
দিল্লিতে আমলাদের নিয়োগ ও বদলির বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দিয়েছিল তাতে উপরাজ্যপালের ক্ষমতা খর্ব হয়ে নির্বাচিত রাজ্য সরকারের অধিকারকে মান্যতা দিয়েছিল আদালত। সুপ্রিম কোর্টের সেই নির্দেশ অমান্য করে শুক্রবার রাতেই একটি অধ্যাদেশ জারি করে মোদি সরকার। প্রসঙ্গত, দিল্লির আমলাদের বদলি বা নিয়োগের ক্ষেত্রে কেন্দ্র নয়, দিল্লির নির্বাচিত সরকারই শেষ কথা বলবে বলে স্পষ্ট রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছে আপ-সহ বিরোধী দলগুলি। যদিও আপের পক্ষ থেকে বারবার এই আশঙ্কাও করা হয়, সুপ্রিম কোর্টের রায় অমান্য করার ছুতো খুঁজছে কেন্দ্রীয় সরকার৷ আপের আশঙ্কা সত্যি করেই শুক্রবার রাতে তড়িঘড়ি অধ্যাদেশ জারি করেছে মোদি সরকার।
আরও পড়ুন- ২০০০ টাকার নোটবন্দির পরই সরকারি অফিস থেকে উদ্ধার কয়েক কোটি!
বর্তমান আইন অনুযায়ী, কোনও অধ্যাদেশ জারি করা হলে তা সংসদের উভয় কক্ষে পাশ করাতে হয়। লোকসভায় বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় সেখানে তা পাশ হওয়া নিয়ে গেরুয়া দল চিন্তিত নয়। কিন্তু রাজ্যসভায় বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। তাই রাজ্যসভায় বিরোধীরা যে একযোগে এই অধ্যাদেশের বিরোধিতা করবে তা বলাই বাহুল্য। কোনও একটি কক্ষে পাশ করানো না গেলে ছ’মাসের মধ্যে সরকারকে বাধ্য হয়ে অধ্যাদেশ প্রত্যাহার করতে হবে। তাতে মোদি সরকারেরই মুখ পুড়বে। তাই আদালতেও রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি পেশ করা হয়েছে। কেন্দ্রের আনা এই অধ্যাদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে পাল্টা আবেদন করেছে অরবিন্দ কেজরিওয়াল সরকার (kejriwal Government)। দিল্লি সরকারের আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি মোদি সরকারকে কটাক্ষ করে বলেছেন, খেলায় হেরে গেলেই আপনারা নিয়ম পরিবর্তন করেন। রাজ্যসভার সাংসদ সিংভির কথায়, সংসদে এই অধ্যাদেশটি শেষপর্যন্ত পাশ করাতে পারবে না সরকার। শুক্রবার কেন্দ্রীয় সরকারের জারি করা অর্ডিন্যান্সে ন্যাশনাল ক্যাপিটাল সিভিল সার্ভিস অথরিটি তৈরির প্রস্তাব আনা হয়েছে। বলা হয়, এই কর্তৃপক্ষ আমলাদের নিয়োগ ও বদলির সিদ্ধান্ত নেবে। এই কমিটির সদস্য হবেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, মুখ্যসচিব ও স্বরাষ্ট্রসচিব। কমিটির চেয়ারপার্সন হবেন মুখ্যমন্ত্রী। সদস্যদের ভোটের ভিত্তিতে কোনও বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। শুধু তাই নয়, কমিটির সদস্যরা যদি কোনও বিষয়ে ঐক্যমতে পৌঁছতে না পারেন সেক্ষেত্রে উপরাজ্যপালই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, রাজধানীর আমলাদের বদলি ও নিয়োগের সিদ্ধান্ত ঘুরপথে নিজেদের হাতে রাখতেই মরিয়া হয়ে কেন্দ্রের অধ্যাদেশ।