সুখেন্দুশেখর রায়: দু’হাজারি নোট নিয়ে হাস্যকর সরকারি ভ্রান্তিবিলাস চলছে তো চলছেই। ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আচম্বিতে ঘোষণা করলেন— ‘কালো টাকা উদ্ধার, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা ইত্যাদি কারণে ৫০০/১০০০ টাকার নোট বাতিল’। যদিও রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বরাবর উল্লেখ করেছে, সোনা ও অন্যান্য সম্পত্তিতেই বেশির ভাগ কালো টাকা বিনিয়োগ হয়। যা-ই হোক, ৫০০/১০০০ টাকার নোট গেল। চলে এল ২০০০ টাকার চকচকে নোট। সে-নোট আবার এটিএম-এ ঢোকে না!
আরও পড়ুন-যুদ্ধ বন্ধ করুন, ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠার আহ্বান জি-৭ গোষ্ঠীর
এবার শত-সহস্র এটিএমের রূপান্তর ঘটানো হল। ততদিনে ব্যাঙ্কের দরজায় সারা ভারত নেমে এসেছে। আবার জানা গেল, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক আইনের ২৪(১) ধারায় নোট বাতিলের বিজ্ঞপ্তি জারি না করে ২৪(২) ধারায় তা করা হয়েছে। অর্থাৎ বিসমিল্লায় গলদ। নিন্দুকেরা বলে, তখনকার অর্থমন্ত্রী ও বিশিষ্ট আইনজীবী অরুণ জেটলিকেও নাকি নোটবন্দির বিষয়ে অন্ধকারে রাখা হয়েছিল। ইতিমধ্যে ২০০০ টাকার নতুন নোট বাজারে খুচরো করা যাচ্ছে না। কারণ, একটা নোট খুচরো করতে কুড়িটা ৫০ অথবা দশটা ১০০ টাকার নোট পেতে হবে। শেষ পর্যন্ত লাল-নীল-গেরুয়া-সবুজ ইত্যাদি হরেক রঙের ৫/১০/২০/৫০/১০০ টাকার নোট বাজারে আসতে শুরু করে। ততদিনে বাতিল ৫০০/১০০০ টাকার নোটও যা বাজারের সার্কুলেশনে ছিল, তার ৯৯.৩০% ব্যাঙ্কে জমা পড়ে। তার মানে হয় বাজারে কালো টাকা ছিল না, নয় অগণিত কালো টাকা এই সুযোগে নানা পদ্ধতিতে সাদা হয়ে গেল। সম্ভবত, এই কারণেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেইসময় বলেছিলেন, নোটবন্দি আসলে আইনি পথে কালো টাকাকে সাদা করার পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। মোদ্দা কথা, কালো টাকা উদ্ধার বা সন্ত্রাসবাদকে রোখার ঘোষণাটি ছিল মিথ্যের বেসাতি। কারণ, সাত মন তেলও পুড়েনি— রাধাও নাচেনি।
আরও পড়ুন-পরা যাবে না জিন্স, টিশার্ট, লেগিংস: অসমে ফতোয়া জারি শিক্ষক-শিক্ষিকাদের
এবার ২০০০ টাকার নোট যাঁদের কাছে আছে তাঁদের তা ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ফেরত দিতে হবে। কারণ কী? খুদা জানে! ইতিমধ্যে জাল ২০০০ টাকার অসংখ্য নোট সারা দেশে উদ্ধার হওয়ার খবর বেরিয়েছে। এমন অভিযোগও উঠেছে, যে-বিদেশি সংস্থার কাছ থেকে ভারত নোট ছাপার কাগজ আমদানি করত, তা পাকিস্তানকেও নাকি ওই একই কোম্পানি রপ্তানি করত। এ যে মারাত্মক অভিযোগ!
আরও পড়ুন-অভিষেককে বলেই রেশন পেলেন সমীর
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক জানিয়েছে, দু’হাজারি নোট ফেরত দেওয়ার সর্বশেষ সময়সীমা ৩০ সেপ্টেম্বর। অথচ, পাশাপাশি এ-কথাও জানিয়েছে, তার পরেও এই নোট আইনি কারেন্সি হিসেবে গণ্য হবে। তাহলে কী দাঁড়াচ্ছে? এখন বাজারে যে ২০০০ টাকার নোট রয়েছে তা ফেরত নিয়ে সরকার ১ অক্টোবর থেকে নতুন রঙের/আকারের দু’হাজারি নোট আনবে? নাকি যারা ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জমা দিতে পারল না তাদের জন্য সময়সীমা আবার বাড়াবে? এমন নানা হেঁয়ালি আর ধাঁধার জাল বুনে চলেছে কেন্দ্রের মোদি সরকার। সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস আদতে ‘সবকা সর্বনাশ— সবকা শেষনিঃশ্বাস’।